Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ রবিবার, মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আওয়ামী লীগে মনোনয়ন দৌড়ে পলক-শফিক, বিএনপিতে এগিয়ে দাউদার মাহমুদ

নাটোর-৩ সিংড়া সংসদীয় আসন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০১৮, ০৪:৪৭ PM
আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮, ০৪:৫৩ PM

bdmorning Image Preview


মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকী, সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি

নাটোর-৩ সিংড়া সংসদীয় আসনটি চলনবিল অধ্যুষিত নাটোর জেলার বৃহৎ উপজেলা এটি। লোকসংখা প্রায় ৫ লাখ। বর্তমানে এ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ৪০০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার সংখ্যা বেশি। এ আসনে উভয় জোটের প্রায় এক ডজন প্রার্থী রয়েছে, যারা ইতিমধ্যে উপজেলাব্যাপী নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন।

এ আসনটি দীর্ঘ ৩৭ বছর আওয়ামী লীগের বেদখলে ছিলো। ১৯৭৩ সালের পর প্রথমবারের মতো নবম সংসদ নির্বাচনে বর্তমান এমপি জুনাইদ আহমেদ পলক বিজয়ের মাধ্যমে আসনটি বিএনপি জোটের হাতছাড়া হয়। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. জুনাইদ আহমেদ পলক ও সিংড়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক ভিপি শফিকুল ইসলাম শফিক। এ আসনে বিএনপির প্রায় হাফডজন প্রার্থী থাকলেও এগিয়ে রয়েছেন তরুণ নেতা, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দাউদার মাহমুদ।

দেশের বৃহত্তম প্রাকৃতিক জলাধারা চলনবিলের নাটোর-৩ সিংড়া আসন। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পিছিয়ে পড়া এই জনপদ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে এর আগে উন্নয়নের বীজ বপন করেছিল বিএনপি-জামায়াত। চলনবিল অধ্যূষিত এই আসনে রাজনীতিতে বিএনপি-জামায়াতের শক্ত অবস্থান থাকলেও ইতিমধ্যে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছে আওয়ামী লীগ। ১৯৭৩ সালের পর জাতীয় পার্টি ও জামায়াত-বিএনপির দখলে ছিল আসনটি। এ আসনে ১৯৯১ সালে জামায়াত, ১৯৯৬ সালে বিএনপি, ২০০১ সালে পুনরায় বিএনপি জয়ী হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এলাকার সন্তান হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন সাবেক ভিপি এবং তৎকালিন সময়ের উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি নবম সংসদের সর্বকনিষ্ঠ সাংসদ নির্বাচিত হোন। সংসদ সদস্য হয়ে তিনি এলাকার ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছেন। তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে সারাদেশের পরিচিত মুখ। সিংড়ার উন্নয়নে ও নজর কেড়েছেন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সিংড়া উপজেলার প্রথম মন্ত্রী হিসেবে নিজের নাম লেখান। জুনাইদ আহমেদ পলক দলের মধ্যে একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করায় দলের ভিতরে বর্তমানে বিরোধ রয়েছে। দলের সিনিয়র নেতাদের অভিযোগ দলীয় কর্মকাণ্ডে তেমনভাবে তাদের ডাকা হয় না।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. ওহিদুর রহমান শেখ জানান, ৩৭ বছরের তুলনায় বিগত ১০ বছরে সিংড়ায় সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে ২০০ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণ, শতাধিক ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে সিংড়া-তাড়াশ-বারুহাস রাস্তা, ২ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সিংড়া বাসস্ট্যান্ডে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, ডায়াবেটিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, কেন্দ্রীয় মসজিদ নির্মাণ।

এছাড়া শতাধিক স্কুল-কলেজের ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। প্রায় ৩’শ কোটি টাকা ব্যয়ে চলনবিল ডিজিটাল সিটি নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। যেখানে হাইটেক পার্ক, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, টিটিসি সেন্টার ও শেখ কামাল ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মিত হবে। তা ছাড়া দলকে সুসংগঠিত করতে গত ৫ বছরে উপজেলা আওয়ামী লীগের ৪৮ টি সভা সম্পন্ন করেছেন বলে তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন, বিগত সকল সময়ের চেয়ে সিংড়ায় বর্তমানে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ, ছোটখাট অভিমান থাকতে পারে তবে তা সাময়িক।

বর্তমান সংসদ সদস্য এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সিংড়ায় আওয়ামী লীগ নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে দলের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সকলের ঐক্যবদ্ধ কার্যক্রমে বিএনপি-জামায়াতের এই দূর্গটিকে তছনছ করে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বানানো হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনে দলের নেতাকর্মী নৌকা প্রতীকের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। তা ছাড়া নিরাপদ, শান্তি ও উন্নয়নের সিংড়া গড়তে জনগণের সাথে আগামীতেও কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন তিনি।

পলকের নেতৃত্বের ব্যাপারে সরাসরি কেউ কিছু না বললেও দলের প্রবীণ নেতারা মনে করেন, পলক তরুণ পরিবেষ্টিত হয়েই এলাকায় রাজনীতি করেন। দলের মধ্যে এখনো আঞ্চলিক প্রভাব নিয়ে উপদলীয় অনেক কোন্দল রয়েছে। যেটা আগামী নির্বাচনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এজন্য দলের অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

তবে গুঞ্জন রয়েছে নৌকা প্রতীকের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম শফিক। মার্জিত ও বিনয়ী শফিক গত বছর বন্যার সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জন্য অপেক্ষা না করে তার নেতৃত্বে বাঁধ তৈরির মাধ্যমে কয়েক হাজার একর জমির ফসল রক্ষা করে আলোচনায় আসেন তিনি। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াও সিংড়ায় এসে শফিকের কাজের প্রশংসা করেন। ১৯৯৬ সালে সরকারি গোল-ই আফরোজ কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও ১৯৯৮ সালে একই কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। এছাড়া ২০০৯ সালে সিংড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তাই দলের নেতা-কর্মীদের অনেকেই তাকে এমপি হিসেবে পেতে চায়। আর এ আসন থেকে পরপর দু'বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করে একক সিদ্ধান্ত নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলামের শোক দিবস উপলক্ষে সাঁটানো পোস্টার প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে চাপা ক্ষোভ। তাই আসনটিতে ইতিমধ্যে পলকের বিকল্প হিসেবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিককে নিয়ে ভাবছেন কোনো কোনো সিনিয়র নেতা। এলাকায় শিক্ষা ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য ক্ষাতে শফিকের অসামান্য অবদান রয়েছে।

সম্প্রতি সিংড়া সরকারি গোল-ই আফরোজ কলেজের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির আগমণ ঘটে, সেখানে শফিককে ডাকা হয়নি। কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক একজন সভাপতি ও কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক একজন নির্বাচিত ভিপিকে সেখানে না ডাকায় এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, সিংড়ার আওয়ামী লীগ পরিবারগুলো খুবই অবহেলিত। তাদের কোনো মূল্যায়ন করা হয় না। এখানে বিতর্কিত ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেয়া হয়।

প্রতিটি মানুষ বড় হওয়া বা বড় পদের প্রত্যাশা করেন। কারো বড় হওয়ার পথ অন্যকে ছোট করা নয়। আমার প্রতি এলাকার মানুষের আস্থা ও ভালবাসা রয়েছে।

এ আসনে বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছে নবীন-প্রবীণ নেতারা। সবাই ছুটছেন হাইকমান্ডের কাছে। নির্বাচনে সবাই দলীয় মনোনয়নে আশাবাদী। তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন।

গোলাম মোর্শেদ ছাড়াও এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাড. মজিবর রহমান মন্টু, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দাউদার মাহমুদ। উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক ভিপি শামীম হোসেন। জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীন। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম দলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট এম ইউসুফ আলী।

এছাড়াও এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সিংড়া পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনু ও উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ডা. নজরুল ইসলাম।  

জাতীয় পার্টি থেকে মহাজোটের মনোনয়ন চাইবেন উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক প্রকৌশলী আনিসুর রহমান ও মাওলানা আনিছুর রহমান আনসারী, ওয়ার্কাস পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান।
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী দলের উপজেলা শাখার সেক্রেটারী শাহ্ মোস্তফা ওয়ালিউল্লাহ সেলিম। বিকল্পধারার জেলা কমিটির আহ্বায়ক সাবেক ভিপি রকিব উদ্দিন ও সিংড়া উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন আলীরাজ।

এ আসনে বিএনপির প্রায় হাফডজন প্রার্থী থাকলেও এগিয়ে রয়েছেন তরুণ নেতা, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দাউদার মাহমুদ। দাউদার মাহমুদ এর আগে পৌর বিএনপির সভাপতি, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি উপজেলা ২০দলীয় জোটের সদস্য সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আবুল কালাম আজাদ এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র প্রয়াত শামীম আল-রাজীর মৃত্যুর পর এলাকায় সুখ-দুঃখের প্রতিচ্ছবি এখন দাউদার মাহমুদ। দাউদার মাহমুদ অধিকাংশ সময় সংগঠন নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। তরুণপ্রার্থী হিসেবে এলাকায়তার সমাদরও ব্যাপক। তিনি দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে একাধিকবার কারাবরণ করেন।

বিএনপির দুঃসময়ের কাণ্ডারী হিসেবে পরিচিত দাউদার মাহমুদ বলেন, দীর্ঘ ২২ বছর যাবৎ আমি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। ছাত্র রাজনীতি ও বিএনপির দুঃসময়ে দলের নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি। অবহেলিত চলনবিলবাসীর চাহিদা পূরণে তরুণ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইবো এবং আমি আশা করি দলের মনোনয়ন আমিই পাবো।

তিনি আরো বলেন, আমি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করি। সিংড়ায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।

Bootstrap Image Preview