Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

চুরি করে মাকে মিষ্টি দেওয়ায় বাবাকে মারধর, গ্রেফতার ছেলে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০১৮, ০৬:৫১ PM
আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮, ০৬:৫১ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


সামাজিক মাধ্যমে গত কয়েকদিনে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে যে এক বয়স্ক ব্যক্তিকে মারধর করছেন এক ব্যক্তি। এক দিন নয়, প্রায় প্রতি দিনই বাবাকে মারধর করতেন প্রদীপ বিশ্বাস। পরিবারের অন্য সদস্যদের পাশাপাশি অশোকনগরের ওই যুবকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন প্রতিবেশীদের একটা বড় অংশ।

বৃহস্পতিবার ধৃত প্রদীপ বিশ্বাসকে বারাসত জেলা আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁকে শর্ত সাপেক্ষে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে অশোকনগর থানার পুলিশ।

বহু মানুষ ভিডিওটি শেয়ার করছেন সামাজিক মাধ্যমে। ভিডিওটি শেয়ার করে জানতে চাইছেন ঘটনাটি কোথায় ঘটেছে। ঘটনা হল, এই ভিডিওটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার অশোকনগরের বিল্ডিং মোড় এলাকার ঘটনা এটি।

যে বয়স্ক ব্যক্তিকে মারা হচ্ছে, তাঁর নাম মানিক লাল বিশ্বাস; আর যে মারছে, সেই ছেলের নাম প্রদীপ বিশ্বাস। দুর্গাপুজোর দশমীর পরে নিজের অসুস্থ স্ত্রীকে সামান্য এক টুকরো মিষ্টি মুখে তুলে দিয়েছিলেন মানিকলাল বিশ্বাস। ছেলেকে লুকিয়েই স্ত্রীর মুখে বিজয়ার মিষ্টি তুলে দিয়েছিলেন, কিন্তু সেটা দেখতে পেয়ে যান ছেলে। তারপরেই বাবাকে মারধর শুরু হয়।

কীভাবে ছড়িয়ে পড়লো ঘটনা?

গোটা ঘটনা প্রতিবেশীদের মধ্যে কেউ ভিডিও করে নেন, তারপরে সেটি দুদিন আগে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।

ওই এলাকারই এক ছাত্র প্রশান্ত মল্লিক বলছিলেন, "আমি যেহেতু ওই এলাকাতেই থাকি, তাই এক বন্ধু আমাকে ট্যাগ করে ভিডিওটা ফেসবুকে শেয়ার করেছিল। দেখে তো প্রথমে শিউরে উঠেছিলাম! মাকে মিষ্টি খাওয়ানোর জন্য বাবাকে এভাবে কেউ মারতে পারে, বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। তারপরেই আমরা এলাকার ছেলেরা ওই বাড়িতে যাই।"

পাড়ার ছেলেদের দেখে প্রথমে প্রদীপ বিশ্বাস নিজের কৃতকর্মের অজুহাত দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু তারপরে ক্ষমা চাইতে থাকেন। ততক্ষণে খবর গেছে পুলিশেও। অশোকনগর থানার পুলিশ ছেলে আর বাবা-র সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তার পরে ছেলে প্রদীপ বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করেছে।

"ওঁদের বাড়ির আশেপাশে যারা থাকে, তারা আমাদের বলেছে যে মাঝে মাঝেই নাকি বাবাকে মারধর করেন ওই ভদ্রলোক। এতদিন কোনও প্রমাণ কারও হাতে ছিল না, তাই পারিবারিক বিবাদের মধ্যে পাড়ার লোক ঢুকতে চায় নি। কিন্তু এই ঘটনাটার ভিডিওরেকর্ডিং হয়ে যাওয়ায় এবার পাড়ার লোকও মুখ খুলেছে," বলছিলেন স্থানীয় ছাত্র প্রশান্ত মল্লিক

আজ, বৃহস্পতিবার, প্রদীপ বিশ্বাসকে আদালতে তোলা হয়েছে। যাকে মারধর করে ছেলে গ্রেপ্তার হল, সেই বাবা মানিকলাল বিশ্বাসও গেছেন আদালতে।

পুলিশ বলছে, অশোকনগর পুরসভার কর্মী প্রদীপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বাবা-মা এবং প্রবীণ ব্যক্তিদের দেখভাল সংক্রান্ত যে আইন রয়েছে, সেই আইনেই মামলা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রগুলি বলছে, ভদ্রলোককে জেরা করে মনে হয়েছে যে তিনি নিজের ভুল বোধহয় বুঝতে পেরেছেন। বারে বারেই ক্ষমা চাওয়ার কথা বলছেন তিনি। তবে যে অপরাধ করেছেন মি. বিশ্বাস, তাতে বড়জোড় ছয়মাস জেলের সাজা হওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

কেন এমন ঘটনা?

প্রবীন ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করেন এমন একজন চিকিৎসক ডা অমিতাভ দে সরকার বলছিলেন, "এরকম বেশীরভাগ ঘটনারই সূত্রপাত হয় সম্পত্তিকে কেন্দ্র করে। যতদিন বাবা-মায়ের হাতে অর্থ বা সম্পত্তি রয়েছে - তা সে তাঁর বেতন হোক বা বাড়ির মালিকানা - ততদিনই অনেক ছেলে বা পুত্রবধূর কাছে প্রবীনদের দাম। টাকা না থাকলেই আর প্রবীন ব্যক্তির কোনও দাম নেই। তারপরেই শুরু হয় হেনস্থা, যার চূড়ান্ত রূপ হল এই মারধরের ঘটনা। সেই জন্য আমার সব বয়স্ক রোগীদের পরামর্শ দিই, যাতে জীবিত অবস্থায় ছেলে মেয়ে বা কাউকেই সম্পত্তি লিখে না দেন। উইল করা উচিত, যাতে মৃত্যুর পরে সম্পত্তির ভাগাভাগি হবে।"

বাবা - মা কে সামান্য কারণে মারধরের ঘটনা এই প্রথম যে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হল, তা নয়।

কিছুদিন আগেই কলকাতার একটি মধ্যবিত্ত পাড়ার এক নারীকে দেখা গিয়েছিল প্রায় নুয়ে পড়া চেহারার শাশুড়িকে চড়, লাথি মারছেন, তারপরে লাঠি দিয়েও প্রহার করা হচ্ছিল। কারণ অতি সামান্য - শাশুড়ি কেন পাড়ার বিভিন্ন বাড়ি থেকে ফুল তুলে এনেছিলেন!

মারধর না করা হলেও বাবা - মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া, কোথাও বেড়াতে গেলে মাকে বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে রেখে দিয়ে যাওয়া - এসব ঘটনার খবর মাঝে মাঝেই সংবাদে প্রকাশ পায়।

এছাড়া নানা আদালতেও অনেক প্রবীণ ব্যক্তিই মামলা করতে বাধ্য হন নিজের সন্তানের বিরুদ্ধেই - কখনও বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ আসে, কখনও বা খেতে পরতে না দেওয়ার অভিযোগ। তবে মাকে মিষ্টি দেওয়ার অপরাধে বাবাকে সমানে চড় মারার ঘটনা খুব একটা দেখা যায় নি এর আগে।

Bootstrap Image Preview