খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার রসুলপুর গ্রামে আব্দুল খালেক একজন সফল কৃষক। তিনি তার অধ্যবসায়, উদ্যমতা দিয়ে বিভিন্ন কৃষিজ পণ্য উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার সফলতার ধারাবাহিকতায় এবার তিনি ‘রেডলেডি’ জাতের পেঁপে চাষের সম্ভাবনা দেখছেন।
২ বছর আগে তিনি প্রায় ২০ একর জমিতে বাংলাদেশ কৃষি বিভাগের পরামর্শে নিজের অব্যবহৃত পাহাড়ি টিলা ভূমিতে ৫'শ চারা রোপণের মাধ্যমে পরীক্ষামূল ভাবে ‘রেডলেডি’ পেঁপে চাষ শুরু করেন।
শুরুর আরও পরের দিকে ব্র্যাক ও ঢাকা বীজঘর থেকে বীজ সংগ্রহ করে থেকে উৎপাদিত আরো ২ হাজার রেডলেডি জাতের পেঁপের চারা রোপণ করেন। বর্তমানে তার নিজস্ব সৃজিত বাগানে ২ হাজারেরও বেশি গাছ থেকে পেঁপে পাওয়া যাচ্ছে। যা প্রতিদিনের বাজারমূল্য ৪/৫ হাজার টাকা।
কৃষক মো. আব্দুল খালেক অকপটে তার মত ব্যক্ত করে বলেন, সঠিকভাবে চাষাবাদ, পরিচর্যা এবং বাজারজাত করা হলে পাহাড়ের চূড়ায় যে কোন কৃষকের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে এই ‘রেডলেডি’ জাতের পেঁপে। ইতোমধ্যে তাকে অনুসরণ করে সারোয়ার আলম ও মো. নাছির উদ্দিনসহ আরো অনেক কৃষক পাহাড়ি টিলা ভুমিতে রেডলেডি পেঁপে চাষের প্রকল্প শুরু করেছেন।
এই জাতের (রেডলেডি) জাতের পেঁপে বেশ সুমিষ্ট হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও ব্যাপক এমনটি জানিয়ে মো. আব্দুল খালেক বলেন, ‘পাহাড়ে পেঁপে বিপণন ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী হওয়া উচিত। বিশেষ করে সমতল অঞ্চলে এই জাতের পেঁপে বাজারজাত করা গেলে স্থানীয় কৃষক পেঁপে চাষে আরো ব্যাপকভাবে আগ্রহী হয়ে উঠবে।
ফার্ম ঘুরে দেখা গেছে, অব্যবহৃত পাহাড়ি টিলায় সবুজে মোড়ানো ‘রেডলেডি’ জাতের পেঁপের বাগান। সারি সারি পেঁপে গাছে ঝুলছে বিভিন্ন আকারের পেঁপে। সেখানেই কথা হয় ফার্মের তত্ত্বাবধায়ক মো. রাশেদুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, বাগানে পেঁপে গাছের চারা রোপণের সময় সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হলেও এখন সম্পূর্ণ জৈব সারই ব্যবহার হয়ে থাকে। নিয়মিত চারজন শ্রমিকসহ বাগানে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে গড়ে দশজন শ্রমিক কাজ করে।
জানা যায়, তাইওয়ানের উচ্চ ফলনশীল বামন প্রজাতির এ পেঁপে চারা রোপণের ৫-৬ মাসের মধ্যে ফুল আসে এবং ৭-৯ মাসের মধ্যে প্রথম ফল পাওয়া যায়। লাল-সবুজ রঙের প্রতিটি পেঁপের ওজন হয় দেড়-দুই কেজি। খেতে সুমিষ্ট এ পেঁপে সুগন্ধিযুক্ত। কাঁচা ও পাকা উভয় প্রক্রিয়াতেই বাজারজাত করা যায়। পাকা পেঁপে খুব সহজে নষ্ট হয় না বলে বাজারজাত করা সহজ। এ জাতের পেঁপের রিং স্পট ভাইরাস রোগ সহ্য করার সক্ষমতা রয়েছে। ‘রেডলেডি’ জাতের পেঁপে গাছের আয়ুষ্কাল ২ বছরের বেশি।
পাহাড়ের ঢালুতে চাষাবাদ সহনীয় জানিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. শাহ আলম মিয়া বলেন, ‘পাহাড়ের মাটির উর্বরতা ও
অনুকূল আবহাওয়া রেডলেডি জাতের পেঁপে চাষের জন্য সহায়ক। শুধু ছত্রাকের আক্রমণ ছাড়া অন্য কোন রোগ হয় না।’ পাহাড়ের ঢালু অংশে এ জাতের পেঁপে সম্ভাবনাময় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিকল্পিত বাগান সৃষ্টিসহ সঠিক পরিচর্যা করা গেলে এ জাতের পেঁপে পাহাড়ে কৃষকের ভাগ্য বদলে দিতে পারে।’