Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ রবিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর রসের ঐতিহ্য

আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি 
প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৩:৫২ PM
আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৩:৫২ PM

bdmorning Image Preview


হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস। মাটিরাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কয়েক বছর পূর্বেও শীতে স্থানীয় গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে খুবই ব্যস্ত সময় কাটাতেন। কালের বিবর্তনে আজ এসব ছবি বিলুপ্ত প্রায়।

প্রচন্ড শীত যখন আনাগোনা করে পল্লীর পরতে পরতে ঠিক তখনী গাছিরা ছুটে যান অবহেলিত ভাবে পড়া থাকা দু'একটা খেজুর গাছের সন্ধানে। যথাযথ নিয়মানুসারে গাছ কেটে রস সংগ্রহ করেন তারা।

গাছিরা সাত সকালে খেজুরের রস নিয়ে বাড়ি বাড়ি হাকডাক দিতেন। শীতের মৌসুম শুরু হতেই বাড়ি বাড়ি চলতো খেজুরের রস কিংবা রসের পাটালি গুড় দিয়ে মজাদার পিঠাপুলির নানা আয়োজন।

তবে গ্রামবাংলার এ দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে বিনা অজুহাতে খেজুর গাছ নিধন। ফলে দিনে দিনে মাটিরাঙ্গার আনাচে কানাচে কমছে খেজুরের গাছ। দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে খেজুরের রস।

মাটিরাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর আব্দুল হামিদ বলেন, মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে খেজুর গাছ কমতে থাকলেও হারিয়ে যায়নি খেজুর রসের কদর। সুস্বাদ ও পিঠাপুলির জন্য অতি আবশ্যক উপকরণ হওয়ায় এখনও খেজুর রসের চাহিদা রয়েছে। তবে আগের মত খেজুরের রস ও গুড় পাওয়া যায় না। পেলেও আগের চেয়ে কয়েকগুন বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়। তবে,কাঁচা রসের পায়েস খাওয়ার কথা এখনো ভুলতে পারি না।

তাছাড়া গ্রামের মাঠে আর মেঠোপথের ধারে কিছু গাছ দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এই খেজুরগাছ আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে। যে হারে খেজুরগাছ নিধন হচ্ছে সে তুলনায় রোপণ করা হচ্ছে না।

গাছি মোঃ আব্দুল হাকিম জানান, পূর্বের তুলনায় খেজুর গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এক সময় মাষ্টারপাড়া খেজুর রসের জন্য
প্রসিদ্ধ ছিল। এখন গাছ যেমন কমে গেছে, তেমনী গাছের পরিচর্যা ও সেরকম নাই। ফলে প্রকৃতিগত সুস্বাদু সে রস এখন আর তেমন পাওয়া যায় না। তবুও কয়েকটা গাছের পরিচর্যা করে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। আগে এই কাজ করে ভালোভাবেই সংসার চালানো যেতো। এমনকি আগে যে আয় রোজগার হতো তাতে সঞ্চয়ও থাকতো, যা দিয়ে বছরের আরো কয়েক মাস সংসারের খরচ চলত। কিন্তু বর্তমানে খেজুরের গাছ কমে যাওয়ায় সংসারের ব্যয় নির্বাহ করা কষ্ট হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই পেশা ছেড়ে দিবে বলে ভাবছেন আব্দুল হাকিম।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ইটের ভাটায় ব্যাপকভাবে খেজুর গাছ ব্যবহার করায় এ গাছ কমে গেছে। খেজুর গাছ সস্তা হওয়ায় ইটের ভাটায় এই গাছই বেশি পোড়ানো হয়। এছাড়া অনেক সময় ঘরবাড়ি নির্মাণ করার জন্য খেজুরের গাছ কেটে ফেলা হয়। যে হারে গাছ কাটা হয় সে হারে গাছ লাগানো হচ্ছে না, তাই দিন দিন খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে। ফলে এ জনপদের মানুষ এখন খেজুর রসের মজার মজার খাবার অনেকটাই হারাতে বসছে।

তাছাড়া খেজুর গাছ রক্ষায় বন বিভাগের কার্যকরী কোন পদক্ষেপ না থাকায় ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে খেজুর গাছ আর শীতের মৌসুমে খেজুর গাছের রস শুধু আরব্য উপনাস্যের গল্পে পরিনত হতে চলেছে। ঐতিহ্যবাহী এ খেজুর রসের উৎপাদন বাড়াতে হলে টিকিয়ে রাখতে হবে খেজুর গাছের অস্তিত্ব। আর সে জন্য যথাযথ ভাবে পরিবেশ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে ইটভাটাসহ যেকোন বৃক্ষ নিধনকারীদের হাত থেকে খেজুর গাছ রক্ষা করতে হবে।

Bootstrap Image Preview