Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘অসভ্যতা ও বর্বরতা অবসানের জন্য মহানবী (সা.) আবির্ভূত হয়েছিলেন’

বিডিমর্নিং ডেস্ক-
প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০১৮, ০২:০০ PM
আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৮, ০২:০০ PM

bdmorning Image Preview


পবিত্র ঈদই মিলাদুন্নবী (সা.) ও ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ (১২-১৭ রবিউল আউয়াল) উপলক্ষে রাজধানীর ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১ মিলনায়তনে গতকাল বুধবার বিকেলে ‘রহমত, শান্তি ও বন্ধুত্বের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সাউথ-ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. আ ন ম মেশকাত উদ্দিন প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এসেছিলেন অসভ্যতা ও বর্বরতা অবসানের জন্য। মানুষকে পশু স্বভাব থেকে মানুষে পরিণত করার জন্য এবং মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্যে। ঐক্যই ছিল নবীর (সা.)-এর আদর্শ। কিন্তু আমরা একতার পথ ভুলে গেছি। তুচ্ছ ভেদাভেদকে বড় করে দেখছি। নিজরা বিভক্ত হয়ে রয়েছি নানা মতে পথে। কিন্তু আমি দেখেছি পাশ্চাত্যের খ্রিস্টানদের মধ্যে নানা বিভক্তি সত্ত্বেও তাদের মধ্যে কোনো বিবাদ, হিংসা বিদ্বেষ, হানাহানি নাই। এমনকি আমরা বিশ্বে সচারাচর এটা কখনোই দেখি না যে, এক খ্রিস্ট শক্তি অপর খ্রিস্ট শক্তিকে হত্যা বা নির্মূল করছে! কোনো খ্রিস্ট শক্তি কোনো ইহুদি বা বৌদ্ধকে হত্যা করছে না। কোনো হিন্দু নির্মূল করছে না কোনো হিন্দু সমাজকে। অথচ হিন্দুদের মাঝেও বিভিন্ন দল মতের মানুষ আছে। তারা নানা দেবতার পুজারী হিসেবে তাদের নানা সংঘ রয়েছে।

এছাড়া তাদের মধ্যে রয়েছে নানা জাতিভেদ। আবার বৌদ্ধদের মাঝেও নানা মত আছে। কিন্তু তারা কেউ কারো প্রতি বিদ্বেষী হচ্ছে না। উগ্র হয়ে উঠছে না। কিন্তু আফসোস একদিকে মুসলমানেরা নিজেদের মধ্যে অন্তর্কলহ করছে আর অপরদিকে সকল অমুসলিমরাই জুলুম নিপীড়ন, অত্যাচার নির্মূলাভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ফিলিস্তিনে ইহুদি যায়নবাদীদের দ্বারা, বসনিয়ায় সার্বদের দ্বারা, কাশ্মিরে ভারতীয় হিন্দুদের দ্বারা, আরাকানে বর্মী বৌদ্ধদের দ্বারা তারা নির্মূল হচ্ছে। ভারতে মুসলমানদের বাবরী মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছে। আবার ইরাকে, সিরিয়ায়, পাকিস্তানে, আফগানিস্তানে উগ্র মুসলমানের দ্বারা অপর মুসলমান নিহত হচ্ছে; আমরা ঐক্যবদ্ধ নই বলে।

আমরা কুরআন ও মহানবী (সা.)-এর আদেশ নিষেধ থেকে শিক্ষা নেইনি এবং নেই না বলেই আমাদের এই অধঃপতন। আবার নিজেদের অজ্ঞতার কারণে এবং প্রকৃত ইসলামকে বিশ্বের মানুষের কাছে তুলে ধরার অভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে খারাপ ধারণাও সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বের অমুসললিম জনসাধারণের কাছে। ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে এক ধরণের ভীতি তৈরি হয়েছে। সেটা তৈরি হয়েছে অজ্ঞ মুসলমানের উগ্রতা ও গোঁড়ামির কারণে যা ইসলামের সাথে আদৌ সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ইসলামকে সঠিকভাবে তুলে ধরার অভাবে একধরণের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে বিশ্বে। মুসলমানরা বোমা মেরে মানুষ মারে, নারীদেরকে অসম্মান করে ও জ্ঞানার্জন, অর্থার্জন এবং সামাজিক কার্যক্রমে তাদের অধিকারকে খর্ব করে। এইরকম শত শত বিষয়ে নানা অপবাদ দেয়। কিন্তু আসলে কি ইসলামের বিরুদ্ধে এই সব গোঁড়ামিপূর্ণ অপবাদ দেয়ার সুযোগ আছে? এগুলো হয়েছে কুরআন না বোঝার কারণে।

কুরআন ও রাসূল (সা.)-এর ঘোষণাসমূহ হচ্ছে শান্তি, মুক্তি ও মানবতার সঠিক ব্যবস্থাপত্র। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এই জীবন ব্যবস্থার মূল গ্রন্থ হচ্ছে কুরআন। এই কুরআনই রাসূল (সা.)-এর সারা জীবনচিত্র। আরবীভাষী মুসলমানরা সরাসরি কুরআন বোঝে কিন্তু অনারব মুসলমানেররা বুঝে কুরআন পড়ে না। আরবী ভাষা তাদের জানা নাই। কিন্তু তাকে অবশ্যই কুরআন বুঝে পড়তে হবে। আরবী ভাষা শিখতে হবে অথবা অনুবাদ পড়ে কুরআন বুঝতে হবে। এমন কোন সমস্যা নাই যার সমাধান কুরআনে নাই। কিন্তু আমাদের দেশের অগণিত মানুষ কুরআন পড়ে কিন্তু এর অর্থ বোঝে না। কুরআন পাঠ করে একে চুম্বন করে বাক্সে উঠিয়ে রাখে। কোনো ডাক্তারের দেয়া ব্যাবস্থাপত্র অনুযায়ী ঔষধ সেবন না করে যদি সেটা পাঠ করে চুম্বন করে বাক্সে উঠিয়ে রাখা হয় তাহলে কি রোগ সারবে?’

বক্তারা আরো বলেন, আমরা মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও কুরআনের গুরুত্ব আমাদের কাছে নাই। কারণ আমরা জেনে বুঝে, গবেষণা করে, পড়াশোনা করে মুসলমান হই নাই। আমাদের বাপ দাদা পূর্বপুরুষেরা মুসলমান ছিলেন তাই আমরা মুসলমান। কিন্তু পাশ্চাত্যে ইসলামের বিরুদ্ধে এত অপপ্রচারের পরও মুসলমান হচ্ছে অহরহ। তারা ইসলামে শান্তি ও মুক্তির সঠিক সন্ধানটি পেয়েছে। গীর্জার অনেক পাদ্রি ইসলাম গ্রহণ করেছে। তারা বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে পাঠ করে দেখেছে। অবশেষে ইসলামকেই মানব জীবনের সঠিক সমাধান হিসেবে পেয়েছে।

বক্তারা আরও বলেন, আজকে জঙ্গিবাদী দায়েশ তৈরি করেছে ইহুদি-মার্কিন চক্র। এসব সন্ত্রাসী শিয়াদের পাশাপাশি তাদের মতের সাথে অমিল আছে এমন সুন্নিদেরকে হত্যা করছে। মুসলমানদেরকে ভেতর থেকে রক্তক্ষরণ ঘটাচ্ছে যাতে মুসলমানরা ভেতর থেকেই দুর্বল হয়ে যায়। তারা তাদের অন্তর্কলহ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এভাবে তারা চাচ্ছে ফিলিস্তিন, আরাকানসহ অপরাপর মুসলিম ইসুগুলো চাপা পড়ে যাক। তারা মুসলমানদের সম্পর্কে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু আমাদেরকে ভুলে গেলে চলবে না যে, মুসলমানরা পরস্পর ভাই ভাই। শিয়া সুন্নি ভাই ভাই।

ইসলামি গবেষকরা বলেন, ‘মহানবী (সা.) ছিলেন রাহমাতাল্লিল আলামিন। তিনি সমগ্র আলমের জন্যে বা সমগ্র সময়ের জন্যে, সমগ্র মানব সমাজের জন্যে রহমতস্বরূপ। কেবল রাহমাতাল্লিল মুসলেমিন নন, কেবল দুনিয়ার জীবনের জন্যেই নয়, আখেরাতের জীবনেও তিনি উম্মতের জন্যে সাফায়েতকারী হবেন। কাজেই তিনি পরকালেও আল্লাহর রহমতস্বরূপ। তার মর্যাদা সকল নবী রাসূলদের থেকে উর্ধ্বে। সেজন্যেই তাকে বলা হয়ে থাকে ‘সরদারে আম্বিয়া’ বা সকল নবীদের সরদার। তাঁকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহপাক জগতের কিছুই সৃষ্টি করতেন না।

আরো বলেন, রাসূল (সা.)-এর মর্যাদাকে কোনোভাবেই খাটো করার সুযোগ নাই। আল্লাহর কাছে তাঁর বান্দাদের জন্যে রহমতস্বরূপ রাসূল (সা.)-এর মর্যাদা এতো উপরে যে এর কোনো গাণিতিক সীমা নাই। রাসূল (সা.) সবসময় উম্মতের দুঃখে কাতর। জগতে অনেক নবীর উম্মতের অপরাধের শাস্তি আল্লাহপাক সাথে সাথেই দিয়ে ফেলেছেন। সেই নবীর উপস্থিতেই আল্লাহপাক তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। মুসা (আ.) ও লুত (আ.)-এর অবাধ্য জাতিকে তিনি ধ্বংস করেছেন। কিন্তু মহানবী (সা.)-এর উম্মতকে আল্লাহপাক ভয়াবহ গজব দিয়ে ধ্বংস করেননি। নবীজি (সা.) তার উম্মতের কষ্টে সবসময় শামিল সেই কষ্টের কথা তার উম্মত তার কাছে বলার আগেই। তিনি সবসময় তার উম্মতের মঙ্গল চান।

Bootstrap Image Preview