Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতিতে জড়িত মাভাবিপ্রবির ৫ শিক্ষার্থী

শাহরিয়ার রহমান সৈকত, মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ২৫ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:৪৯ AM
আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৮, ১০:০২ AM

bdmorning Image Preview


বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য ও প্রমাণ মিলেছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থীর একটি চক্রের বিরুদ্ধে। এই চক্রের কয়েকজন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এই চক্রটি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যালে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভর্তি করিয়ে দেয়। ভর্তি করিয়ে দেবার ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। কখনও প্রশ্ন বের করে, কখনও ডিভাইজের মাধ্যমে আবার কখনও প্রক্সি দিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় অনুযায়ী পন্থা ভিন্ন হয়।

ভর্তি করিয়ে দেওয়ার জন্য জালিয়াত চক্রকে ৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা দিতে হয়। এক ভুক্তভোগীর ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এদিকে টাকা নেওয়ার কথাও স্বীকার করেছে অভিযুক্ত ওই চক্রটি। এসব কথোপকথনের রেকর্ড রয়েছে। এছাড়া মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সুত্রের তথ্য ও অনুসন্ধানে ওই চক্রটি মাভাবিপ্রবিতে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হয়েছে তার নানা তথ্য উঠে এসেছে। 

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান কলেজের এক ভুক্তভোগী ছাত্র জানায়, আমাকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি করিয়ে দেবার কথা বললে আমার বাবার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা দাবি করা হয়। আমার বাবা তখন ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য রাজি হয়। এরপর আমাকে ঢাকার ধানমন্ডির ভূতের গলি এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনতলা বাসায় আমাকে বের হওয়া প্রশ্নের তিনটি সিট পড়ানো হয়। পরে আমি পরীক্ষায় অংশহগ্রহণ করলে আমি সায়েন্স 'এ' ইউনিটে ১২৩২ স্থান করি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে 'এ' ইউনিটে যদিও ৮০০ আসন সেখানে আমি ১২৩২ তম স্থান করায় তারা আমাকে জানায় এটা কোন বিষয় না। যারা আমাদের সাথে লাইন করে ভর্তি হয় তাদের ২০০০ এর উপর থেকেও ভর্তি করিয়ে থাকে। এখন আমাকেও নিবে বলে আমার বাবার কাছ থেকে ২ লক্ষ ৭০ হাজারের যায়গায় ১০ হাজার টাকা কম দিয়ে পুরো টাকাটাই তাদের দেওয়া হয়। আমরা টাকা ফেরত চাইতে গেলে তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বলে এই টাকা পাওয়া যাবে না। 

সিন্ডিকেটের মেডিক্যাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী সংগ্রহ করে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী টি.এইচ.রিয়াদ এবং কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী পিয়াস চন্দ্র ঘোষ। শিক্ষার্থী সংগ্রহ করে দিয়ে তারা নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পায়।

টি.এইচ.রিয়াদ টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার শংকরপুর বীরসিংহ গ্রামের মোঃ হাবিবুর রহমানের ছেলে এবং পিয়াস চন্দ্র ঘোষ ময়মনসিংহ জেলার গফরগাও এর সুনীল চন্দ্র ঘোষের ছেলে।

সিন্ডিকেট পরিচালনা করে, ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী মোঃ মোহাইমিনুল ইসলাম সজীব, ফার্মেসী বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মোঃ মাহফুজুল হাসান, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দূর্যোগ বিষয়ক উপ-সম্পাদক মোঃ রোমান আরেফীনসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপন। 

সিন্ডিকেট পরিচালনাকারী মোঃ মোহাইমিনুল ইসলাম সজীব জামালপুরের ছোটনিয়া বাজারের মোঃ মোজাম্মেল হকের ছেলে, মোঃ মাহফুজুল ইসলাম ময়মনসিংহ জেলার খালিজরীর গিয়াস উদ্দিনের ছেলে এবং মোঃ রোমান আরেফীন কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার তালতলা বাজারের আ. হালিমের ছেলে। 

তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে পাওয়া যায়, টি.এইচ রিয়াদ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি করিয়ে উদ্দেশ্যে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী জোগাড় করে যাচ্ছে। সজীবের মাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করাবে আর মাহফুজের মাধ্যমে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করবে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ায় এখন তাদের লক্ষ্য মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের পন্থায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে আবেদন করাতে হবে তাদের মাধ্যমে। 

অভিযুক্ত ৫ শিক্ষার্থীর সম্পর্কে তাদের স্ব-স্ব বিভাগে খোজ নিয়ে জানা যায়, মোঃ মাহফুজুল ইসলাম ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় লাইফ সায়েন্স অনুষদে মেধাস্থান ২য়। অথচ ৩ বছর ৬ মাসের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাজীবনে বারবার ফেল করে কোন রকমে পার করে নিচ্ছে তার পড়াশুনা।

মোঃ মোহাইমিনুল ইসলাম সজীব ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে মেধাস্থান ১ম। অথচ ফেল করে পরপর দুইবার ড্রপআউট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রত্ব হারিয়েছে।

মোঃ রোমান আরেফীন ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে মেধাস্থান ১২ তম। অথচ কোন রকমে চালিয়ে নিচ্ছে পড়াশুনা।

টি.এইচ.রিয়াদ ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে মেধাস্থান ১১৫তম এখন পর্যন্ত একবার ড্রপআউট হয়েছে।

পিয়াস চন্দ্র ঘোষ অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেয়েও ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে মেধাস্থান ৫ম। পেয়েছে পছন্দের বিষয় কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, আপনাদের মাধ্যমেই আমি বিষয়টি অবগত হলাম। এ বিষয়ে তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

Bootstrap Image Preview