ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের আলোচনায় পর এবার অচল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের মাধ্যমে সচলের আশা সঞ্চার হয়েছে। দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে অচল থাকা রাকসু, নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় সচলের দাবি জানিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো।
ডাকসু নির্বাচন আলোচনায় আসলে রাবি ছাত্রসংগঠনগুলোর দাবি পূরণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও রাকসু নির্বাচন প্রশ্নে পজিটিভ থাকবে বলে বিশ্বাস করছেন তারা।
দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় ২৯ বছর ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) বন্ধ থাকলেও ছাত্রদের কাছে চাঁদা নেওয়া বন্ধ থাকে নি। এর আগে রাকসু নির্বাচন নিয়ে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো আন্দোলন করে আসলেও নির্বাচনের বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর নতুন করে এ বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এদিকে এ বিষয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী রাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসবে, এটাই স্বাভাবিক। আর তারাই আগামীতে দেশের নেতৃত্ব দিবে। ছাত্ররা যদি চায় তাহলে প্রশাসনের কোন আপত্তি নেই, প্রশাসন এ বিষয়ে পজিটিভ।
উপাচার্য আরও বলেন, এ বিষয়ে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলোচনা করা হবে। যদি তারা চায়, আর সেই পরিবেশ তৈরি হয় তাহলে নির্বাচন দিতে প্রশাসনের কোনও আপত্তি নেই। সত্যিকার অর্থে রাকসু নির্বাচন দিতে প্রশাসনের কোনো আপত্তি নেই। তবে সংঘাত, সংঘর্ষ, রক্তপাতহীনভাবে আমরা ছাত্রদের প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় যেতে চাই। ছাত্র সংগঠনগুলো মন থেকে নির্বাচন চাইলে, রাকসু নির্বাচন বিষয়ে ছাত্র নেতাদের সঙ্গে দ্রুত বৈঠকে বসতেও আগ্রহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা যায়, ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৬-৫৭ মেয়াদে। ওই সময় এর নাম ছিল রাজশাহী ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (রাসু)। মাঝখানে আইয়ুব খানের শাসনামলে এর কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর ১৯৬২ সালে এটি যাত্রা শুরু করে রাকসু নামে। এখন পর্যন্ত ১৪ বার রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৯-৯০ মেয়াদের জন্য। এর মধ্যে ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সাল কোনও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। পরে সামরিক শাসনামলে ১৯৭৫ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এবং ১৯৮১ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল এই ছাত্র সংসদের নির্বাচন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশে বলা আছে, বাস্তবজীবনে কর্মদক্ষতা, যোগ্য নাগরিক ও নেতৃত্ব গড়ে তুলতে, দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও অনুমোদিত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া, বক্তৃতা, লিখন, বিতর্ক ইত্যাদিতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে সর্বাধিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করার জন্য শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করতে কাজ করবে রাকসু। এছাড়া মানবিক-সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড আয়োজনও ছিল রাকসুর কর্মসূচিতে।
এদিকে, স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ঠিক রেখে মেধাবী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে দ্রুত রাকসু নির্বাচন দেওয়ার দাবি করছেন ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা। বিশেষ করে ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর নেতারা আবার নড়েচড়ে বসেছেন। তারা নতুন করে আন্দোলনের বিষয়েও ভাবছেন।
রাবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এ এম শাকিল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন আন্দোলন শুরু হয়, তখন থেকেই আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও একই দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু এখনো এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তৎপরতা লক্ষ্য করিনি। আমরা রাকসু নির্বাচন মঞ্চ তৈরি করেছিলাম। আবার নতুন করে ওই আন্দোলন সচল করবো।
রাবি বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ফিদেল মনির বলেন, যতবারই প্রশাসনকে বলেছি, ততবারই তারা আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু কোনও অগ্রগতি হয়নি। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ও দেশের নেতৃত্ব গঠনে রাকসু'র বিকল্প নেই। তাই আমরা রাকসু চাই।
বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি দীর্ঘদিনের। রাকসু ছাত্রদের দাবি পূরণে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে দ্রুত এ নির্বাচনের দাবি জানাই। কারণ, ছাত্র নেতারাই আগামীদিনে জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
নির্বাচন চায় সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগও। রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, রাকসু নির্বাচন আমরা চাই। আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পর এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে স্মারকলিপিও দিয়েছি। আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবার উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলবো।