Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০২ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

দুই প্রধানমন্ত্রীর দেশ শ্রীলংকা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০১৮, ১০:০৮ AM
আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৮, ১০:০৮ AM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


দুই প্রধানমন্ত্রীর দেশ এখন শ্রীলংকা। সংবিধান লঙ্ঘন করে শুক্রবার রাতে আকস্মিকভাবে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করেন প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। গায়ের জোরে এদিনই নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাহিন্দা রাজাপাকসেকে শপথ দেন তিনি।

মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই পুরো সরকারের চিত্র পাল্টে ফেলেন। ‘সাংবিধানিক আইন’বলে প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল আছেন বিক্রমাসিংহে। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনও ত্যাগ করেননি তিনি। শ্রীলংকার ১৯তম সংবিধান সংশোধনীতে প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্তে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাতিল করা হলেও আইন ভেঙে রাজাপাকসেকে নিয়োগ দিয়েছেন সিরিসেনা।

তার এমন আগ্রাসী পদক্ষেপকে ‘প্রেসিডেন্ট ক্যু’ (রাষ্ট্রপতির অভ্যুত্থান) হিসেবে অ্যাখায়িত করেছে স্থানীয় গণমাধ্যম। পরিস্থিতি বশে আনতে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত পার্লামেন্ট কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছেন সিরিসেনা।

বিরোধীদের অভিযোগ, এ সময়ের মধ্যে পার্লামেন্টে নিজ দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বাড়াতে এমপি কিনতেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। পার্লামেন্টে বিক্রমাসিংহের দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) সংখ্যাগরিষ্ঠ।

বিবিসি জানায়, শুক্রবার ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্স (ইউপিএফএ) জোট থেকে সরে যান বিক্রমাসিংহে। এর পরপরই সিরিসেনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেন। এরপর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা রাজপাকসের হাতে নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব তুলে দেন।

ইউএফপিএ নেতা সিরিসেনা এক সময় রাজাপাকসের সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন। পরে অবশ্য তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। ২০১৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সিরিসেনার পক্ষে সমর্থন ছিল বিক্রমসিংহের।

বিক্রমাসিংহের সেক্রেটারি সামান একানায়াকা ও সরকারি তথ্য বিভাগের পরিচালককে বরখাস্ত করেছেন সিরিসেনা। প্রধানমন্ত্রীর নতুন সেক্রেটারি হিসেবে এস আমারাসেকারা ও তথ্য বিভাগের পরিচালক হিসেবে নালাকা কুলাওয়াকে নিয়োগ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।

সিরিসেনার আকস্মিক এমন পদক্ষেপে রাজনৈতিক সংকট শুরু হয়েছে শ্রীলংকায়। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রিসভাও বাতিল হয়ে যায়। রাজাপাকসে এখনও তার নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করেননি। তবে শনিবার থেকে রাজাপাকসে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব শুরু করেছেন।

২০১৫ সালে দেশটির ১৯তম সাংবিধানিক সংশোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্তে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাতিল করা হয়। ওই সংশোধনীতে বলা হয়, মৃত্যুবরণ, পদত্যাগ এবং পার্লামেন্টে আস্থা ভোটের মাধ্যমেই কেবল প্রধানমন্ত্রিত্ব খোয়া যাবে। আর এসব কারণে প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হলেই কেবল প্রেসিডেন্ট নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিতে পারবেন।

সংবিধানের ৪৬(২) ও ৪৮ ধারায় এ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। সংবিধানের ৪২(৪) ধারাবলে বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করেছেন সিরিসেনা। ওই ধারায় বলা হয়েছে, পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগের ক্ষেত্রে এমপিদের আস্থা ভোটের হুকুম জারি করতে পারেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু সংবিধান লঙ্ঘন করেই প্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত ও নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন সিরিসেনা।

পার্লামেন্টেও বিক্রমসিংহের দল ইউএনপির সংখ্যাগরিষ্ঠ ১০৬ এমপি রয়েছে। আর ইউপিএফএ জোটের রয়েছে ৯৬ এমপির সমর্থন। অনাস্থা এড়াতে পার্লামেন্টের ২২৫ আসনের মধ্যে ১১৩ জনের সমর্থন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অনাস্থা ভোট ব্যর্থ করতে মাত্র ৭ এমপির সমর্থন দরকার বিক্রমাসিংহের। গত বছরও তার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হয়েছিল। কিন্তু সেবারের ভোটাভুটিতে তিনি উতরে গিয়েছিলেন।

এদিকে বাজেট অধিবেশনের জন্য ৫ নভেম্বর থেকে দেশটির নতুন সংসদ অধিবেশন বসার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই পার্লামেন্টের সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিরোধীদের অভিযোগ, পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বাড়াতে আগামী দুই সপ্তাহ এমপিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরবে ক্ষমতাসীন জোট। অর্থ ঢেলে তাদের জোটে ভেড়ানোর চেষ্টা চলবে। ইতিমধ্যে ইউএনপির ২০ জনের বেশি এমপি রাজাপাকসেকে সমর্থন দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দলীয় পার্লামেন্ট সদস্য আনন্দ আলুথগ্যামেজ।

শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ইউএনপির ২১ এমপি রাজাপাকসেকে সমর্থন দিতে প্রস্তুত।’ তবে পার্লামেন্টে শ্রীলংকান মুসলিম লীগের ৭ এমপি বিক্রমাসিংহেকে সমর্থন দেবেন বলে জানিয়েছেন। ফলে আগামী দিনগুলোতে সংসদ সদস্যরা পাল্টাপাল্টি পক্ষ ত্যাগের খেলায় মেতে থাকবেন।

আমি এখনও বৈধ প্রধানমন্ত্রী : দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সফরে থাকা অবস্থাতেই বিক্রমাসিংহে বরখাস্ত হওয়ার খবর পান। মধ্য ডানপন্থী ইউএনএফ দলের এ নেতা পরে প্রেসিডেন্টের আদেশ মানতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী কেবল পার্লামেন্টই তাকে সরাতে পারে।

আমার এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। আমি এখনও শ্রীলংকার বৈধ প্রধানমন্ত্রী। আমি এ দায়িত্ব চালিয়ে যাব।’ এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপের পথে হাঁটবেন বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন দখলে রাখা বিক্রমাসিংহে।

সিরিসেনার এ পদক্ষেপকে ‘অসাংবিধানিক’ অ্যাখ্যা দিয়ে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনে ভাষণ দিতে চেয়েছিলেন বিক্রমাসিংহের মন্ত্রিসভার সদস্য মঙ্গল সামারাবিরা ও মন্ত্রিসভার মুখপাত্র রাজিথা সেনারতেœ। সে সময় রুপবাহিনী টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়। টুইটারে রাজপাকসের নিয়োগকে ‘গণতন্ত্রবিরোধী অভ্যুত্থান’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন সামারাবিরা।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ পড়ার পর সমর্থকদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে রাজাপাকসে ‘ক্ষমতাচ্যুত’ বিক্রমাসিংহেকে ‘জনগণের রায়’ মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইউএনপি নেতা সংবিধান ও আইন মেনে নেবেন বলেও আশা তার।

প্রেসিডেন্ট থাকাকালে চীনপন্থি হিসেবে পরিচিত রাজাপাকসে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে ২৬ বছরের গৃহযুদ্ধ শেষে দেশ পুনর্গঠনের নামে বেইজিংয়ের কাছ থেকে বিপুল বিনিয়োগ সহায়তা নিয়েছিলেন।

এ সহায়তা পরে দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে ঋণের ভারেও জর্জরিত করে তোলে। যে কারণে কলম্বো পরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি কৌশলগত সমুদ্রবন্দরের নিয়ন্ত্রণ চীনের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়েছে বলেও অভিযোগ ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ পড়ার পর সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে রাজাপাকসে ‘ক্ষমতাচ্যুৎ’ বিক্রমসিংহকে ‘জনগণের রায়’ মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইউএনএফ নেতা সংবিধান ও আইন মেনে নেবেন বলেও আশা তার।

শ্রীলঙ্কার সরকারকাঠামো অনেকটাই ফ্রান্সের মতো। এখানে প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টের নেতৃত্বে থাকলেও নির্বাহী ক্ষমতা থাকে প্রেসিডেন্টের হাতে।

Bootstrap Image Preview