অসুস্থ বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার চামেলি খাতুনের চিকিৎসার দ্বায়িত্ব নিয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে চামেলিকে তার বাসায় দেখতে যান মেয়র লিটন। এ সময় তাৎক্ষণিক মেয়র উন্নত চিকিৎসায় চামেলির হাতে সহায়তার নগদ এক লাখ টাকা তুলে দেন।
পাশাপাশি চামেলি খাতুনের চিকিৎসার পুরোপুরি ব্যয়ভার মেটাতে যা করা দরকার সেটা করার আশ্বাসও দেন মেয়র। তার পুনর্বাসনের আশ্বাস দেন। এছাড়া চামেলির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আর্কষণেরও আশ্বাস দেন মেয়র।
এ সময় মেয়র বলেন, ‘চামেলি ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারলাম, তারা নিদারুণ সঙ্কটে আছে। যে বাড়িতে তারা বসবাস করছেন, সেটি জরাজীর্ণ।’ মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে তিনি অসুস্থ ক্রিকেটারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
আট বছর যাবত বাম পায়ের লিগামেন্ট ছিড়ে যাওয়ায় গুরুতর ইনজুরি আক্রান্ত হয় চামেলি খাতুন (২৭)। মেরুদণ্ডে ব্যাথাসহ অবশ হয়ে যাচ্ছে চামেলির শরীরের এক অংশ।
গত বিশ দিন ধরে একেবারে বিছানায় তিনি। খেলাধুলা তো দূরের কথা স্বাভাবিক কাজকর্মও লাটে উঠেছে। কিন্তু টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না তিনি। সংসারে নেমেছে ঘোর অন্ধকার।
এই অবস্থায় অতি স্বত্বর দেশের বাইরে সার্জারির পরামর্শ দেন চিকিৎসক। আর এই চিকিৎসার জন্য চামেলীর প্রয়োজন কমপক্ষে অন্তত ১০ লাখ টাকা।
এই কঠিন সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চামেলি বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে। গণমাধ্যমে এ সক্রান্ত খবর প্রকাশের পর সেটি নজরে কাড়ে হৃদয়বানদের।
এরই মধ্যে জাতীয় ক্রিকেট দলের দুই তারকা সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান চামেলিকে আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এগিয়ে এসেছেন সমাজের বিত্তবানরাও। তবে আশ্বাস দিলেও বিসিবির সহায়তা এখনও পাননি চামেলি। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আবারও আশায় বুক বাঁধছেন তিনি।
চামেলি রাজশাহী নগরীর দরগাপাড়া এলাকার রুস্তম আলী ও মনোয়ারা বেগমের মেয়ে। ছয় বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট চামেলি। বৃদ্ধ বাবা-মা ছাড়াও স্বামী পরিত্যক্তা বোনকে নিয়ে সংসার তার। খেলা আর সংসার চালাতে গিয়ে নিজের সংসার বাঁধার সময় মেলেনি। চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এক রকম ঘরবন্দি হয়ে রয়েছেন চামেলি।
চামেলি জানান, ১৯৯৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত জাতীয় নারী ক্রিকেট দলে সদস্য ছিলেন চামেলি খাতুন। তুখোড় এই অলরাউন্ডার ব্যাট হাতে নামতেন। মিডিয়াম পেসার হিসেবে জ্বলে উঠতেন দলের প্রয়োজনে। এর বাইরে ঢাকা বিভাগে খেলেছেন টানা। দুই মৌসুম শেখ জামালের ক্যাপ্টেন হিসেবে সামনে থেকে টেনে নিয়ে গেছেন দল। নৈপূণ্য দেখিয়েছেন জাতীয় পর্যায়ের অ্যাথলেটিক্স ও ফুটবলেও।
কিন্তু বছর আটেক আগের ইনজুরি তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার ফেলেছে হুমকিতে। থেমে গেছে ক্রিকেটের আয়ে চলা সংসারের চাকা।