Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মালদ্বীপে ক্ষমতা বদল, চীনের কর্তৃত্বের কি হবে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক-
প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০১:১৮ PM
আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০১:১৮ PM

bdmorning Image Preview


স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের ইতিহাস বলে, ক্ষমতাসীন অভিজাতদের মধ্যে বিভাজন দেখা দেওয়ার পাশাপাশি যদি জনগণের আন্দোলন হয়, তাহলে যেকোনো স্বৈরশাসককে উৎখাত করা সম্ভব। আবদুল্লাহ ইয়ামিনের পতন এই প্রবণতাকেই নিশ্চিত করেছে। মালদ্বীপের উদাহরণটি বিশ্বের জন্যে একটি রোল মডেল হতে পারে।

মালদ্বীপের নাগরিকেরা সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনের চরম কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে প্রায় ৯০ শতাংশ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন বিরোধী প্রার্থী ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহকে।নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন বিরোধীদের ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েও সফল হতে পারেনি শেষ পর্যন্ত। এমনকি ভোটের আগে বিরোধীদের প্রধান কার্যালয়গুলো ঘেরাও করে তল্লাশি করেছে পুলিশ।

আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের কারণে গণতন্ত্রে উত্তরণের বিষয়টি উৎসাহিত বা বাধাগ্রস্ত হয়। ইয়ামিনের উৎখাতকারীরা চীনের মারাত্মক বিরোধী ছিল সব সময়। চীন শুধু ইয়ামিনের জন্যই আশীর্বাদস্বরূপ ছিল। ইয়ামিনের পাঁচ বছরের শাসনামলে বেইজিং মালদ্বীপের জমি, অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে চীন। মালদ্বীপ বড় প্রকল্পগুলোতে চীনা বিনিয়োগকে স্বাগত জানায়। দেশটি চীনের সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। ফলে আবদুল্লাহ ইয়ামিনের শাসনামলে অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে চীন মালদ্বীপে অধিক প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ পায়। চীন ইয়ামিনের পেছনে ছায়া হয়ে দাঁড়ায়, যা তাঁকে বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাতে ও দেশে জরুরি অবস্থা জারি করতে সাহস জোগায়।

একই কারণে ইয়ামিন ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর চাপ উপেক্ষা করেছেন। কিন্তু নির্বাচনে মোহাম্মদ সলিহর বিজয়ের ফলে চীনের এ আধিপত্য হুমকির মুখে পড়েছে।

মালদ্বীপের নির্বাচনের এই ঐতিহাসিক ফলাফল এটা প্রমাণ করেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ ঢেলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা কোনো স্থায়ী সুবিধা দেয় না। ইয়ামিনের অধীনে মালদ্বীপকে ঋণের ফাঁদে ফেলার কার্যকর সমালোচনার ফলে মালদ্বীপবাসীর মনে এই আশঙ্কার জন্ম নেয় যে একসময় হয়তো তাদের দেশটি চীনের নব্য উপনিবেশে পরিণত হবে।

এবার ধারণা করা হচ্ছে, ইয়ামিন পরাজিত হওয়ায় চীন হতোদ্যম হবে না। এখন যিনি ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই উন্নয়নশীল দেশটির ক্ষমতায় আসছেন, তাঁর সঙ্গে চীন সুসম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করতে পারে। চীন এ ক্ষেত্রে বিপুল অর্থ ঢালার নীতি বাস্তবায়ন করতে পারে। এখন মোহাম্মদ সলিহ ও মালদ্বীপের পরবর্তী প্রশাসন নিজেদের চীনের এই লোভের ফাঁদ থেকে মুক্ত করতে পারবে কি না, সেটাই দেখার বিষয়। এটা অনেকটা নির্ভর করবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো থেকে সমর্থন পাওয়ার ওপর।

মালদ্বীপে গণতন্ত্রকে জোরদার করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিচারব্যবস্থা, আমলাতন্ত্র, নির্বাচন কমিশন এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সংস্কার। ভারত ও পশ্চিমা অংশীদারেরা, যারা একটি মধ্য ও উদার মালদ্বীপের প্রত্যাশা করে, তাদের অবশ্যই সেখানে দীর্ঘমেয়াদি সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে। ইয়ামিনের কবল থেকে মুক্ত হওয়াই শেষ কথা নয়, বরং একটি নতুন যুগের ভিত্তি রচনা করতে হবে।

Bootstrap Image Preview