Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৬ সোমবার, মে ২০২৪ | ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করে ‘শোকরানা মাহফিলে' সংঘবদ্ধ প্রতারণা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ নভেম্বর ২০১৮, ০১:৩৫ PM
আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৮, ০৫:২২ PM

bdmorning Image Preview
ছবি: বিডিমর্নিং।


'কওমী সনদ স্বীকৃতি পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে এসেছেন? আমরা আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি' এই কথা বলতে বলতেই গায়ে জুড়ে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিত একটি স্টিকার ব্যাজ। ধন্যবাদ জানিয়ে একপা বাড়াতেই দাবি করে বসেন বকশিস। পকেট থেকে ১০টাকা বের করতেই তারা বলে ১০০টাকা দিতে হবে না হয় যেতে পারবেন না।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে টিএসসি চত্বরে ৪/৬ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র এভাবেই শোকরানা সমাবেশে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকজনের সাথে প্রতারণা করে টাকা আদায়ের ভিন্ন চিত্র দেখা যায়।

বেলা ১১টা ৪৫মিনিট, সমাবেশ চলছে। এই প্রতিবেদক তাদের পুরো ঘটনা লক্ষ করে। এর পর তাদের একজনের কাছে জানতে চাইলে বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। তাহলে আপনারা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এসছেন? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে পরিচয় বুঝতে পেরে সে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সে বলে আমি তেজগাঁও কলেজের স্টুডেন্ট এসব বিক্রি করতে এসেছি।

তাহলে জোরকরে গায়ে ব্যাজ লাগিয়ে দিচ্ছেন কেনো? এমন প্রশ্নে তিনি প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। এর পর কথা না বলেই দ্রুত দৈড়ে স্থান ত্যগ করেন।

একটু দুরেই চক্রের অন্য সদস্যদেরও ছড়িয়ে ছিটিয়ে একই কাজ করতে দেখা যায়। ফুটপাত দিয়ে সমাবেশস্থলে দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন মধ্যবয়ষ্ক এক আলেম। কোন কথা না বলেই চক্রের এক নারী সদস্য গায়ে একটি ব্যাজ পড়িয়ে দিয়ে বকশিশের নামে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করে। এমন সময় প্রতিবেদক ওই বয়ষ্ক আলেমের কাছে জানতে চাইলে তিনি এর প্রতিবাদ করার সাহস পান। তিনি বলেন, আমার অনুমতি না নিয়েই জোর করেই এই মহিলা এটা আমার জামায় লাগিয়ে দিয়েছেন।

এর পর প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পর নিজেকে স্টুডেন্ট দাবি করে ওই নারী বলেন আমি জোর করে লাগাইনি। ততক্ষনে প্রতারক চক্রের আরো দুই সদস্য সেখানে হাজির হয়ে প্রতিবেদকের হাত ধরে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করলেও তারা প্রতিবেদকের হাত ধরে রাখে, এবং ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দুরে নিয়ে যায়।এক পর্যায়ে লোকসমাগম হলে তারা ছেড়ে দেয়। কিন্ত এমনভাবে ধরে রাখে যাতে প্রতিবেদককেই দোষী বানানো যায়।

লোকজন প্রতারক চক্রটিকে বুজতে পারলে তারা জবাব দিতে থাকেে এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে চক্রের সদস্যরা। চক্রের ওই নারী সদস্য আকুতি করে বলতে থাকে 'আপনার বোন নাই আমি তো আপনার বোনের মতো, আমি টিউশনি করে আমার ছোট বোনকে পরাশুনা করাচ্ছি, আজ এসব বিক্রি করতে এসেছি।'

তার সাথে কথা বলার সময়ে চক্রের বাকি দুই সদস্য পালিয়ে যায়। এ সময় উৎসুক জনতা ওই নারীকে পুলিশের কাছে দিতে বললে সে আতংকিত হয়ে যায় এবং সে তার প্রতারণার কথা শিকার করে দৌড়ে পালিয়ে যায়।

এক পথচারীকে জোর করেই টাকা নিচ্ছে প্রতারক চক্রের ওই নারী সদস্য। ছবি: বিডিমর্নিং।

এর পর রাজ্জাক নামে একজন বিডিমর্নিংয়ের এই প্রতিবেদককে বলেন, কিছুক্ষন আগে আমাকেও ধরেছিলো ব্যাজ পরিয়ে বলে ১০০টাকা দিতে হবে সবাই দিচ্ছে আপনি দেবেন না কেনো।

সমাবেশে অংশ নেওয়া একধিক কওমী হুজুররা বিডিমনিংকে অভিযোগ করে বলেন, এসব ছেলেমেয়েরা আমাদের গায়ে হাত দিচ্ছে। বারণ করলেও জোর করে তারা স্টিকার ব্যাজ পরিয়ে দিচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী।

প্রসঙ্গত, কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি বিল জাতীয় সংসদে পাস করায় বরিবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর জন্য শোকরানা মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এত দেশের বিভিন্ন প্রন্ত থেকে ব্যাপক লোকসমাগম হয়। 

‘হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমি বাংলাদেশ’র ব্যানারে আয়োজিত মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী।

অনুষ্ঠান মঞ্চে কওমি আলেম-ওলামাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

Bootstrap Image Preview