সিরাজগঞ্জের মিল্কসেড এরিয়া হিসেবে খ্যাত শাহজাদপুর। তাই এই গো-সম্পদের খাদ্যের যোগান দিতে এবং দুগ্ধের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য শাহজাদপুরসহ বোনয়ারি নগর ফরিদপুর, সাঁথিয়া, উল্লাপাড়ার চলনবিলের একটি বৃহৎ অংশে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয় মাশকালাই। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়া এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে এবারে শীত মৌসুমে কৃষকের বপন করা মাশকালাইয়ে আক্রমণ করেছে ক্ষতিকর কাটইপোকা।
কীটনাশক দিয়েও কোনো প্রকার ফল পাচ্ছে না সাধারণ কৃষক। এর ফলে দিনেদিনে কৃষকের দুঃশ্চিন্তা বেড়ে যাচ্ছে। সস্তা ও পুষ্টি সমৃদ্ধ গো-খাদ্যে মাশকালাইয়ের উপর নির্ভর করে শীত মৌসুমে গরুর স্বাস্থ্য ও খাদ্যের যোগানের জন্য এক বড় ভূমিকা রাখে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শাহজাদপুর পৌর এলাকার দ্বাবারিয়া, বাড়াবিল, নলুয়া, রূপপুর নতুনপাড়া, প্রাণনাথপুর, এবং পোতাজিয়া ইউনিয়নের আঙ্গারু, বি-আঙ্গারু, রেশমবাড়ি, চুলধরি, ভাইমারা, খুকনী ইউনিয়ন, সোনাতনী ইউনিয়ন, গালা ইউনিয়ন, নরিনা ইউনিয়ন, কায়েমপুর ইউনিয়ন, পোরজনা ইউনিয়ন, জালালপুর ইউনিয়ন ও রূপবাটি ইউনিয়নসহ উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নে প্রায় ৫ হাজারের অধিক হেক্টর জমিতে মাশকালাই বপন করা হয়। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে পুষ্টিকর গো-খাদ্য মাশকালাই বপন করা হয় জমিতে।
এদিকে, গত অক্টোবর মাসে অসময় বৃষ্টি হওয়ার কারণে হাজার হাজার হেক্টর জমির বীজ নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে কৃষকেরা মহা সংকটে পড়ে। এরপর পুনরায় আবার মাশকালাই চাষের জন্য বীজ বপন করলে পোকার আক্রমণে হাজার হাজার বিঘার মাশকালাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে কৃষক ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন।
এ বিষয়ে পৌর এলাকার দ্বাবারিয়া গ্রামের কৃষক মজনু মিয়া ও মানিক ফকির, ফরিদ পাঙ্গাসীর জোহা, বাঘাবাড়ি এলাকার আব্দুল সিদ্দিক, রেশমবাড়ির নয়ন মাস্টার, বাড়াবিলের নুরু মণ্ডল জানান, গরুর অন্যতম পুষ্টিকর খাদ্য হচ্ছে মাশকালাই। বিঘাতে প্রায় ১৪/১৫ হাজার টাকা খরচ হয় মাশকালাই চাষে। এতে বারবার কীটনাশক ব্যবহার করা হলে দুগ্ধ কমে যাওয়া এবং গরুর মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এ বিষয়ে তারা কোনো ব্যবস্থা না পেয়ে ক্ষোভে-বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে। শাহজাদপুর উপজেলায় প্রায় কয়েক লক্ষ গরু রয়েছে। মিল্কভিটা, প্রাণ, আড়ংসহ দেশের শিশু খাদ্য সরবরাহকারী প্রায় প্রতিটি কোম্পানিরই দুগ্ধ সংগ্রহ কেন্দ্র রয়েছে শাহজাদপুরসহ এই এলাকায়। দেশের একটি বৃহৎ তরল দুধের চাহিদা মেটে শাহজাদপুর মিল্কসেড এরিয়া থেকে। গরু এ অঞ্চলের কৃষকের আয়ের অন্যতম একটি উৎস বলে তারা জানান।
এই ব্যাপারে শাহজাদপুর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল আল মামুন জানান, শাহজাদপুর উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে মাশকালাই বপন করা হয়। এর মধ্যে বীজ হিসেবে ৩শ’ হেক্টর। ইতিমধ্যেই কাটইপোকা আক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন ইউনিয়নে নাইট্রো ও ফেরোমন সার দেওয়া হয়েছে। আমরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কৃষকদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।