রাখাইন অঞ্চলে বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) স্থাপনে চীনের সঙ্গে চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছেছে মিয়ানমার। দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী এবং এসইজেড কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান উ থান মিন্টকে উদ্ধৃত করে মিয়ানমার টাইমস এ খবর প্রকাশ করেছে। ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তের অদূরেই হবে চীনের এ বন্দর। ফলে ভারতের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে এটি।
উ থান বলেন, রাখাইনে কায়ুকফায়ু বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণে রূপরেখা চুক্তি সইয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে মিয়ানমার ও চীন। এ বছরের শেষ দিকে চুক্তিটি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর আওতায় চীন এসইজেড অঞ্চলে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ গভীর সমুদ্রবন্দরের ৭০ শতাংশের মালিক হবে। বাকি ৩০ শতাংশ থাকবে মিয়ানমার সরকার ও স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে। তবে প্রাথমিক চুক্তিতে ওই বন্দরের ৮৫ শতাংশ মালিকানা চেয়েছিল চীন। মিয়ানমারের আপত্তির কারণে শেষ পর্যন্ত তা কমিয়ে আনা হয়। নতুন মালিকানা কাঠামো ও বন্দর নির্মাণে রূপরেখা চুক্তির খসড়া গত আগস্টে এসইজেড কমিটির কাছে জমা দেওয়া হয়।
নতুন সমঝোতা অনুযায়ী, মিয়ানমারের অর্থনৈতিক বোঝা কমাতেও সহায়তা করবে চীন। চুক্তির শর্ত চূড়ান্ত ও রূপরেখা চুক্তি সই হওয়ার পরই শুরু হবে বন্দর নির্মাণের কাজ। প্রায় ৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ওই গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে অর্থায়ন করবে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সিআইটিআইসি গ্রুপের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়াম।
এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পশ্চিমে যেখানে কায়ুকফায়ু বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) হবে সেখান থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে রোহিঙ্গা নিধন অভিযানে নেমেছিল সেনাবাহিনী।
চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যেই শিল্প ও পরিকাঠামো তৈরির জন্য ১ হাজার ৭০০ হেক্টর এলাকা নিয়ে এ শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হবে। এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে তিনটি বৃহৎ প্রকল্প রয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে চীনের স্বার্থ জড়িত।
বর্তমানে কায়ুকফায়ুতে ছোট আকারের একটি সমুদ্রবন্দর রয়েছে, যা দেশীয় পণ্য রপ্তানিতে ব্যবহার করা হয়। সেটি গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে পুনর্নির্মিত হলে এর বার্ষিক ক্ষমতা দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন কার্গো এবং ৪ দশমিক ৯ মিলিয়ন টিইইউ। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, পাকিস্তানের গোয়াদর ও শ্রীলংকার কলম্বো বন্দরের সঙ্গে সম্পর্ক হবে। সেই সঙ্গে পশ্চিমা দেশ থেকে পণ্য পরিবহনের জন্য চীনের বিকল্প রুট হিসেবেও কাজ করবে। এখন চীনকে তেল আমদানি করতে হয় বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত সমুদ্র পথ মালাকা প্রণালি দিয়ে। রাখাইনের বন্দরটি হলে তা এড়িয়ে যেতে পারবে চীন।