শুক্রবারের দুপুরের গুলিতে স্তব্ধ হয়ে গেল ২৮ বছরের তরুণী রিমা সিংহের জীবন। কাজের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। কিন্তু নিয়তিকে খণ্ডন করার উপায় কারও নেই- ঠিক তাই ঘটল রিমার সঙ্গে। মাসখানেক পরেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল হাওড়ার দাশনগরের ১৩৩ নম্বর ফকির মিস্ত্রি বাগানের বাসিন্দা রিমা সিংহয়ের (২৮) সঙ্গে।
শুক্রবার তার সঙ্গে দেখা করতে রিমার বাড়িতে পৌঁছেছেন হবু স্বামী প্রবীর রায়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাদের দেখা হওয়ার কথাও ছিল। কিন্তু তার আগেই পুলিশ দাশনগরের বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেয় গুলিতে মৃত্যু হয়েছে রিমার। শুক্রবার দুপুরে পার্ক সার্কাসে কলকাতা পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য চোডুপ লেপচার গুলিতে মৃত্যু হয়েছে রিমার। এই খবর রিমার দাশনগরের বাড়িতে পৌঁছনো মাত্র শোকের ছায়া নেমে আসে।
রিমার মায়ের কথায়, ‘আমার মেয়েটা যে এ ভাবে চলে যাবে তা ভাবতেও পারিনি। ও বেলা ১২টা নাগাদ হাসতে হাসতে বেরোল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কখন ফিরবি?, ও বলল, সন্ধ্যায় ফিরব। এর কিছুটা পর আমাদের বাড়িওয়ালা আমাকে ডেকে বললেন, ‘রিমার মৃত্যু হয়েছে গুলিতে।’ ওর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। আমাদের হবু জামাই প্রবীরের বাবা মারা গিয়েছে। আজ বিয়ের দিন স্থির করার কথা ছিল। সেই জন্য প্রবীর এসেছিল।’
রিমা তার পরিবারের একমাত্র আয়কারী সদস্য ছিলেন। রিমার মায়ের কথায়, ‘ওর বাবার পাঁচ বছর কারখানা বন্ধ। আমার মেয়েই সংসার চালাত।’ এ ছাড়া রয়েছে রিমার এক ভাইও। তার আকস্মিক মৃত্যুতে গোটা পরিবার শোকস্তব্ধ।
পুলিশ সূত্রে খবর, দুপুর আড়াইর দিকে লোয়ার রেঞ্জ রোড দিয়ে যাচ্ছিলেন পেশায় ফিজিওথেরাপিস্ট রিমা। সেই সময়ই চা খাওয়ার নাম করে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের আউট পোস্ট থেকে বেরিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করেন কলকাতা পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর কনস্টেবল চোডুপ লেপচা। একটি গুলি এসে লাগে রিমার মাথায়। রাস্তার ওপরই লুটিয়ে পড়েন তিনি। রক্তে ভরে যায় চারপাশ। তাণ্ডবলীলা শেষ হয়ে যাওয়ার পর তড়িঘড়ি রিমাকে নিকটবর্তী ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।