Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আসামে নাগরিকত্ব হারানোদের বাংলাদেশে পাঠানো হবে না : হাসিনাকে মোদি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ অক্টোবর ২০১৮, ১০:৪১ PM
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৮, ১০:৪১ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


আসামের জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা (এনআরসি) থেকে বাদ পড়াদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে না বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অাশ্বস্ত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম তথ্য জানিয়েছেন।

এইচ টি ইমাম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন যে, আসামের জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকাতে যাদের নাম নেই তাদেরকে আগামীতে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে না।

ঢাকায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের একদল প্রতিনিধিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই রাজনৈতিক উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার কাছে থেকেও ঢাকা একই ধরনের আশ্বাস পেয়েছে।

তবে কখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ আশ্বাস দিয়েছেন সেব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এইচ টি ইমাম।

প্রধানমন্ত্রীর এই রাজনৈতিক উপদেষ্টা আরও বলেছেন, আসামে এনআরসি ইস্যুতে যা ঘটতে তা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের নেতারাসহ লাখ লাখ মানুষে সেদেশে পাড়ি জমায়। এটা এখন সম্ভব নয়।

চলতি বছরের ৩০ জুলাই ভারতীয় নাগরিকত্বের চূড়ান্ত খসড়া তালিকা থেকে অাসামের প্রায় ৪০ লাখ মানুষের নাম বাদ দেয় প্রদেশের সরকার। আসামের ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেন (এনআরসি) কর্তৃপক্ষের তালিকা থেকে বাদ পড়ে তারা। প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে আসামে পাড়ি জমানো অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করার লক্ষ্যে ১৯৫১ সালের পর সেই সময় প্রথম নাগরিকত্বের তালিকা হালনাগাদ করে আসাম।

ওই সময় এনআরসির কর্মকর্তারা বলেন, এটি খসড়া তালিকা মাত্র। সুতরাং এখনই কাউকে গ্রেফতার অথবা নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে না। তবে সমালোচকরা বলেছেন, নাগরিকত্বের তালিকা থেকে বাদ পড়াদের অধিকাংশই প্রদেশের সংখ্যালঘু মুসিলম জনগোষ্ঠীর সদস্য এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত।

এনআরসি কর্তৃপক্ষ বলছে, ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে ৩ কোটি ২৯ লাখ আবেদন জমা পড়েছিল। এরমধ্যে যাচাই-বাছাই উতড়ে নাগরিকত্বের উপযুক্ত হিসেবে ২ কোটি ৮৯ লাখ মানুষ তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন। তবে যথাযথ নথি ও তথ্য-উপাত্ত দিতে না পারায় ৪০ থেকে ৪১ লাখ আসামিজ ভারতীয় নাগরিকত্বের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।

ভারতের আসামই একমাত্র রাজ্য যেখানকার বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য বিভিন্ন-নথিপত্র জমা দেয়ার পাশাপাশি নিবন্ধিত হতে হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর একদিন আগে অর্থাৎ ২৪ মার্চের পূর্বে আসামিজদের বংশধররা যে সেখানে বসবাস করতেন সেই দাবির পক্ষে কাগজপত্র জমা দিতে হয়েছে এবারের এনআরসিতে জায়গা পাওয়ার জন্য। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধ শেষে জন্ম হয় স্বাধীন বাংলাদেশের।

এর আগে, ১৯৫১ সালে এক জরিপ চালানোর পর প্রথমবারের মতো এনআরসি তালিকা প্রস্তুত করে আসাম। ওই সময় আসামের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৮০ লাখ। পরে ২০০৫ সালে রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার এবং অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়নের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় এক চুক্তি স্বাক্ষরের পর এই তালিকা হালনাগাদ করা হয়। ১৯৮৫ সালের আসাম অ্যাকর্ড বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

২০০৫ সালের পর আবারো এনআরসি তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু হলেও রাজ্যের বিভিন্ন অংশে প্রায়ই সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এর জেরে বিভিন্ন সময় হালনাগাদ কাজ স্থগিত রাখতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। পরে ২০০৯ সালে আসাম পাবলিক ওয়ার্ক নামের একটি বেসরকারি সংস্থা রাজ্যের অবৈধ বাংলাদেশিদের সনাক্ত করার কাজ অব্যাহত রাখতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়।

পরে সুপ্রিম কোর্ট নির্বিঘ্নে অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্তকরণ কাজ চালু রাখতে আসাম সরকারকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়। এর তিন বছর পর আসামে নাগরিকত্বের চূড়ান্ত খসড়া তালিকা গত ৩০ জুলাই প্রকাশ করা হয়।

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদি নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের অঙ্গীকার করেছিলেন। ক্ষমতায় আসার পর ২০১৬ সালে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার নাগরিকত্ব সংশোধন বিল-২০১৬ সালে পাস করে।

কিন্তু বিজেপির এই প্রস্তাবে আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও মনিপুরের কিছু রাজনৈতিক দল নাখোশ; যারা ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জোট গঠন করে সরকারে রয়েছে। এই ইস্যুতে বিজেপির ওপর থেকে তারা সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়ারও হুমকি দিয়েছে।

Bootstrap Image Preview