Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ রবিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সেই সৌদি তরুণী রাহাফকে ‘সাহসী নতুন কানাডিয়ান’ আখ্যা দিল কানাডা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারী ২০১৯, ০৫:৩৯ PM
আপডেট: ১৪ জানুয়ারী ২০১৯, ০৫:৩৯ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


তুচ্ছ কারনে বাপ-ভাইয়ের হাতে খুন হওয়ার ভয়ে পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে প্রাণে বাঁচতে ঘরপালানো ১৮ বছরের সৌদি তরুণী রাহাফ মোহাম্মেদ আল-কুনুন থাইল্যান্ড থেকে কানাডা পৌঁছেছেন। কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তাকে আশ্রয় দেওয়ার ঘোষণার পর শুক্রবার রাতেই বিমানযোগে ব্যাংকক থেকে কানাডার উদ্দেশে যাত্রা করেন তিনি।

শনিবার টরন্টোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়া ফ্রিল্যান্ড। এ সময় তিনি রাহাফকে একজন ‘সাহসী নতুন কানাডিয়ান’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

উল্লেখ্য, ১৮ বছর বয়সী ওই তরুণী পরিবারের সঙ্গে ছুটিতে কুয়েতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তিনি পালিয়ে ব্যাংকক হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কর্তৃপক্ষ তাকে আটক করে এবং হোটেলের একটি রুমের ভেতর আটকে রাখে। এর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা পোস্টের মাধ্যমে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকেন রাহাফ।

রুমের ভেতরে থাকাকালীন এক টুইটে রাহাফ জানিয়েছেন, তার কাছে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা আছে। কিন্তু বিমানবন্দরে সৌদি আরবের এক কূটনীতিক তার সঙ্গে দেখা করে তার পাসপোর্ট জব্দ করেছেন।

পরে গণমাধ্যমকে রাহাফ জানান, ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেছেন তিনি। সৌদি আরবে জোর করে ফেরত পাঠালে তার পরিবার তাকে হত্যা করতে পারে।

টুইটারে নিজের ছবি ও পাসপোর্টের ফটোকপি প্রকাশ করে লিখেন, যেহেতু এখন আমার হারানোর কিছু নেই, তাই আমি আমার আসল নাম এবং সব তথ্য প্রকাশ করছি। আমার নাম রাহাফ মোহাম্মদ মুতলাক আল-কুনুন এবং এটা আমার ছবি।

থাইল্যান্ডের অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কাছে আটক থাকার সময় রাহাফ টুইটারে জানিয়েছিলেন, তার কাছে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা আছে। কিন্তু বিমানবন্দরে সৌদি আরবের এক কূটনীতিক দেখা করে তার পাসপোর্ট জব্দ করেছেন।

এদিকে, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন অঙ্গনের ব্যক্তিত্বরা রাহাফকে আশ্রয় দেয়ার বন্দোবস্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। একের এক টুইট করে সামাজিক মাধ্যমে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন এই তরুণী।

তারই সমর্থনে টুইট করেছেন থাইল্যান্ডে জার্মানির রাষ্ট্রদূত জর্জ স্মিডট। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর সারা হ্যানসন-ইয়াঙ অস্ট্রেলিয়া সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, যাতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে তড়িঘড়ি রাহাফকে অস্ট্রেলিয়ায় আনা যায়।

নানা নাটকীয়তার একপর্যায়ে তাকে নিজ দেশে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এর প্রেক্ষিতেই শুক্রবার রাতে কানাডাগামী বিমানে উড়াল দেন তিনি।

স্থানীয় সময় শনিবার সকালে টরেন্টোর পিয়ারসন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরণ করেন কুনুন। এ সময় তার পরনে থাকা হুডিতে লাল হরফে কানাডা লেখা ছিল। মাথায় থাকা নীল রঙের ক্যাপে ছিল জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)-এর লোগো। ইতোমধ্যেই তাকে শরণার্থীর স্বীকৃতি দিয়েছে সংস্থাটি।

বিমানবন্দরে কুনুনকে স্বাগত জানানোর পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়া ফ্রিল্যান্ড সাংবাদিকদের বলেন, “কুনুন ‘একজন খুবই সাহসী নতুন কানাডিয়ান’। ”

ফ্রিল্যান্ড আরও বলেন, রাহাফ নতুন বাড়িতে পৌঁছে কানাডিয়ানদের দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর ভ্রমণ করতে হয়েছে। ফলে আজ তাকে কোনও প্রশ্ন না করাই শ্রেয়। সে এখন তার নতুন বাড়ি যাচ্ছে।

হেঁটে ইন্টারন্যাশনাল অ্যারাইভালস এরিয়া পার হওয়ার সময় কুনুনকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়। তবে তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি। পরে তাকে বিমানবন্দরের টার্মিনাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।

এর আগে টরন্টোর উদ্দেশে যাত্রা শুরুর আগে শেষ টুইটে কুনুন লিখেন, আমি পেরেছি। একই সঙ্গে তিনি একটি বিমানের ভেতরের ছবি পোস্ট করেন।

কানাডায় কুনুনকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত এমন একটি সময়ে আসে যখন সৌদি আরবের সঙ্গে দেশটির কূটনৈতিক টানাপড়েন চলছে। গত বছর কানাডার পক্ষ থেকে সৌদি আরবে কারান্তরীণ অ্যাক্টিভিস্টদের মুক্তি দাবি করলে ক্ষুব্ধ হয় রিয়াদ। প্রতিশোধ হিসেবে কানাডার সঙ্গে নতুন করে যেকোনও ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করে দেয় সৌদি আরব।

প্রাথমিকভাবে আশ্রয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়া যেতে চেয়েছিলেন কুনুন। তবে দেশটিতে আশ্রয়ের আবেদন মঞ্জুরের প্রক্রিয়া বেশ সময়সাপেক্ষ। ফলে কানাডা আশ্রয়ের ঘোষণা দিলে অস্ট্রেলিয়ার পরিবর্তে কানাডাকেই বেছে নেন তিনি। টরন্টোর উদ্দেশে যাত্রার আগে রয়টার্সকে কুনুন বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয়ের আবেদন মঞ্জুরের প্রক্রিয়া বেশ সময়সাপেক্ষ। ফলে আমি কানাডাকেই বেছে নিয়েছি।

শুক্রবার প্রথমে কোরিয়া এয়ারের একটি ফ্লাইটে ব্যাংকক থেকে সিউল যান কুনুন। পরে সেখান থেকে আরেকটি ফ্লাইটে তিনি টরেন্টো পৌঁছান।

কুনুনের ঘটনায় সৌদি আরবের কঠোর সামাজিক বিধিনিষেধের ব্যাপার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। দেশটিতে ভ্রমণের জন্য নারীদের পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হয়। বরাবরই এর সমালোচনা করে আসছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। সূত্র: রয়টার্স।

Bootstrap Image Preview