ঋণপত্র না খুলেই জাপান থেকে বিপুলসংখ্যক গাড়ি বাংলাদেশে এনেছেন ব্যবসায়ীরা। ‘মালয়েশিয়া স্টার’ জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩২১টি ও মোংলা বন্দরে ৫৫১টি গাড়ি এসেছে। তিন শর বেশি আমদানিকারকের এসব গাড়ির মধ্যে কতগুলোর ঋণপত্র নেই তা খতিয়ে দেখছে কাস্টমস।
ঋণপত্র ছাড়া গাড়ি বন্দরে পৌঁছার পর আমদানিকারকরা এখন বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা, মালিকদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন, যাতে দ্রুত ঋণপত্র জমা দিয়ে সেগুলো ছাড় করে নেওয়া যায়।
জানা গেছে, ২২ নভেম্বর মালয়েশিয়া স্টার জাহাজে যে গাড়িগুলো এসেছে, তার বেশির ভাগই সরবরাহ করেছেন জাপানে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশি ক্রস কন্টিনেন্টালের জহীর উদ্দিন। বাংলাদেশে যত রিকন্ডিশন্ড গাড়ি সরবরাহ দেওয়া হয়, তার ৮০ শতাংশই তাঁর কম্পানির। ফলে ক্রস কন্টিনেন্টালের সঙ্গে শিপিং এজেন্ট ও আমদানিকারক মিলে এসব গাড়ি এনেছেন।
জানতে চাইলে জাহাজটির শিপিং এজেন্ট এনসিয়েন্ট স্টিমশিপ কম্পানি লিমিটেডের পরিচালক মোরশেদ হারুন বলেন, ‘মালয়েশিয়া স্টার জাহাজে মোট ৮৭২টি গাড়ি বাংলাদেশে পৌঁছেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে নেমেছে ৩২১টি। আর মোংলা বন্দরে নেমেছে ৫৫১টি। গাড়ি নামিয়ে জাহাজটি বাংলাদেশ ছেড়েছে। ’
ঋণপত্র ছাড়া গাড়ি আনার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে মোরশেদ হারুন বলেন, ‘নিশ্চয়ই কোনো না কোনোভাবে টাকাটা পেমেন্ট হয়েছে। তবে ঋণপত্র ছিল কি না, তা যাচাইয়ের দায়িত্ব শিপিং এজেন্টের নয়। এটি কাস্টমস, ব্যাংকের মতো রেগুলেটরি বডি নিশ্চিত করবে। আর আমি অনুমতি পেয়েছি বলেই জাপান থেকে গাড়ি বোঝাই করেছি আর চট্টগ্রাম ও মোংলায় নামিয়েছি। ’
আমদানিনীতি আদেশ অনুযায়ী, ঋণপত্র ছাড়া একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত অনুমোদিত পণ্য দেশে আনতে পারেন। কিন্তু যখনই বড় আকারের অর্থাৎ অনেক গাড়ি আমদানি হয়, তখন কোনোভাবেই ঋণপত্র না খুলে জাহাজীকরণের সুযোগ রাখা হয়নি আমদানিনীতিতে।
নাম প্রকাশ না করে এক গাড়ি ব্যবসায়ী বলেছেন, ‘জাহাজে থাকা সবগুলো গাড়ির বিপরীতে ঋণপত্র খোলার প্রক্রিয়া চলছে। হয়তো দেখা যাবে সপ্তাহ দশেকের মধ্যে ঋণপত্র খোলা হয়ে জমা পড়বে। এ জন্য অবশ্য ঋণপত্র জমা না দেওয়ায় কাস্টমস জরিমানা আদায় করতে পারে। আমরা চেষ্টা করছি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মাধ্যমে ঋণপত্র খোলা নিশ্চিত করতে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এ ক্ষেত্রে কিছুটা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা একসঙ্গে এক লাখ ডলারের ঋণপত্র না খুুলে ছোট আকারে ২০ হাজার ডলারের ঋণপত্র খোলার পরামর্শ দিচ্ছে। ’
ঋণপত্র ছাড়া এতগুলো গাড়ি আমদানির পর বারভিডা কোন আমদানিকারকের কত গাড়ি আছে সেই তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। জানতে চাইলে বারভিডার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও ফোর হুইলার্সের কর্ণধার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমার মতে এ ক্ষেত্রে এখনো অপরাধ সংঘটিত হয়নি। কারণ বিদেশি সরবরাহকারী হয়তো গাড়িগুলো বাংলাদেশে পাঠিয়েছে ঋণপত্র ছাড়াই। কিন্তু সেগুলো তো বন্দর থেকে ছাড় করা হয়নি। ’ তবে ঋণপত্র ছাড়া গাড়ি জাহাজে তোলা আমদানিনীতির পরিপন্থী, এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘সে জন্য হয়তো কাস্টমস জরিমানা করবে। ’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঋণপত্র জমা না পড়লে শিপিং লাইন বিএল বা বিল অব লেডিং ইস্যু করতে পারবে না। আর বিএল ইস্যু করতে না পারলে সেটি শুল্কায়নের জন্য কাস্টমসে জমা পড়বে না। শুল্কায়ন না হলে গাড়িগুলো বন্দরে পড়ে থাকবে। আর ৪৫ দিন পার হলে কাস্টমস চাইলে নিলামে তুলতে পারবে।
ঋণপত্র ছাড়া গাড়ি আমদানি কিভাবে সম্ভব হলো জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলছেন, ‘এ বিষয়ে আমরা জানি না। কাস্টমস জানবে। ’
পরে চট্টগ্রাম কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট গ্রুপের উপকমিশনার কামরুন নাহার লিলি বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমরা পুরো জাহাজে থাকা গাড়ির আইজিএমসহ জমা পড়া সব তথ্য যাচাই করতে আইটি বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি। তাদের তথ্য হাতে আসার পরই বুঝতে পারব আসল ঘটনা কী। ’ তিনি বলেন, ‘সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট যখন বিল অব এন্ট্রি জমা দেবে তখনই কাস্টমসের প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং এখন যেহেতু বিল অব এন্ট্রি জমা হয়নি, তাই আমাদের নিজের উদ্যোগে এই কাজটি করতে হচ্ছে। তথ্য না আসার বিস্তারিত বলতে পারব না। ’
সূত্র: কালের কণ্ঠ