Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘ঐক্যের মূর্তি’ উদ্বোধনে ৪০০০ পুলিশ ২০ ড্রোন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর ২০১৮, ০৭:৫২ PM
আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৮, ০৭:৫২ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তি বানিয়েছে ভারত। ১৮২ মিটার উচ্চতার এ মূর্তিটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি রুপি। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের এই মূর্তিটির নাম ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’ বা ‘ঐক্যের মূর্তি’।

মূর্তিটি আজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গুজরাটের নরমাদা জেলায় অবস্থিত এ মূর্তি উদ্বোধন উপলক্ষে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূর্তি উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বিক্ষোভ করছেন সেখানকার বাসিন্দারা। স্থানীয় নেতা ছোটু বশোভার নেতৃত্বে এ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন উপজাতিরা। ইতোমধ্যে কয়েকটা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মূর্তি নির্মাণের প্রতিবাদে বুধবার বনধ ডেকেছেন স্থানীয়রা। প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন সেখানকার উপজাতি পরিবারের গৃহিণীরাও। সারাদিন চুলা জ্বালাবে না বলে জানিয়েছেন তারা।

সেখানকার বাসিন্দাদের দাবি, এ অঞ্চলটি কৃষিপ্রবণ এলাকা। হাজার হাজার কৃষক চাষাবাদের জন্য মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করেন। দীর্ঘ খরার কারণে পানির জন্য হাহাকার। এমতাবস্থায় কৃষিকাজের জন্য পানি সেচের ব্যবস্থা না করে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা মূর্তি নির্মাণ অযৌক্তিক। তাই তারা মূর্তিটির উদ্বোধনের বিপক্ষে।

এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে সেখানে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করেছে গুজরাট সরকার। সেখানে রয়েছেন পুলিশের একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (ডিজি), একজন মহাপরিদর্শক (আইজি), ৫ জন পুলিশ সুপার, ৩০ জন উপ-পুলিশ সুপার, ৭৬ জন পুলিশ ইন্সপেক্টর, ৩১৭ জন সাব-ইন্সপেক্টর, ২৮টি সজ্জিত পুলিশের দল। সবমিলিয়ে ৪ হাজার পুলিশ মোতায়েন করেছে গুজরাট সরকার। পুলিশ ছাড়াও সেখান থাকবে ৬টি বোমা নিষ্পত্তিকরণ স্কোয়াড। এ ছাড়া ২০টি ড্রোন বিমান সারাদিন আকাশে চক্কর দেবে।

একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আমরা নরমাদা জেলার সীমান্তবর্তী সব এলাকার মানুষদের গতিবিধির ওপর লক্ষ্য রাখছি। আমাদের লক্ষ্য শুধু তাদের প্রতিরোধ করা না, তারা যাতে মূর্তিনির্মিত স্থানের ধারেকাছে না যেতে পারে, সেদিকও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।

‘রাজপিপলামুখী সব ধরনের যানবাহনে তল্লাশি করা হচ্ছে। এছাড়া সীমান্তে অবস্থিত থানা পুলিশের সদস্যরা আরও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে’-যোগ করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

প্যাটেল মেমোরিয়াল প্রজেক্টের আওতায় মূর্তি ছাড়াও সেখানে একটি তিন তারকা হোটেল, একটি জাদুঘর ও একটি গবেষণা কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। আর এসবই হয়েছে যেখানে সেখান থেকে তাদভীর গ্রাম দশ কিলোমিটার দূরে। সেখানে বেশিরভাগ মানুষ দরিদ্র ও উপজাতীয়। সেখানকার বহু মানুষ ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ভুগছে।

ভারত সরকারের দাবি, এ উঁচু মূর্তিটিই ওই জেলার অর্থনীতিকে চাঙা করে তুলবে। কারণ তাদের আশা বছরে অন্তত পচিশ লাখ মানুষ মূর্তিটি দেখতে সেখানে যাবে। তবে সরকারের এই যুক্তি মানতে নারাজ স্থানীয়রা।

তারা বলছেন, ‘অন্য জায়গায় যেখানে বছরে তিনবার ফসল হয়, সেখানে তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয় একটি মাত্র ফসলের ওপর। এমতাবস্থায় এ মূর্তি নির্মাণ অযৌক্তিক।’

এক নজরে ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’

উপপ্রধানমন্ত্রী সরদার বল্লভভাই প্যাটেলের ভাস্কর্যটি ১৮২ মিটার (৫৯৭ ফুট) উঁচু, যা প্রায় ৬০ তলা ভবনের সমান উঁচু। ভারতের গুজরাট রাজ্যের সাদু বেট আইল্যান্ডে নর্মদা নদীর পাশে ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু এই ভাস্কর্য দেশটির নতুন এক অনন্য নিদর্শন। এটি বহুল আলোচিত যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যাচু অব লিবার্টির প্রায় দ্বিগুণ।

সেনাবাহিনীর সঙ্গে তিন হাজারের বেশি শ্রমিক এটি নির্মাণে কাজ করেন। স্বনামধন্য নির্মাণ ও প্রকৌশল কোম্পানি লারসেন অ্যান্ড টাউবরোর (এলঅ্যান্ডটি) ৩০০ প্রকৌশলী এই মানবমূর্তি নির্মাণের সঙ্গে ছিলেন।

সরদার প্যাটেলের ১৪৩তম জন্মবার্ষিকীর এই বিশেষ দিনে তাঁর স্মরণে নির্মিত মূর্তিটি উন্মোচন করা হচ্ছে।

গুজরাট সরকারের অর্থায়নে স্ট্যাচু প্রকল্পের ব্যয় ৩ হাজার ৫০ কোটি রুপি। ভাস্কর্যটির পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালের মে মাসে। সাড়ে তিন বছর ধরে কাজ করে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। বিশাল এই ভাস্কর্যের শিল্পী হলেন পদ্মভূষণ পুরস্কার বিজয়ী রাম ভি সুতার।

ভাস্কর্যটি তিন স্তরবিশিষ্ট কাঠামোয় বিন্যস্ত। অভ্যন্তরীণ স্তরে ১২৭ মিটার দুটি উঁচু টাওয়ার আছে, যা ভাস্কর্যের বুক পর্যন্ত বিস্তৃত। দ্বিতীয় স্তরটি স্টিলের কাঠামো এবং তৃতীয় স্তর বা ভাস্কর্যের উপরিভাগ আট মিলিমিটার ব্রোঞ্জ দিয়ে মোড়ানো। ভাস্কর্যের আপাদমস্তক দর্শনের জন্য দুটি লিফট আছে। প্রতি লিফট ২৬ জন বহন করতে পারে। লিফটে আধা মিনিটের মধ্যে ভাস্কর্যের শীর্ষ স্থানে পৌঁছানো সম্ভব।

উচ্চতার দিক থেকে এর আগে সর্বোচ্চ স্ট্যাচুর রেকর্ড ছিল চীনের। স্প্রিং টেম্পল অব বুদ্ধ নামের স্ট্যাচুটির উচ্চতা ১৫৩ মিটার। বর্তমানে সেই অবস্থান নিল ভারতের স্ট্যাচু অব ইউনিটি। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে জাপানের ১২০ মিটার উঁচু উশিকু দায়বাসু, চতুর্থ স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের ৯৩ মিটার উঁচু স্ট্যাচু অব লিবার্টি এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছে রাশিয়া ৮৫ মিটার উঁচু হোমল্যান্ড মাদার।

Bootstrap Image Preview