Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রাণঘাতী দাবানলে নিখোঁজের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ১২:২৫ PM
আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ১২:২৫ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


গত কয়েকদিনে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার প্রাণঘাতী দাবানল ক্যাম্প ফায়ারে নিখোঁজের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২শ’র বেশি। হঠাৎ করেই দাবানল ছড়িয়ে পড়ায় লোকজন নিজেদের বাড়ি-ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তবে বিভিন্ন এলাকায় নিখোঁজ মানুষের সংখ্যা হঠাৎ করেই বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় জনগণ এবং কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে।

এরমধ্যেই ওই অঙ্গরাজ্যে রেকর্ড সংখ্যক মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত সেখানে ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। যারা নিখোঁজ হয়েছেন তাদেরও কি মৃত ধরা হবে? উত্তরটি কিন্তু খুব সহজ নয়, সবচেয়ে খারাপভাবে পুড়ে যাওয়া এলাকা- বিউট কাউন্টির কর্তৃপক্ষ অন্তত তাই মনে করছে।

গত শুক্রবার যখন নিখোঁজের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায় তখনই ক্যালিফোর্নিয়ার শেরিফ কোরি হোনি এই ডাটাবেজকে ‘ডায়নামিক’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।

সেদিন তার বক্তব্য ছিল, যে সংখ্যা আপনাদের আমরা জানাচ্ছি তা একেবারেই প্রাথমিক তথ্য থেকে নেয়া। আমরা এই তালিকায় একই নাম কয়েকবার থাকার বিষয়টিও লক্ষ্য করেছি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ৮ নভেম্বরে অগ্নিকাণ্ড শুরুর পর থেকেই উপদ্রুত এলাকাবাসীর ফোনকল, রিপোর্ট এবং ইমেইল বিবেচনা করে সকল নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করাতেই সংখ্যার বড় ধরনের তারতম্য ঘটেছে।

আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পরেছিল যে, অনেকেই তাদের স্বজনদের খুঁজে বের করার জন্যে মাত্রা কয়েক মিনিট সময় পেয়েছিলেন এবং এরপর ভিড়ের রাস্তা দিয়ে আশ্রয়স্থলে যাবার সুযোগ পেয়েছেন।

আগুনের ভয়াবহ তীব্রতার কারণে, উদ্ধার কাজে নিয়োজিত কর্মীরা আশঙ্কা করছেন যে, প্রকৃত তথ্য পেতে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। সেসব অঞ্চলে শত শত বিশেষজ্ঞ এবং অনুসন্ধানী কুকুরের সাহায্যে পুড়ে যাওয়া ভগ্নাবশেষে মানবদেহের অবশিষ্টাংশের সন্ধান করা হচ্ছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের মতো কিছু সংবাদ মাধ্যম দ্রুততার সাথে কাউন্টির দেয়া তালিকায় অসংগতি সুনির্দিষ্ট করে দেখিয়েছে। যেমন প্রথম দিকের প্রকাশিত তালিকায় দেখা গিয়েছিল যে, ১১৯ বছর বয়সী ৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

সংবাদপত্রগুলো নিখোঁজের তালিকায় এমন কিছু মানুষকে শনাক্ত করতে পেরেছে যে, তারা এরমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছে যে, তারা বেঁচে আছে এবং ভালো আছে।

বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) তামারা কোর্নি নামের এক বাসিন্দার বিষয়টিকে খুব বড় করে তুলে ধরেছে। কোর্নি ফেসবুক পোস্টে তাদের পরিবারের নিরাপদে থাকার বিষয়টি আশ্বস্ত করেছেন এভাবে, আমি এবং আমার স্বামী নিখোঁজ নই এবং কখনো হইনি!

বৃহস্পতিবার তিনি এটি লিখেছেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে এমন একটি অনলাইন পেইজে।
তালিকাটি খসড়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি বলে সাফাই গেয়েছেন শেরিফ হোনি। শুক্রবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এত সহজেই পরিপূর্ণ তালিকা তৈরি সহজ নয়। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো তথ্যটি আগে প্রকাশ করা। আর এভাবেই কিন্তু আমরা হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পারছি।

ক্যাম্প ফায়ারে অন্তত ১২ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজারের ওপর অধিবাসী এখনো অস্থায়ী আশ্রয়স্থলগুলোতে আছেন।

এমন অবস্থায় প্রকৃত নিখোঁজ ব্যক্তিদের তাই চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পরেছে। সেই সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পরাতেও সমস্যা জটিল হয়ে উঠেছে। বিদ্যুৎ এবং মোবাইলের টাওয়ারগুলো পুড়ে গেছে, তাই অনেক জায়গাতেই মোবাইল ফোন পরিষেবা বন্ধ ছিল। কিছু অঞ্চলে অস্থায়ী টাওয়ার স্থাপন করে সেবা চালু করা হয়েছে।

কাউন্টি ওয়েবসাইটে সরকারি তালিকার পাশাপাশি স্থানীয় বুলেটিন বোর্ড, গাছের গায়ে লাগানো পোস্টারের মাধ্যমেও নিখোঁজদের সন্ধান করা হচ্ছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন গ্রুপ খুলে তার মাধ্যমেও অনেকেই প্রিয়জনদের সন্ধান চালানোর ওপর আস্থা রাখছেন।

আরেকটি বিষয় হলো বয়স্ক নাগরিক। কাউন্টি প্রকাশিত সরকারি তালিকায় অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের তালিকাকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন বিউট কাউন্টির প্যারাডাইস শহরটি ভীষণভাবে এই দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত। যেখানে ২৭ হাজার বসবাসকারীর এক চতুর্থাংশ বাসিন্দার বয়স ৬৫ বা তার চেয়ে বেশি।

প্যারাডাইস শহরের পুলিশের প্রধান কর্মকর্তা এরিক রেইনবোল্ড বলেছেন, জনসংখ্যাতত্ত্ববিদরা জরুরি পরিস্থিতিগুলিতে অধিবাসীদের উদ্ধারে এই সমস্যাগুলোর ওপর জোর দিয়েছেন। তার মতে, অন্য অনেক এলাকার মতোই এখানেও এমন বয়স্ক মানুষ ছিলেন যারা ড্রাইভিং করা ছেড়ে দিয়েছিলেন।

মনে করা হচ্ছে যে, বয়স্ক অনেকেই হয়তো ইন্টারনেট ব্যবহার বা মোবাইলে যোগাযোগ করার মতো অবস্থাতে নেই।

শেরিফ হোনির মতে, এজন্যে হয়তো অনেকেই স্থানচ্যুতির পর যোগাযোগ করতে পারছে না বা তারা হয়তো সচেতনই নন যে তাদের সন্ধান করা হচ্ছে।

শেরিফের অফিসের এক কর্মকর্তা এপির কাছে স্বীকার করেছেন যে, তালিকাটি হয়তো বাস্তব সময়ের প্রতিফলন ঘটাতে পারছেনা। তবে তারা আশা করছেন যে, এই তালিকা দেখেও অনেকে হয়তো নিশ্চিত করবেন তাদের নিরাপদে থাকার বিষয়টি।

কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের অনুরোধ করেছে যাতে তারা তালিকাটি পুন: যাচাই করে দেখে। সেই সাথে তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের কেউ যদি নিরাপদে থাকে তবে তাদের ফোন কলের মাধ্যমে নিশ্চিত করতেও অনুরোধ করছে দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

Bootstrap Image Preview