Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

খাসোগজির মতো সৌদি রাজতন্ত্রের সমালোচনা করায় আরো যারা এখনো নিখোঁজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক-
প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০১৮, ০২:০৬ PM
আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮, ০২:০৬ PM

bdmorning Image Preview


জামাল খাসোগজি হত্যার পর বিশ্ব রাজনীতিতে সৌদি আরবকে নিয়ে অালোচনার ঝড় বইছে এখন। কিন্তু শুধু কি জামাল খাসোগজিই হত্যার শিকার হয়েছেন,  ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইউরোপে বসবাসরত তিনজন সৌদি রাজপুত্র নিখোঁজ হয়ে যান যাদের প্রত্যেকেই সৌদি সরকারের সমালোচক ছিলেন।

২০০৩ সালের ১২ই জুন সকালের ঘটনা। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের বাইরে একটি প্রাসাদে ঢুকতে দেখা যায় একজন সৌদি রাজপুত্রকে।তার নাম সুলতান বিন তুর্কি বিন আব্দুল আজিজ। প্রাসাদটিও রাজপুত্রের আত্মীয় প্রয়াত সৌদি বাদশাহ ফাহাদের। বাদশাহ ফাহাদের ছেলে রাজপুত্র আবদুল আজিজ বিন ফাহাদের সাথে সকালের নাস্তা খেতে প্রাসাদে যান সুলতান। একপর্যায়ে সৌদি সরকারের সমালোচক সুলতানকে নিজ দেশ সৌদি আরবে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন আব্দুল আজিজ। সুলতান ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানালে তখন আব্দুল আজিজ একটি ফোন করতে যান। তখন ঐ কক্ষে থাকা দ্বিতীয় ব্যক্তি, সৌদি আরবের ইসলাম ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী শেখ সালেহ আল-শেখ, কক্ষ ছেড়ে চলে যান। কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখোশ পরা কয়েকজন ঘরে ঢুকে এবং সুলতানকে চেতনাহীন করে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়।

অজ্ঞান অবস্থাতেই সুলতানকে জেনেভা বিমানবন্দরে নেয়া হয় এবং সেখানে অপেক্ষারত একটি বিমানে ওঠানো হয় তাঁকে। অনেক বছর পর সুইজারল্যান্ডের একটি আদালতে ঠিক এভাবেই সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করছিলেন সুলতান। পরে জেনেভার হোটেলে থাকা সুলতানের সঙ্গীসাথীদের জানানো হয় যে সুলতানকে রিয়াদ নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাই তাদের আর কোনো প্রয়োজন নেই।

কিন্তু সুলতান কী এমন করেছিলেন যেজন্য তাকে এভাবে অপহরণ করতে হলো? সৌদি আরবে ফেরত গিয়ে সুলতানের ভাগ্যে কি ঘটেছিল তা জানা না গেলেও ধারণা করা হয় তাঁকে কারাগারে এবং ঘরে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। দীর্ঘসময় কারাগারে এবং বাড়িতে আটক থাকার পর সুলতানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে সম্মত হয় রাজপরিবার।

২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে সুইস আদালতে আব্দুল আজিজ বিন ফাহাদ এবং শেখ সালেহ আল-শেখ এর বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করেন সুলতান। প্রথমবারের মতো কোনো সৌদি রাজপরিবারের সদস্যের আরেক রাজপরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে পশ্চিমা আদালতে মামলা দায়েরের ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

সেখান থেকে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ইউরোপ যান সুলতান। চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ইউরোপে পৌঁছানোর পর থেকেই সৌদি সরকারের সমালোচনা করে বিভিন্ন ইউরোপিয় গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে শুরু করেন সুলতান। তার সাক্ষাৎকারে রাজপরিবারের সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেন তিনি।

এরপর ২০১৬ সালে সুলতান এবং তাঁর ১৮ জন সফরসঙ্গীকে প্যারিস থেকে কায়রো নিয়ে যাওয়া হবে বলে একটি বিমানে উঠিয়ে রিয়াদে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর থেকে আর কোনে খোঁজ পাওয়া যায়নি সুলতানের।

রাজপুত্র তুর্কি বিন বান্দার একসময় সৌদি পুলিশের একজন মেজর ছিলেন, যিনি রাজপরিবারের সদস্যদের পুলিশি সেবা দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। কিন্তু উত্তরাধিকারের দ্বন্দ্বে পরিবারের সদস্যদের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়লে একসময় কারাদণ্ড দেয়া হয় তাকে। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ২০১২ সালে প্যারিসে চলে যান তিনি। সেখানে গিয়েই সৌদি আরবের সংস্কার চেয়ে ইউটিউবে ভিডিও পোস্ট করা শুরু করেন তিনি।

রাজপুত্র সুলতানের মত তুর্কিকেও আলোচনার মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তবে আলোচনার মাধ্যমে রাজপুত্র তুর্কির মন গলাতে পারেনি সৌদি সরকারি কর্মকর্তারা। ২০১৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ইউটিউবে ভিডিও পোস্ট করে যান তুর্কি। সেবছরের শেষদিকে হঠাৎই উধাও হয়ে যান তিনি। তারপর এখন পর্যন্ত রাজপুত্র তুর্কি বিন বান্দার এর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

রাজপুত্র তুর্কি নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার কাছাকাছি সময় একই ধরণের পরিণতি হয় আরেকজন রাজপুত্রসউদ বিন সাইফ আল-নাসেরের।ইউরোপে বিলাসবহুল জীবনযাপনে উৎসাহী ছিলেন এই রাজপুত্র। ২০১৪ সাল থেকে টুইটারে সৌদি রাজতন্ত্রকে কটাক্ষ করে পোস্ট দেয়া শুরু করেন সৌদ। পরের বছর বাদশাহ সালমানকে ক্ষমতাচ্যুত করার উদ্দেশ্যে অজ্ঞাতনামা একজন সৌদি রাজপুত্রের লেখা দু'টি চিঠি ফাঁস হলে ঐ যুবরাজের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন সৌদ।

এক টুইটে ঐ চিঠির বিষয়বস্তুকে গুরুত্বের সাথে নিতে সৌদি জনগণকে আহ্বান জানান সৌদ। এর কিছুদিন পর থেকে তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টটিই নিরব হয়ে যায়।

জার্মানিতে পালিয়ে যাওয়া আরেকজন সৌদি রাজপুত্র খালেদ বিন ফারহানের ধারণা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক বৈঠকের কথা বলে কৌশলে সৌদকে রিয়াদে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। রাজপুত্র খালেদ বলেন, "সৌদি রাজতন্ত্রের সমালোচনা করা আমার চারজনই ছিলাম ইউরোপে, যাদের মধ্যে তিনজনকেই অপহরণ করা হয়েছে।" রাজপুত্র খালেদ আশঙ্কা করছেন নিকট ভবিষ্যতে তাঁকেও অপহরণ করা হতে পারে।

Bootstrap Image Preview