Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ রবিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকের উপর ছাত্রলীগের হামলা!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:২৯ PM
আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:২৯ PM

bdmorning Image Preview


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘দহন’ সিনেমার প্রদর্শনীর প্রতিবাদ করায় এক সাংবাদিক ও প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ছয় নেতাকর্মীকে মারধর করেছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও স্থানীয় বহিরাগতরা।

শনিবার (১ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমানের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন- রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আলী ইউনুস হৃদয়, রাবি প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক মহব্বত হোসেন মিলন, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শাকিল হোসেন, প্রচার সম্পাদক মিঠুন চন্দ্র মোহন্ত, ছাত্র ফেডারেশনের প্রচার সম্পাদক ইসরাফিল, কর্মী রাশেদ রিমন, কর্মী আশরাফুল আলম। এদের মধ্যে মিঠুন হাতে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, সাংবাদিক হৃদয়কে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

হামলাকারীরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবরুন জামিল সুস্ময়, ইমরান খান নাহিদ, মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক ফেরদৌস মাহমুদ শ্রাবণ, কর্মী শেখ সিয়াম, বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম রেজাসহ বহিরাগত বেশ কয়েকজন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল ৩টায় জাজ মাল্টিমিডিয়ার আয়োজনে দহন সিনেমাটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এর প্রতিবাদে দুপুর ১২টা থেকেই রাবি প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীরা মিলনায়তনের সামনে অবস্থান নেয়। প্রদর্শনী শুরুর মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেন।

এরপরও তারা আন্দোলন অব্যাহত রাখলে প্রক্টর মিলনায়তনের সামনে অবস্থানকারী সিনেমা দেখতে আসা বহিরাগতদের ভেতরে ঢুকতে দেন। এ সময় প্রক্টর বহিরাগতরা আন্দোলনকারীদের সরিয়ে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে প্রক্টর আন্দোলনকারীদের ‌দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

প্রক্টরের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর নেতৃত্বে ২০-৩০ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর তারা আন্দোলনকারী কয়েকজনের ওপর চড়াও হয় সুস্ময়, নাহিদ, ফেরদৌস, শ্রাবণসহ বহিরাগত কয়েকজন। তারা বিক্ষোভকারীদের এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন।

একপর্যায়ে মিঠুনকে রাস্তার ওপর ফেলে সুস্ময় এলোপাতাড়ি লাথি দিতে থাকেন এবং পা দিয়ে মাথা রাস্তার ওপর চেপে ধরে রাখে। সাংবাদিক ইউনুস তাদের আটকাতে গেলে সুস্ময় তার কোমরে লাথি দেন। ঘটনাস্থলে প্রক্টর, পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা এগিয়ে আসেননি বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী শাকিলা খাতুন বলেন, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রুনুর নির্দেশেই আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। প্রক্টর সেখানে উপস্থিত থাকলেও তিনি এগিয়ে আসেননি। তিনি আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন।

সাংবাদিক হৃদয় বলেন, ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর করতে দেখে আমি তাদের আটকাতে যাই। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে দূরে থাকলেও সুস্ময় আমাকে লাথি মারে।

মারধরকারী সুষ্ময় বলেন, আমি ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কাউকে মারধর করিনি। তবে গণমাধ্যমকর্মীদের ধারণকৃত ভিডিওতে তাকে মারতে দেখা গেছে জানালে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।

রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, প্রক্টরের আহ্বানে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। ওই সময় আন্দোলনকারীরা প্রক্টরের গায়ে হাত তুলেছিলো। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের আটকাতে গিয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।

তবে প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমানের দাবি, তার গায়ে কেউ হাত তোলেনি। তিনি বলেন, ‘আমি আন্দোলনকারীদের বোঝাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমার কথা শোনেনি।'

উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর রাজশাহীর উপহার সিনেমা হলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জাজ মাল্টিমিডিয়া দহন সিনেমাটি প্রদর্শনীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনটি ভাড়া নেয়। আগামী ১-৬ ডিসেম্বর সিনেমাটি প্রদর্শিত হবে বলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি তাদের ফেসবুক পেইজে প্রচারণা শুরু করে। বিষয়টি জানার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন।

Bootstrap Image Preview