Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পাঁচ দেশ মিলে হত্যা করেছে খাসোগিকে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০১৮, ০৪:৩৯ PM
আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮, ০৪:৩৯ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


যে যাই বলুক, প্রকৃত সত্য হচ্ছে, খ্যাতনামা সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশেই।

হত্যার উদ্দেশ্যে যে কিলিং স্কোয়াড তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পাঠানো হয়েছিল, তাদের সবাই তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। সবচেয়ে দক্ষ কিছু লোক দিয়ে ভয়ঙ্কর এ দলটি গঠিত। হত্যার পুরো প্রক্রিয়া অর্থাৎ খাসোগিকে কখন ও কীভাবে হত্যা করা হবে তার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়েছে। হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা তার নির্দেশেই হয়েছে।

মঙ্গলবার এক নিবন্ধে খাসোগি হত্যার জন্য সরাসরি যুবরাজ মোহাম্মদকে দায়ী করেছেন তুরস্কের সরকারপন্থী দৈনিক ইয়েনি সাফাকের সম্পাদক, খ্যাতনামা সাংবাদিক ও কলাম লেখক ইবরাহিম কারাগুল।

খাসোগির এই হত্যাকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্যে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় সৌদি আরব ও তার মিত্রদের বৃহত্তর প্রকল্পের অংশ। যে যাই বলুক, প্রকৃতপক্ষে খাসোগির এই হত্যার মিশন চালাতে সৌদি, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসরীয় এবং সেইসঙ্গে ইসরাইলি গোয়েন্দারা একযোগে কাজ করেছে। এ হত্যাকাণ্ডের কথা আগে থেকেই জানত মার্কিন গোয়েন্দারা।

তাদের জ্ঞাতসারে এবং সংশ্লিষ্টতায় এটা সংঘটিত হয়েছে। খাসোগির হত্যার মতো একই ধরনের ঘটনা এর আগে আরও অনেক দেশেই ঘটানো হয়েছে। এবার ঘটল তুরস্কে। ভূমধ্যসাগরের পাড়ের শক্তিশালী এ মুসলিম দেশটাকে সচেতনভাবেই টার্গেট করা হয়। কিন্তু এবার তারা ফেঁসে গেছে। একেবারে হাতেনাতে ধরা পড়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার বলয় আরও বিস্তৃত করা এবং তা সুসংহত করার লক্ষ্যে সম্পূর্ণ ‘নতুন ও বৃহত্তর প্রকল্প’ নিয়ে এগোচ্ছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন যায়েদ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জারেড কুশনার। যারাই এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে কথা বলছে বা সৌদি রাজতন্ত্রের বিরোধিতা ও সমালোচনা করছে তাদেরকেই চিরতরে চুপ করিয়ে দেয়া হচ্ছে।

এভাবে টার্গেট করেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বহু সমালোচকের কণ্ঠ। খাসোগি হলেন এর সর্বশেষ শিকার। এবার যদি এই দুর্বৃত্তদের মুখোশ উন্মোচন করা না হয়, যদি জবাব না দেয়া হয়, একইভাবে হত্যা করা হবে আরও অনেককেই।

আসল ঘটনা হচ্ছে, এই মানুষগুলো শুধু সৌদি নাগরিকেই সীমাবদ্ধ নয়। এই তালিকায় রয়েছেন প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের নাগরিক।

জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠিত করতে এক কাতারে মিলেছে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র। জেরুজালেমের সঙ্গে সঙ্গে জোর প্রস্তুতি চলছে মক্কা ও মদিনার ওপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার। এর পেছনে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করছেন সৌদি যুবরাজ পরিবার, আমিরাতের শাসক বিন যায়েদ, মিসরের স্বৈরশাসক আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা সত্ত্বেও গত বছর ফিলিস্তিনের জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেন ট্রাম্প। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের মধ্যে একমাত্র তুরস্কই এর জোর প্রতিবাদ করে। সেইসঙ্গে ওআইসি ও জাতিসংঘকে সঙ্গে নিয়ে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। প্রেসিডেন্ট এরদোগানের এই কঠোর অবস্থানে উক্ত প্রকল্পের বাস্তবায়ন আরও জোরদার করা হয়েছে।

প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব খর্ব করা এবং তুরস্ককে ঘায়েল করা। ইতিমধ্যে প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ শুরু হয়েছে। সৌদিসহ পুরো অঞ্চলকে রক্ষণশীল ভাবধারা থেকে টেনে বের করে মার্কিন ও ইসরাইলি ভাবধারায় প্রতিষ্ঠা করাই এ ধাপের প্রধান কাজ।

‘সমাজ সংস্কার’ ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে এর বাস্তবায়ন শুরু করেছেন সৌদি ও আমিরাতি এ দুই যুবরাজ। দ্বিতীয় ধাপের পরিকল্পনা হচ্ছে, আরব ব্লককে ইরানের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া, তুরস্কের হাত আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলা এবং প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও তার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা। ইরানকে ঠেকাতে সিরিয়া ও ইয়েমেনে ইতিমধ্যে যুদ্ধাভিযান শুরু করেছে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট।

সৌদি যুবরাজ ও আমিরাতি শাসক বিন যায়েদের এই প্রকল্প শুধু খাসোগি হত্যার মতো ঘটনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটা আরও গভীর ও আরও দীর্ঘমেয়াদি।

এ হত্যাকাণ্ডের চেয়ে আরও ভয়ানক যেটা সেটা হচ্ছে পারস্য উপসাগর ও লোহিত সাগরের মাঝের পুরো মানচিত্রই বদলে ফেলার পরিকল্পনা। বিশাল এ পরিকল্পনা এই অঞ্চলের সব সরকারকেই নিজেদের দলভুক্ত করতে চান তার।

Bootstrap Image Preview