Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

উইঘুরে মুসলিমদের সংশোধনের জন্য পৃথিবীর বৃহৎ বন্দীশিবির চীনে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:২৯ PM
আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:২৯ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


চীনের উইঘুর সম্প্রদায় এমনই একটি নির্যাতিত গোষ্ঠী। চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের সংশোধনের জন্য পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ বন্দীশিবির গড়ে তুলেছে কর্তৃপক্ষ। উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে তৈরি করা এক প্রতিবেদনে বিবিসির জন সাডওয়ার্থ লিখছেন, আঞ্চলিক রাজধানী উরুমচির কাছেই দাবাংচেং-এ এরকম একটি শিবিরে সম্প্রতি ব্যাপক সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এই শিবিরটিতে কমপক্ষে এগারো হাজার বন্দীকে রাখা যাবে।

অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক একটি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান এ কথা জানিয়েছে। তবে এর প্রকৃত ধারণক্ষমতা এক লক্ষেরও বেশি হতে পারে।

চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা পশ্চিম শিনজিয়াং অঞ্চলে বিনাবিচারে লক্ষ লক্ষ মুসলিমকে আটকে রেখেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এসব শিবিরে লোকজনকে জোর করে আটকে রাখা হচ্ছে। কিন্তু চীনের বক্তব্য, এখানে উইঘুরদের শিক্ষা এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেয়ার মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মীয় উগ্রপন্থা দমন করা হয়।

দাবাংচেংয়ে যে শিবিরটি গড়ে তোলা হয়েছে- তা ২০১৫ সালেও ছিল একটা ফাঁকা জায়গা। কিন্তু তিন বছর পরে একই জায়গার উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে, সেখানে এক বিশাল দেয়াল-ঘেরা স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।

এর চারদিকে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ প্রাচীর, রক্ষীদের জন্য তৈরি হয়েছে ১৬টি চৌকি। ভেতরে গড়ে উঠছে অনেকগুলো বিশাল বিশাল চারতলা ভবন। শিনজিয়াংয়ে এরকম অনেকগুলো কারাগারের মতো স্থাপনা তৈরি হয়েছে গত কয়েক বছরে। এখানে সাংবাদিকদের পক্ষে কারো সাথে কথা বলা প্রায় অসম্ভব। শিনজিয়াংয়ে ফোন করে সাধারণ লোকের সাথে কথা বললে ব্যাপারটা কি তার একটা আন্দাজ পাওয়া যায়।

বিবিসির জন সাডওয়ার্থ একটি হোটেলের মালিককে প্রশ্ন করেছিলেন, ১৬টি প্রহরী-চৌকি ওয়ালা ওই স্থাপনাটা কি? তিনি জবাব দিলেন, এটা একটা সংশোধনমুলক স্কুল। সেখানে হাজার হাজার লোক আছে। তাদের চিন্তা-ভাবনায় কিছু সমস্যা আছে।

চীন সবসময়ই বিনাবিচারে মুসলিমদের আটকে রাখার কথা অস্বীকার করে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় টিভিতে এসব স্কুলের ছাত্রদের সাক্ষাৎকার প্রচার হয়। কিন্তু এরা কি জরিপের জন্য নির্বাচিত হয়েছে, কতদিন ধরে এসব কোর্স চলবে তার কোন উল্লেখ থাকে না।

তবে এদের কথাবার্তা থেকে একটা কিছু আন্দাজ করা যায়। এদের সাক্ষাৎকারগুলো অনেকটা স্বীকারোক্তির মতো। একজন বলছেন, আমি আমার ভুলগুলো গভীরভাবে উপলব্ধি করেছি। আমি বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর একজন ভালো নাগরিক হয়ে উঠবো।

আমরা জানতে পারছি এসব স্থাপনার উদ্দেশ্য উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই করা - যাতে আইনি তত্ত্ব, কর্মদক্ষতা এবং চীনা ভাষা ইত্যাদি শিক্ষা দেয়া হয়। এগুলো শুধুই এ প্রদেশের মুসলিম সংখ্যালঘুদের জন্য; যাদের মাতৃভাষা চীনা নয় তারা একধরণের তুর্কিক ভাষা বলে।

শিনজিয়াংয়ে উইঘুরদের সংখ্যা ১ কোটিরও বেশি। তাদের সাথে মধ্য এশিয়ার জনগোষ্ঠীরই মিল বেশি, চীনের সংখ্যাগরিষ্ঠ হ্যান জনগোষ্ঠীর সাথে তাদের সংস্কৃতির অনেক তফাৎ। এসব সংশোধনী স্কুলের নিজস্ব পোশাক আছে। ছাত্রীদের কারো মাথায় হিজাব নেই।

গত এক দশকে শিনজিয়াংয়ে দাঙ্গা, আন্ত-সম্প্রদায় সহিংসতা, আক্রমণ এবং পুলিশী ব্যবস্থার কারণে এখানে শত শত লোক নিহত হয়েছে। বেইজিংয়ের তিয়ানআনমেন স্কয়ারে একটি আক্রমণের ঘটনায় দু'জন এবং কুনমিংয়ের উইঘুরদের ছুরিকাঘাতে ৩১ জন নিহত হওয়ার দুটি ঘটনা চীনের শাসকশ্রেণীকে উদ্বিগ্ন করে তোলে।

এরপর শিনজিয়াংয়ে নানা রকম বিধিনিষেধ জারি হয়েছে। ইসলামী রীতিনীতি পালন- যেমন পুরুষদের দাড়ি রাখা, মহিলাদের হিজাব পরা, শিশুদের ধর্মশিক্ষা, বা ইসলামী শোনায় এমন নাম রাখা সীমিত করতে নানা আইনী পদক্ষেপ বলবৎ হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের রোজা রাখা বা মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ।

এখান থেকে শত শত লোক সিরিয়ায় জঙ্গী গ্রুপগুলোর হয়ে যুদ্ধ করতে গেছে এমন বিশ্বাসযোগ্য খবরের পর উইঘুররা কর্তৃপক্ষের সন্দেহের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। তাদের ওপর জারি হয়েছে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা।

হোতানে একটি বন্দীশিবিরে ছিলেন ২৯ বছর বয়স্ক আবলেত তুরসুন তোহতি। তাদের সকালে উঠিয়ে দৌড় করানো হতো। জোরে না ছুটতে পারলে পেটানো হতো। তিনি বলছেন, তাদের কমিউনিস্ট পার্টির প্রশংসাসূচক গান গাইতে হতো, আইন মুখস্থ করতে হতো। আবৃত্তি করতে ভুল হলে পেটানো হতো। এসব ক্যাম্পের সাবেক বাসিন্দাদের সবার মধ্যেই দেখা গেছে ব্যাপক ক্ষোভ।

এসব সংশোধন শিবিরে কোন অভিযোগ ছাড়াই আটক থাকা লোকদের কোন আইনী প্রক্রিয়ার শরণাপন্ন হবার সুযোগ নেই। চীন দাবি করে যে তাদের এসব কর্মসূচি সফল হয়েছে। কিন্তু এসব প্রকল্প নিয়ে ইতিহাসে উদ্বেগজনক দৃষ্টান্তের কোন অভাব নেই। বিবিসি বাংলা।

Bootstrap Image Preview