Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ রবিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সীমান্তে কংক্রিটের স্থাপনা তৈরি করছে মিয়ানমার

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ জানুয়ারী ২০১৯, ১০:৪৯ PM
আপডেট: ১৩ জানুয়ারী ২০১৯, ১০:৪৯ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ ও রোহিঙ্গাদের উদ্বেগকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এবং আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে ঘুমধুম সীমান্তের কাছে শূন্য রেখায় কংক্রিটের স্থাপনা তৈরি করছে মিয়ানমার। রোববার তুরস্কের বার্তাসংস্থা আনাদোলু নিউজ অ্যাজেন্সির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

নির্মিত এই স্থাপনা ওই এলাকার তামব্রু খালের পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করবে। এর ফলে ওই এলাকায় ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে বসবাসকারী প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা বন্যার কবলে পড়তে পারেন।

আনাদোলুকে রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, এখানে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের উৎখাত করতে নতুন কৌশল অবলম্বন করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। “আমরা এখানে এই আশায় বসবাস করছি যে, পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসবে এবং আমরা আমাদের নাগরিকত্বের অধিকার ফিরে পাবো। আমাদের প্রকৃত জন্মস্থানে ফিরতে পারবো।”

রোহিঙ্গা এই নেতা বলেন, শূন্য রেখায় থাকা রোহিঙ্গাদের মাঝে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী; যাতে তারা এই স্থান ছেড়ে চলে যায়।

গত মঙ্গলবার কক্সবাজারের ডেপুটি কমিশনার কামাল আহমেদ মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই চিঠিতে শূন্য রেখা ঘেঁষে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণ ও এর সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।

কামাল আহমেদ বলেছেন, মিয়ানমার সরকার শূন্য রেখায় কোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি করতে পারে না। স্থাপনা তৈরি হলে শূন্য রেখায় থাকা রোহিঙ্গারা ভোগান্তির মুখোমুখি হবেন। এমনকি পুরো এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাবে।

আনাদোলুকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৩৪ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, সম্প্রতি তিনি ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাকে জানিয়েছে যে, সেখানে কংক্রিটের স্থাপনা নয়, কাঁটা তারের বেড়া তৈরি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এ ধরনের কাঁটা তারের বেড়া বাংলাদেশ-মিয়ানমারের অন্যান্য সীমান্তেও বসানো আছে। তবে তিনি কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণের ব্যাপারে অবগত নন বলে জানিয়েছেন।

মিয়ানমারের রাখাইনের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়ত হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতিসংঘ। ২০১২ সালে রাখাইনে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় কয়েক ডজন রোহিঙ্গার প্রাণহানি ঘটে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কঠোর অভিযানের মুখে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রতিবেশি বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে; যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। রাখাইনে নিরাপত্তাবাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর ওই অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বলছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং বেসামরিক বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের হত্যা, বাড়িঘরে আগুন ও গণধর্ষণ করছে। জাতিসংঘের একটি তদন্ত দল মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের উদ্দেশে এই অভিযান পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ করেছে।

তবে মিয়ানমার সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে দেশটির নিরাপত্তাবাহিনী। কানাডার অন্টারিও ইন্টারন্যাশনাল ডেভলেপমেন্ট অ্যাজেন্সি (ওআইডিএ) বলছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৪ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করেছে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাবাহিনী।

'রোহিঙ্গাদের বাধ্যতামূলক অভিবাসন : অব্যক্ত অভিজ্ঞতা' শিরোনামে ওআইডিএর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় ৩৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এছাড়া মারধর করা হয় আরো ১ লাখ ১৪ হাজার রোহিঙ্গাকে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং পুলিশের ধর্ষণের শিকার হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার নারী ও কিশোরী। এক লাখ ১৫ হাজার রোহিঙ্গার বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ এবং আরো ১ লাখ ১৩ হাজার ঘর-বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

Bootstrap Image Preview