Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মাভাবিপ্রবিতে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী পরীক্ষার হলে!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০১৮, ০৭:২৮ PM
আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৮, ০৭:২৮ PM

bdmorning Image Preview


নিজস্ব প্রতিবেদক:

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের ৪র্থ বর্ষ ১ম সেমিস্টার ফাইনালের দুটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালায় নজীরবিহীন ইতিহাস তৈরি করেছেন সাময়িক বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত। তার এ নজীর সৃষ্টির ইতিহাসে রয়েছে গত ১৪ নভেবর ওয়েব প্রোগ্রামিং ও ১৯ নভেম্বর ডিজিটাল সিগনাল প্রসেসিং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ।

তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালা বহির্ভূতভাবে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশগ্রহন নিয়ে যেমন বিতর্কিত ও সমালোচিত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, তেমনি ইতোপূর্বে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তা ও বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্বকালীন সময়েই বহিষ্কৃত আরো ৪২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আদেশ না পাওয়ায় বর্তমান প্রশাসনের এ কেমন দ্বৈতনীতি এমন প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে পরেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী আর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তিন শিক্ষক শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় ইয়াসিন আরাফাতসহ ৫ ছাত্রলীগ নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ক্লাস-পরীক্ষা, ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বত্তেও ইয়াসিনের জন্য তিন দফায় পেছানো হয় আইসিটি বিভাগের ৪র্থ বর্ষ ১ম সেমিস্টারের পরীক্ষা। গত ৩১ অক্টোবর সাইবার ক্রাইম, ৫ নভেম্বর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, ১০ নভেম্বর ওয়েব প্রোগ্রামিং পরীক্ষা পিছানো হয়। তবে ৬ নভেম্বর আই.সি.টি বিভাগের ৪র্থ বর্ষ ১ম সেমিস্টারের সকল শিক্ষার্থীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষা নিতে বাধ্য হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ ছাড়াও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তিন শিক্ষক শিক্ষক লাঞ্ছনার ওই ঘটনায় ২১ কার্যদিবসের মধ্যে ৫ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার না করা হলে পুনরায় সকল শিক্ষক একাডেমিক ও প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগ করবে এমন আল্টিমেটাম দেয়ার সময়সীমা পার হলেও কোন সিদ্ধান্তই পাননি শিক্ষক সমিতি। এ কারণে গত ১৫ নভেম্বর ইয়াসিনকে পরীক্ষা দেয়া বা না দেয়ার বিষয়ে সৃষ্ট জটিলতায় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও আইসিটি বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন এবং আইসিটি বিভাগের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ বদরুল আলম মিয়ার বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেয় বদরুল আলম।

তবে এ নিয়ে নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে জানান, বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্বরত অবস্থাতেই ইতোপূর্বে ৪২ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। তবে তৎকালীন সময়ে ওই বিপুল সংখ্যক বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কোন সুযোগ না পেলেও শিক্ষক লাঞ্ছনার মত গুরুতর অপরাধে জড়িত শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত পরীক্ষা দেয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনার অনুমতি পেয়েছে। তাহলে কি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে চলছে দ্বৈতনীতি।

এ ছাড়াও ওই সিদ্ধান্তে শুধু শিক্ষার্থীদের অবমূল্যায়নই করা হয়নি, করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তর শিক্ষক সমাজের অবমূল্যায়ন। তবে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অবমূল্যায়নের বিষয়টি বিবেচনা না করে শুধু দলীয় পরিচয়ে ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষার্থী ইয়াসিন আরাফাত এর পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় রিজেন্ট বোর্ডের কতিপয় তিন সদস্য ও এমপি প্রশাসনকে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করেছেন বলেও অভিযোগ করে তারা।

এ বিষয়ে আইসিটি বিভাগের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ বদরুল আলম মিয়া জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রিজেন্ট বোর্ডের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আইসিটি বিভাগের ৪র্থ বর্ষ ১ম সেমিস্টার ফাইনালের সাময়িক বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। তবে সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি পেলেও তার অংশগ্রহণকৃত এ পরীক্ষার কোন মূল্যায়ন করা হবে না। যদি ওই ঘটনায় গঠিত তদন্তে সে নির্দোষ প্রমানিত হয় তাহলে পরবর্তীতে এ পরীক্ষার মূল্যায়ন হবে। এ ছাড়াও বোর্ডের দেয়া ওই অনুমতিক্রমেই সে সকল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে বলেও জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন জানান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তিন শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় ইয়াসিন আরাফাতসহ ৫ ছাত্রলীগ নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ছাড়াও ওই ঘটনার প্রতিবাদে ও বিচার দাবিতে শিক্ষকদের নেয়া পদত্যাগ প্রত্যাহার করানোসহ দৃষ্টান্তমূলক বিচারের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্তক্রমে জড়িতদের সাময়িক বহিষ্কার করা হলেও বহিষ্কৃত ওই শিক্ষার্থীদের একজন ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাতকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রেও তাদের অবগত করা হয়নি। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালায় অনুসারে বহিষ্কৃত কোন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

এ সিদ্ধান্তে শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি আরো জানান, আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কারণে তারা তাৎক্ষণিকভাবে কোন সিদ্ধান্ত বা কর্মসূচি গ্রহণ করতে না পারলেও, ভর্তি পরীক্ষা শেষেই বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সভার মাধ্যমে বহিষ্কৃত ওই শিক্ষার্থীর পরীক্ষার নেয়ার বিষয়ে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তিন শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় শিক্ষার্থী ও ৫ ছাত্রলীগ নেতাকে সাময়িক বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত। ওই মামলার প্রেক্ষিতে ওই শিক্ষার্থীকে পরীক্ষাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রমে অংশগ্রহণের আদেশ প্রদান করা হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশনানুসারে তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হলেও তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ নিয়ে গঠিত তদন্ত কার্যক্রমের ফলাফলের পরই এ পরীক্ষার মূল্যায়ন হবে কি হবেনা সে বিষয়টি চুড়ান্ত হবে বলেও জানান তিনি।

Bootstrap Image Preview