Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ইসরাইলি হামলায় বিধ্বস্ত সিরিয়া-ফিলিস্তিনির প্রেমের গল্পে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:৩০ AM
আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:৩০ AM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


গাজায় সর্বশেষ ইসরাইলি বিমান হামলার পর ফিলিস্তিনিরা বুধবার যখন নিজেদের বাড়ি থেকে সতর্কভাবে বের হচ্ছিলেন, তখন বোমায় বিধ্বস্ত আল রাহমা ভবনের কাছে একটা অসাধারণ দৃশ্য দেখতে পেয়েছেন।

আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি অ্যাপার্টমেন্টের শয়নকক্ষে একটি বিয়ের পোশাক ঝুলে রয়েছে। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া পোশাকটিতে ময়লার স্তূপ পড়েছে।

এরপর সেখানে ভিড় বাড়ছিল, মানুষ মুগ্ধ হয়ে সেটি দেখছিল। কিন্তু তাদের অনেকেই হয়ত জানতো না, এই পোশাকটি পাঁচ বছরের একটি প্রেমের কাহিনী, বিচ্ছেদ ও কঠিন সংকল্প বয়ে বেড়াচ্ছে।

২০১৩ সালের কথা। ফাদি আল গাজালি নামের এক তরুণ ফিলিস্তিনির সঙ্গে ফেসবুকে সিরীয় শহর খান শেখহাউনের তরুণী ইয়ারা আল জাওবীর সঙ্গে পরিচয় ঘটে। এর পরই তারা পরস্পর প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

ফাদি বলেন, প্রথম থেকেই তাকে আমি অন্তরাত্মার বন্ধু ভাবতে শুরু করলাম। সে মানব মনের এমন জিনিস দেখিয়েছে, যা কেউ কল্পনা করতে পারবে না। এর মধ্যে গাজায় তিনটি যুদ্ধ হয়েছে। ২০০৮, ২০১২ ও ২০১৪ সালে ইসরাইলের সঙ্গে এই তিন যুদ্ধে আমি বেঁচে যাই। কাজেই এরমধ্যে আমি তাকে বুঝতে শিখেছি। ভৌগলিক ও রাজনৈতিক বাধা সত্ত্বেও তারা সিদ্ধান্ত নেন যে পরপস্পরের সঙ্গে দেখা করবেন।

ফাদি বলেন, আমাদের স্বপ্ন ছিল, একসঙ্গে থাকা। লোকজন অবশ্য এ স্বপ্ন নিয়ে মজা করতেন। কারণ আমি অবরুদ্ধ গাজার ভেতর বাস করতাম। আর সে থাকত যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায়।

স্বাভাবিক দৃষ্টিতে এটা এক অবাস্তব স্বপ্ন ছিল। অল্প সময়ের মধ্যেই ফাদি বিয়ের প্রস্তাব দেন ইয়ারাকে। এরপর তাদের দুজনের পরিবারের মধ্যে যোগাযোগ ঘটে।

আল জাজিরাকে ফাদি বলেন, আমি তার বাবা-মায়ের কাছে দোয়া চাইলাম। তারা দুই হাত খুলে আমাকে স্বাগত জানালেন। এর পর নিজের বিয়ের খরচ যোগাতে ফাদি একটি রুটির কারখানায় চাকরি নেন। আসবাবপত্রে নিজের ঘরটাকেও সাজিয়ে ফেলেন তিনি।

এদিকে ইয়ারা বেশ কয়েকবার আবেদনের পর মিসরীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করেন।

২০ লাখ অধ্যুষিত এই অঞ্চলটি গত ১১টি বছর ধরে ইসরাইলি অবরোধের কবলে রয়েছে। যাতে সেখানকার অর্থনীতি প্রায় ভেঙে গেছে। কাজেই গাজায় ফিলিস্তিনিদের বের হওয়া ও প্রবেশ করায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা রয়েছে।

ফাদি ভাষায়, এটা আলৌকিক ঘটনাই বটে। আমি আমার বাগদত্তাকে সিরিয়া থেকে বের করে গাজায় নিয়ে আসতে পেরেছি। আমরা এক অসাধ্য সাধন করেছি।

‘সে যখন রাফাহ সীমান্ত পার হয়ে গাজায় আসে, তখন আমার মনে যেন আনন্দ ধরে না। খুশিতে আমি যেন উড়ছিলাম। প্রতিবেশীরাও আমাদের সঙ্গে সেই আনন্দ উপভোগ করছিলেন।’ ইসরাইল ও মিসরীয় কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইয়ারা পরিবার গাজায় আসতে পারেননি।

ফাদি বলেন, ইয়ারা তার দুই হাজার ডলারের বিয়ের পোশাকটি বয়ে নিয়ে এসেছিল সিরিয়া থেকে। সে আসার পর বিয়ের জন্য তাদের প্রতিবেশীরাও বেশ উৎসব করে সওদা করেছিলেন।

গত রোববার তাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। মজার বিষয় হচ্ছে, দিনটি ছিল ফাদির ২২তম জন্মদিন। সবকিছুই প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল। বর ছিলেন ফাদির মায়ের কক্ষে, আর কনে আসবাবপত্রের কক্ষে অপেক্ষা করছিলেন। কিছুক্ষণ পরেই তাদের বিয়ে হবে।

কিন্তু হঠাৎ করেই সোমবার মাঝারাতে ফাদির পরিবারের কাছে ফোন আসে যে তাদের আশপাশের ভবনে ইসরাইলি হামলা চলছে।ফাদির পরিবার পালিয়ে তার ফুফুর বাসায় আশ্রয় নেয়। এ সময় পাঁচ তলা আল রাহমা ভবনে ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলে।

পরদিন সকালে এসে দেখে তাদের সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। ফাদি বলেন, আমি ও আমার হবু স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়ি। ইসরাইলি বিমান হামলায় আমাদের স্বপ্ন ধুলোয় মিশে গেছে। বিয়ের জন্য কেনা সবকিছু ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে মাটিতে মিশে গেছে।

Bootstrap Image Preview