Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রাশিয়ার তৈরি অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র 'এস-৪০০', কি আছে এই ক্ষেপণাস্ত্রে?

হাসান বখস, কাতার প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০২:৩৪ PM
আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০২:৩৪ PM

bdmorning Image Preview


'এস-৪০০' রাশিয়ার তৈরি অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এটি যেমন একদিকে শত্রুর ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করতে পারে, অন্যদিকে নির্ভূলভাবে দ্রুত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতেও সক্ষম। সাম্প্রতিক সময়ে নিষেধাজ্ঞার হুমকি উপেক্ষা করে রাশিয়ার কাছে থেকে 'এস ফোর হান্ড্রেড' কেনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে বিভিন্ন দেশের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার আর প্রতিপক্ষকে দ্রুত ঘায়েল করার সক্ষমতার জন্যই 'এস ফোর হান্ড্রেড' কিনতে চাইছে বিভিন্ন দেশ।

হেলিকপ্টার, ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র কিংবা যুদ্ধ বিমান, আকাশে থাকা যে কোন লক্ষ্যবস্তুকে দ্রুত ধ্বংস করতে সক্ষম রাশিয়ার তৈরি অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা 'এস ফোর হান্ড্রেড'। এমনকি এটি মুহূর্তের মধ্যেই পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ বিমানও ভূ-পাতিত করতে পারে।

প্রথমে এর লক্ষ্য স্থির করা হয়। তারপর পুরো সিস্টেমটি মনিটরিং শুরু করে। গ্রীন সিগন্যাল পেলেই এটি ফায়ারিং শুরু করে। মাত্র ৫ মিনিটের প্রস্তুতিতেই লক্ষবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্রটি। এক কমান্ডারসহ তিনজন পুরো সিস্টেমটি নিয়ন্ত্রণ করে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানা হুমকি আর চোখ রাঙানীকে তোয়াক্কা না করেই, রাশিয়ার কাছ থেকে অত্যাধুনিক এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি কিনতে চুক্তি করেছে ভারত ও তুরস্ক। এস এস ফোর হান্ড্রেড কেনার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে চীন, সৌদি আরব, কাতার, ইরাকসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশ।

কী কারণে এ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এত জনপ্রিয়? আর কেনই বা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হুমকি অগ্রাহ্য করে, একের পর এক দেশ 'এস ফোর হান্ড্রেড' কিনতে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে যাচ্ছে? এমন সব প্রশ্নের জবাবে অস্ত্র বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, ৪০০ কিলোমিটার পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রটি, ৬০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুও ট্র্যাক করতে সক্ষম।

রাশিয়ার জন নীতি গবেষক ভ্লাদিমির ইভসিভ বলেন, 'এস থ্রি হান্ড্রেড' থেকে ফোর হান্ড্রেডের শক্তিমাত্রা অনেক বেশি। এর মাধ্যমে বিশাল এলাকার প্রতিরক্ষা করা সম্ভব। যা যেকোন দেশের সমর শক্তিকে কয়েকগুণ শক্তিশালী করবে। এ কারণেই সব দেশ এর মালিকানা চাইছে।

একবিংশ শতাব্দীর সাড়া জাগানো এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় রয়েছে একটি র‌্যাডার এবং ১৬টি মিসাইল ধারণে সক্ষম চারটি ট্যাঙ্কার। অত্যাধুনিক র‌্যাডারের মাধ্যমে এটি শত্রুপক্ষের মিসাইল, যুদ্ধ বিমান সনাক্ত করে। আর এরপরই মিসাইলের মাধ্যমে তা ধ্বংস করা হয়।

ভারতের অস্ত্র বিশেষজ্ঞ এয়ার কমোডর টি চান্দ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলেরও অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু সেগুলো সব যুদ্ধ বিমানের হামলাকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম নয়। 'এস ফোর হান্ড্রেড' এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে প্রতিপক্ষের যেকোন ধারণের হামলাকে প্রতিরোধ করতে পারে। আসলে অস্ত্র বাজার আরো সম্প্রসারণ এবং নিজেদের প্রতিরক্ষা খাতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই 'এস ফোর হান্ড্রেড' তৈরি করেছে রাশিয়া। 

'এস ফোর হান্ড্রেড' একসঙ্গে ৩০০টি লক্ষ্যবস্তু ট্রাক করতে পারে। আর ঘণ্টায় ১৭ হাজার কিলোমিটার বেগে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্রটি।

যুক্তরাষ্ট্রের সমর শক্তিকে টেক্কা দিতে ১৯৭৫ সালে, ৩০০ কিলোমিটার পাল্লার 'এস থ্রি হান্ড্রেড' ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রস্তুতের কাজ হাতে নেয় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর কিছুটা স্তিমিত হয় রাশিয়ার অস্ত্র অভিজাত্য। ফের ২০০৭ সালে উন্মোচন করা হয় 'এস ফোর হান্ড্রেড'। এখন ২০২০ থেকে ২২ সালের মধ্যে উন্মোচনের লক্ষ্যে, ৫০০ কিলোমিটার পাল্লার 'এস ফাইভ হান্ড্রেড' নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া।

Bootstrap Image Preview