তামিলনাড়ুতে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধান বিপিন রাওয়াত নিহত হয়েছেন। তার স্ত্রীসহ আরও ১১ জন এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।
ভারতীয় বিমানবাহিনী (আইএএফ) টুইট করেছে, ‘গভীর দুঃখের সঙ্গে এখন নিশ্চিত করা হচ্ছে যে, জেনারেল বিপিন রাওয়াত, মিসেস মাধুলিকা রাওয়াত এবং আরও ১১ জন ওই দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।’
তামিলনাড়ুর কুন্নুরে জঙ্গলের মধ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় এর ১৪ আরোহীর ১৩ জনই মারা গেলেন।
আর যিনি বেঁচে আছেন, তার অবস্থা গুরুতর। তার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। ওয়েলিংটনের সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই ব্যক্তি হলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিং।
এই দুর্ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে, দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধানের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হলো কী করে? বিমানবাহিনীর সাবেক গ্রুপ ক্যাপ্টেন রমেশকুমার দাসের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছে আনন্দবাজার পত্রিকা। তারা একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে।
রাওয়াতের হেলিকপ্টার ওয়েলিংটন যাওয়ার পথে নীলগিরি পাহাড়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ১৯৯৭-১৯৯৮ সালে ওয়েলিংটনের ওই স্টাফ কলেজেই প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন ওই কর্মকর্তা। তাই ওই এলাকা এবং নীলগিরি পাহাড়ের দিকটা সম্পর্কে তিনি বেশ অবগত।
ওখানে নিয়মিত বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্তারা বক্তৃতা করতে আসেন, বলে জানান রমেশ। সিডিএস বিপিন রাওয়াতও ওই কলেজেই বক্তৃতা করার জন্য সুলুর থেকে রওনা দিয়েছিলেন।
এই দুর্ঘটনার জন্য অনেকে খারাপ আবহাওয়াকে দায়ী করছেন। তবে একাধিক কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন রমেশ।
তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরেই তামিলনাড়ুর আবহাওয়া খারাপ। নীলগিরি পাহাড়ে আবহাওয়া দ্রুত পরিবর্তন হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মেঘলা বা কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে যায়। হেলিকপ্টার টেক-অফ করার পর হয়তো আবহাওয়া খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তাই খারাপ আবহাওয়ার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। দুর্ঘটনার কারণ খোঁজার সময় এটাও নিশ্চয় তদন্ত করে দেখা হবে।’
সুলুর বিমানবন্দর থেকে ওয়েলিংটনে যেতে আকাশপথে ২০ মিনিট সময় লাগে বলে জানান রমেশ। নীলগিরির পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে এই পথ।
তার মতে, আবহাওয়ার সঙ্গে এলোমেলো হাওয়ার ফলে সেই সময় হেলিকপ্টারটি কোনো বিপদে পড়েছিল কিনা সেটিও দেখা উচিত।
তিনি বলেন, হেলিকপ্টারে একাধিক ‘মুভিং পার্টস’ থাকে। হেলিকপ্টারের মাথার ওপর যেমন ব্লেড ঘোরে, তেমনই থাকে ‘টেল রোটার’ অর্থাৎ হেলিকপ্টারের পেছনে বা লেজের দিকে পাখা ঘুরতে থাকে। পাহাড়ে বিভিন্ন মুখী হাওয়া চলে। কখনো ওপর দিক থেকে নিচের দিকে আবার কখনো নিচ থেকে ওপরে হাওয়ার অভিমুখ হয়। অনেক সময় এর হঠাৎ তারতম্য ঘটলেও অসুবিধায় পড়ার সম্ভাবনা থাকে।’
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, এই সব বিষয়গুলো বিমানবাহিনীর পাইলটরা মাথায় রাখেন। কী ধরনের সমস্যার মুখে তারা পড়তে পারেন তা সম্পর্কেও ধারণা থাকে তাদের।
রুশ এমআই-১৭ দেশের অন্যতম উন্নত এয়ারক্রাফট। রমেশ বলেন, যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হেলিকপ্টারে ওঠার আগে সেই হেলিকপ্টারের একাধিক পরীক্ষা করা হয়। ‘সার্ভিস অ্যাবিলিটি’ অর্থাৎ পরীক্ষার সঙ্গে যন্ত্রাংশ খুঁটিয়ে দেখা হয়।
তিনি বলেন, কোনো এয়ারবেসের স্কোয়াড্রনে যত এয়ারক্রাফট থাকে তার মধ্যে সব থেকে ভালোটাই ব্যবহার করা হয়। অভিজ্ঞ পাইলটই সেই হেলিকপ্টারের চালকের আসনে থাকেন।
সস্ত্রীক বিপিন রাওয়াতের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ দেশের তিন প্রতিরক্ষা বাহিনীও। ইতিমধ্যে বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে তদন্ত শুরু করেছেন। রমেশের মতে- একাধিক কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তদন্তের পরই আসল কারণ জানা যাবে।