সৌদি আরবের স্বেচ্ছানির্বাসিত ভিন্ন মতাবিলম্বী সাংবাদিক জামাল খাসোগির অন্তর্ধান ও কথিত হত্যাকাণ্ডে তোলপাড় শুরু হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। খাসোগি ইস্যু মধ্যপ্রাচ্য ছাড়িয়ে এখন উত্তপ্ত হয়েছে বিশ্ব রাজনীতি।
গত ২ অক্টোবর তুরস্কে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটে যাওয়ার পর থেকে তার হদিস নেই। অভিযোগ রয়েছে, ভিসা সংক্রান্ত কাজে তুরস্কে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেট কার্যালয়ে প্রবেশ করলে তাকে হত্যা করে একটি বিশেষ ঘাতক দল।
এ ঘটনা পশ্চিমের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্কেও প্রভাব ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্র এমনকি নিজের ঘনিষ্ঠ মিত্র সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে। তুরস্কে শুরু থেকেই দাবি করেছে, সৌদি সরকারের নির্দেশে কনস্যুলেটের ভেতরেই খুন করা হয়েছে এ সাংবাদিককে। নিখোঁজ হওয়ার ১৩ দিন পর গতকাল সোমবার তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে তদন্তের অনুমতি পান তুরস্কের তদন্ত কর্মকর্তারা।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, জামাল খাসোগির পুরো নাম জামাল আহমেদ খাসোগি। তার জন্ম ১৯৫৮ সালে মদিনায়। তিনি সৌদির আলোচিত অস্ত্র ব্যবসায়ী প্রয়াত আদনান খাসোগির ভাতিজা। জামাল খাসোগির চাচাতো ভাই দোদি আল ফায়েদ ছিলেন ব্রিটিশ রাজকুমারী ডায়ানার প্রেমিক। পরে তারা দু'জনেই প্যারিসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।
জামাল খাসোগি পড়াশুনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। সৌদি গেজেটের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করেছেন। আল আরব নিউজের সাবেক প্রধান সম্পাদক ছিলেন ওয়াশিংটন পোস্টের এ কলামিস্ট। সৌদি সংবাদপত্র আল ওয়াতানের সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি সৌদি থেকে পালিয়ে যান। তার অভিযোগ ছিল, সৌদি সরকার তাকে টুইটারে নিষিদ্ধ করেছে। সৌদি সরকারের সমালোচনা করে নিবন্ধও লিখেছিলেন তিনি। সৌদির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ও সৌদি বাদশাহর কড়া সমালোচক ছিলেন জামাল। ইয়েমেনে সৌদি হস্তক্ষেপেরও বিরোধিতা করেছেন তিনি। চলতি বছরের মে মাসে সৌদি নারী মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেফতার করলে কড়া সমালোচনা করেন জামাল খাসোগি।
অন্যদিকে, আল জাজিরার এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, সৌদি আরব ও আরব বিশ্বে নিজের প্রজন্মের সবচেয়ে প্রখ্যাত সাংবাদিক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একজন তিনি। প্রায় ৩০ বছর ধরে সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত তিনি।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এর আগে বলেছিছেন, খাসোগির সঙ্গে কী ঘটেছে, তা একবার স্পষ্ট হলে সরকারগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কীভাবে ‘যথাযথ উপায়ে’ প্রতিক্রিয়া জানাবে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, খাসোগির মৃত্যুর জন্য সৌদি আরব দোষী প্রমাণিত হলে যুক্তরাষ্ট্র ‘কঠিন শাস্তির’ ব্যবস্থা নেবে। তিনি জানান, এমন কিছু হলে তিনি ‘খুবই মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ হবেন’। তবে সৌদি আরবের সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি বাতিল করার বিষয়ে তিনি রাজি নন।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা করা হলে আমাদের নিজেদের শাস্তি দেওয়া হবে। তারা যদি আমাদের কাছ থেকে না কেনে, তাহলে রাশিয়া বা চীনের কাছ থেকে কিনবে।’