নাম রেহানা ফাতেমা। বয়স ৩১। দুই সন্তানের জননী। কাজ করেন ভারতের সরকারি জনসংযোগ বিভাগে। কিন্তু এটাই তার পরিচয় নয়। কেননা অন্য সাধারণ মেয়ের মতো নন তিনি। নারীদের অধিকার আর নারী শরীর নিয়ে আমাদের সমাজের প্রচলিত ধারণা ভাঙতে চান ফাতেমা। তাইতো যখনই নারীদের ছোট করার মতো কোনও ঘটনা ঘটে, তাকে দেখা যায় সবার আগে। এবার ভারতের কেরালায় শবরীমালা মন্দিরে নারীদের প্রবেশাধিকার নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, তখনই উচ্চকিত তার কণ্ঠস্বর।
সম্প্রতি ভারতের কেরালা রাজ্যের শবরীমালা মন্দিরে নারীদের প্রবেশাধিকার নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সুপ্রিম কোর্টের রায় অবশেষে ইতি টেনেছে কয়েক শতাব্দী ধরে চলে আসা এই মন্দিরে নারীদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞায়।
কিন্তু তাতেও ফল হয়নি কিছুই। আদালতের রায়ের পরও কোনো নারীকে এই মন্দিরে ঢুকতে দেননি পুরোহিতসহ অন্যান্য মন্দিরের কর্মকর্তারা। ওই মন্দিরে ১০-৫০ বছর বয়সী নারীদের এতদিন প্রবেশ করার অধিকার ছিল না, কারণ ওই বয়সটি নারীদের ঋতুবতী হওয়ার সময়।
আদালতের রায়ে ১৭ অক্টোবর থেকে সেখানে নারীদের প্রবেশের অনুমিত দেয়। ওইদিন রেহানা আরোও কয়েকজন নারীসহ পায়ে হেঁটে মন্দিরের সামনে যায়। সেখানে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। একজন মুসলিম নারী হয়েও শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করতে চেয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন তিনি।
এ ঘটনাকে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ আখ্যায়িত করে তাকে মুরতাদ (ইসলাম থেকে বহিষ্কার) ঘোষণা করে সেখানকার প্রভাবশালী এক মুসলিম ধর্মীয় সংগঠন। ভাঙচুর করা হয় তার ঘর-বাড়ি।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, রেহানা ফাতেমা একজন প্রচারমুখী মানুষ। তবে তার সাহসের প্রশংসা না করে পারা যায় না। বিভিন্ন ইস্যুতে যেভাবে তিনি প্রতিবাদী হচ্ছেন, সাধারণ মানুষকে ভাবতে বাধ্য করছেন, তা অবশ্যই উল্লেখ করার মতো। প্রতিবাদ করতে গিয়ে রক্ষণশীল হিন্দু ও মুসলমান উভয় পক্ষের রোষের মুখে পড়েছেন তিনি।
চলতি বছরের মার্চে কেরালার আরেকটি ঘটনার কারণে শিরোনাম হয়েছিলেন ফাতেমা। এক অধ্যাপক নারীদের স্তনের সাথে তরমুজের তুলনা করলে তার প্রতিবাদে রেহানা তরমুজ দিয়ে খোলা বুক আড়াল করে ছবি তুলেছিলেন। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দিলে বিস্তর সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয় তাকে।
এমন অভিজ্ঞতা অবশ্য ফাতেমার জন্য নতুন নয়। এর আগে ২০১৪ সালের বিতর্কিত ‘কিস অফ লাভ’ আন্দোলনের সময় চিত্রনির্মাতা মনোজ শ্রীধরের সাথে একটি চুম্বনের ভিডিও শেয়ার করেন। যেটা পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে তীব্র আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।
এদিকে শবরীমালার ঘটনায় রেহানার সহকর্মীরা নাকি অস্বস্তিতে পড়েছেন। এ কারণে তাকে বদলি করা হতে পারে বলেও গুঞ্জন উঠেছে। এসবের মধ্যেও বিন্দুমাত্র বিচলিত নন রেহানা। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করা ও দুই সন্তানের জননী ফাতেমা বলেন, বাবার মৃত্যুর পর থেকেই তিনি ধর্মের ওপর বিশ্বাস হারাতে শুরু করেন।
নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী রেহানা স্বপ্ন দেখেন বিভিন্ন সামাজিক শৃঙ্খল ভেঙে একদিন নারীরা নিজেদের শরীর ও চেতনার ওপর পূর্ণ স্বাধীনতা পাবে। শত সহস্র কুসংস্কার ভেঙ্গে এ পথে আগানো যে বেশ কঠিন তা বলতেও ভুলেন নি তিনি।