রাডারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে বিধ্বস্ত হওয়ার আগ মুহূর্তে জাকার্তা বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমে লায়ন এয়ারের বিমানটির যান্ত্রিক ত্রুটির কথা জানিয়েছিলেন পাইলট ভব্য সুনেজা।
সানডে এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়, লায়ন এয়ারের জেটি-৬১০ ফ্লাইট রাডারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে ত্রুটির কথা জানিয়ে জাকার্তা বিমানবন্দরে ফিরে আসার অনুমতিও চেয়েছিলেন পাইলট। অনুমতি চাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে ১৮৯ আরোহীবাহী ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ার লাইন্সের বোয়িং ৭৩৭ বিমানটি জাভা সাগরে বিধ্বস্ত হয়।
জাকার্তা থেকে উড্ডয়নের মাত্র ১৩ মিনিট পর স্থানীয় সময় ৬টা ৩৩ মিনিটে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে বিমানটি। নতুন এই বিমানটি উড্ডয়নের জন্য অভিজ্ঞ এই পাইলটকে সব ধরনের ক্লিয়ারেন্স দেয়া হয়েছিল।
ইন্দোনেশিয়ার ব্যাংকা দ্বীপের প্যাঙ্কাল পিন্যাংয়ের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল বিমানটি। ফ্লাইটের ডাটা বলছে, হঠাৎই বিমানটি সাগরে আছড়ে পড়েছে।
এক বিবৃতিতে দেশটির জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা কমিশন বলছে, বিমানের ১৮৯ আরোহীর মধ্যে দুই পাইলট ও ছয়জন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ছিলেন। এছাড়া বিমানটিতে দেশটির অর্থ বিভাগের ২০ কর্মকর্তাও ছিলেন। জাভা সাগরের কারাওয়াং এলাকার ৩০-৩০ মিটার গভীরে বিমান বিধ্বস্তের স্থানে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার বেসামরিক বিমান পরিবহন মহা-পরিদফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সিন্ধু রাহায়ু বলেছেন, পাইলট ভব্য সুনেজা যান্ত্রিক ত্রুটির কথা জানিয়ে বিমানটি জাকার্তা বিমানবন্দরে অবতরণের অনুমতি চেয়েছিলেন। বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম থেকে তাকে বিমানটি ফিরিয়ে অবতরণের অনুমতি দেয়া হয়। অনুমতি পাওয়ার পরপরই রাডারের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে বিমানটি মুহূর্তের মধ্যে বিধ্বস্ত হয় জাভা সাগরে।
ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বোর্ডের প্রধান সুতোপো নুগরোহো টুইটারে দেয়া এক বার্তায় বলেছেন, লায়ন এয়ারের বিধ্বস্ত জেটি ৬১০ বিমানের বেশ কিছু খণ্ডাংশ পাওয়া গেছে। উদ্ধারকারীরা বিমানের ধ্বংসাবশেষ, যাত্রীদের ব্যাগ, পোশাক, মোবাইল ফোন, আইডি কার্ড ও ড্রাইভিং লাইসেন্স উদ্ধারের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে।
এসব ধ্বংসাবশেষের মধ্যে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া বিমানের আসনও দেখা গেছে।দেশটির জাতীয় অনুসন্ধান ও উদ্ধার সংস্থার প্রধান মুহাম্মদ সায়াগি বলেছেন, আমরা জানি না যাত্রীদের কেউ বেঁচে আছেন কি-না। তবে আমরা আশা করছি, প্রার্থনা করছি; কিন্তু নিশ্চিত করতে পারছি না।
এদিকে আগস্ট মাস থেকে যাত্রা শুরু করা বিমানটির এত দ্রুত বিধ্বস্ত হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এর পরিচালক সংস্থা লায়ন এয়ার। এত নতুন বিমান এমন বড় দুর্ঘটনার কবলে এবারই প্রথম পড়লো।
লায়ন এয়ারের প্রধান নির্বাহী অ্যাডওয়ার্ড সিরাইটের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, আগের ফ্লাইটে বিমানটি একটি অনির্দিষ্ট কারিগরি ত্রুটির মুখে পড়েছিল। কিন্তু পরের ফ্লাইটের আগেই তা নিয়ম মেনে ঠিক করা হয়েছে। সিরাইট বলেন, লায়ন এয়ার বর্তমানে একই মডেলের ১১টি বিমান পরিচালনা করছে। বাকি বিমানগুলো চালানো বন্ধ রাখার কোনও পরিকল্পনা তাদের নেই।
বিমান পরিবহন বিশেষজ্ঞ গেরি সোয়েজাতমান বিবিসি’কে বলেন, ‘খুবই পুরোনো বিমানগুলো দুর্ঘটনার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। কিন্তু খুবই নতুন বিমানগুলোতেও দুর্ঘটনার অনেক ঝুঁকি থাকে’। তিনি বলেন, ‘যদি খুবই নতুন বিমান হয়, তাতে মাঝে মাঝে কিছু ত্রুটি থেকে যায়। নিয়মিত ব্যবহার শুরু করলে এসব ত্রুটি ধরা পড়ে। সাধারণত প্রথম তিন মাসের মধ্যেই ত্রুটিগুলো কাটিয়ে ওঠা যায়’। বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটির তিন মাস বয়স হতে আর কয়েক সপ্তাহ বাকি ছিল।