Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মূর্তি বানিয়ে আমাদের কবর খোঁড়া হয়েছে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:৫০ PM
আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:৫০ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বাধীনতা আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের একটি বিশাল মূর্তি উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গুজরাটের নর্মদা জেলার ছোট্ট একটি দ্বীপে তৈরি করা এই মূর্তিটি এখন বিশ্বের সর্বোচ্চ মূর্তি - স্ট্যাচু অফ লিবার্টির প্রায় দ্বিগুণ। এটির নাম স্ট্যাচু অফ ইউনিটি বা ঐক্যের মূর্তি।

প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে এই মূর্তি তৈরির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ স্থানীয় আদিবাসী ও কৃষকদের একটা অংশ। তারা বলছেন, ফসলের দাম পাওয়া যাচ্ছে না, চাষের জল নেই অথচ বিপুল অর্থ খরচ করে এই মূর্তি বানানো হল। এ মূর্তি নিয়ে এক কৃষকের ক্ষোভ, ‘বল্লভভাই পটেলের মূর্তি বানিয়ে আদিবাসীদের জন্য কবর খোঁড়া হয়েছে। আগামী নির্বাচনে শুধু গুজরাট নয় দেশের সমস্ত আদিবাসী গোষ্ঠী এর জবাব দেবে।’

নরেন্দ্র মোদির বহুল বিজ্ঞাপিত এ মূর্তি নির্মাণের প্রেক্ষিতে নর্মদা জেলার আদিবাসী গ্রামগুলো এখনও ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে। স্থানীয় জনপ্রতনিধি বাহাদুর ভাসাভাও বলছেন, ‘প্রথম এ রকম একটা সুযোগ এসেছে আদিবাসীদের একজোট হওয়ার। গুজরাট তো বটেই, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান যেখানে যত আদিবাসী গ্রাম রয়েছে, সেখান থেকে বিজেপির সব ধ্যানধারণাকে আমরা নির্মূল করে দেব। এই ঘটনাটি দেশলাইয়ের কাজ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করার সর্বাত্মক পরিকল্পনা শুরু করেছি আমরা। সর্বোত্র আমাদের জমি ধ্বংস করে মোদি সরকার প্রকল্প করছে, বাঁধ দিচ্ছে, নদী সংযোগ করছে, ‘আদিবাসী বাঁচাও’য়ের নাম করে সেখানে গিয়ে আমরা আন্দোলন করব।’

বৃহস্পতিবার নরেন্দ্র মোদি যখন স্ট্যাচু অফ ইউনিটি নামের এই মূর্তির উদ্বোধন করছেন, তখন ওই এলকার ৭৩টি গ্রাম পালন করেছে বিক্ষোভ পালন করেছে। কালো বেলুন উড়িয়ে, টায়ার পুড়িয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন কৃষকরা। তাদের অভিযোগ একাধিক বাঁধ নির্মাণের জন্য যে সব গ্রামবাসীকে উৎখাত করা হয়েছে, তাদেরকে ঠিক মতো পুনর্বাসন করা হয়নি। কেউ কোনো জমি পাননি। এছাড়া যারা পেয়েছেন, তাদেরও অনেকেরই জুটেছে অনুর্বর জমি।

বাঁধের তিন কিলোমিটার দূরে মূর্তি গড়ার জন্য শতাব্দীপ্রাচীন বহু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। তাদের জমি-রুটি কেড়ে যে ভাবে নর্মদাকে তথাকথিক ‘বিলাসবহুল’ শহর হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে, তা মানতে পারছেন না নেতারা।

স্থানীয়রা বলছেন, ‘গুজরাটের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া এই জেলাগুলোর একটি নর্মদায় তিন হাজার কোটি টাকার মূর্তি বানানো একটা নির্মম তামাসা ছাড়া কিছুই নয়। আমরা সর্দার পটেলের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালও চাই।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে জানা যায়, মূর্তিটি নির্মাণের জন্য পাশ্ববর্তী একটি গ্রামের দুই শতাধিক পরিবারকে বাড়ি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদেরই একজন বলেন, ‘আমাদের অনেককেই টাকা অথবা জমি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নিজের বাপ-দাদার ভিটে কি টাকার মূল্যে ছাড়া যায়?’

অন্যদিকে প্রশ্ন উঠেছে যে সর্দার প্যাটেল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে নিষিদ্ধ করেছিলেন গান্ধী হত্যার অভিযোগে, যিনি এই সংগঠনের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানোর অভিযোগ করেছিলেন। তারই বিশালাকার মূর্তি কেন বানালেন আর এস এস থেকেই বিজেপিতে আসা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি?

Bootstrap Image Preview