আফগানিস্তানে চলমান সংঘাত নিরসনে চীনকে বড় ধরনের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানি আলেম মাওলানা সামিউল হক। তিনি 'তালেবানদের জনক' হিসেবে পরিচিত।
আঞ্চলিক শান্তি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেইজিংকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন সামিউল। আফগান তালেবানদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হয়। আফগান তালেবানদের বর্তমান প্রধান হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা তার কাছ থেকে দীক্ষা নিয়েছিলেন।
সামিউল বলেন, বিরোধ নিষ্পত্তিতে এগিয়ে এলে চীনকে স্বাগত জানানো হবে এবং এ অঞ্চলে শান্তি প্রক্রিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় কোনোভাবেই কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না।
আফগানিস্তানের অস্থিরতার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সতর্ক দৃষ্টি রেখে আসছে চীন। চীনের মুসলিম উইঘুরদের তৈরি বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি সংগঠন ‘দ্য ইস্ট তুর্কেস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট’ অতীতে আফগানিস্তান-পাকিস্তান দু’দেশেই সক্রিয় থেকেছে। এখন এ দুই দেশের সীমান্ত লাগোয়া জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে চীনের বিরুদ্ধে।
সামিউল হক বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের তারিখ ঘোষণা করে তবেই শান্তি আলোচনা সফল হতে পারে। তার এসব বক্তব্যে পাকিস্তানের একটা প্রভাব দৃশ্যমান হচ্ছে। পাকিস্তান যদিও তাদের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে হুমকি বিবেচিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে যেসব হামলা হচ্ছে সেগুলোতে পাকিস্তানের হাত রয়েছে।
এর আগে যে খবর রটেছিল যে চীনা সেনাবাহিনী আফগানিস্তানে ঘাঁটি গেড়েছে, গত মাসে ওই খবর সত্য নয় বলে জানিয়েছে চীনা সরকার। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক ও ত্রাণ তৎপরতা বাড়িয়েছে চীন।
পাকিস্তানের ছোট্ট গ্রাম আকোরা খাত্তাকে আট একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত সামিউল হকের দারুল উলুম হাক্কানি মাদরাসা ‘ইউনিভার্সিটি অব জিহাদ’ নামে পরিচিত। বর্তমানে এ মাদরাসার ছাত্রসংখ্যা প্রায় চার হাজার। এ ছাত্রদের মধ্যে ২০০-এর বেশি আফগান ‘তালেবান’ (তালেবান একটি পশতু শব্দ যার অর্থ শিক্ষার্থী) রয়েছে। এরা সবাই ইসলামাবাদে উদ্বাস্তু হিসেবে নিবন্ধিত।
সামিউল হকের মাদরাসায় বিশাল একটি লাইব্রেরি রয়েছে, যেখানে বইয়ের সংখ্যা ৩০ হাজারের মতো। এর অনেকগুলোই আল-কায়েদার সহপ্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ ইউসুফ আজমের লেখা।
১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত হামলার সময় প্রথম সীমান্ত পেরিয়ে সামিউলের মাদরাসার ছাত্ররা আফগানিস্তানে লড়তে যান। শীতল যুদ্ধে সোভিয়েতকে হারানোর স্বপ্নে এ সময় ওই মুজাহিদিনদের নানাভাবে সাহায্য করেছিল মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ।