Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

এফ-১৬ নাকি মিরাজ ২০০০ কোনটি বেশি শক্তিশালী?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১২:৪৫ PM
আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১২:৪৫ PM

bdmorning Image Preview


কাশ্মীরের পুলওয়ামাতে হামলার জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাল্টা হামলায় দেশ দুইটির মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এরই মধ্যে বুধবার কাশ্মীরে আকাশ সীমানা লঙ্ঘন করায় ভারতের দুইটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পাশাপাশি ১ পাইলটকে আটক করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এতে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে।  

প্রতিবেশী এই দুই দেশের উত্তেজনা নিয়ে নানা বিশ্লেষণ চলছে। যদি চূড়ান্তভাবে যুদ্ধ বেধে যায় তাহলে শক্তির বিবেচনায় এগিয়ে থাকবে কোন দেশ এটাও এখন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

বিশ্বের প্রথম দশটি শক্তিশালী বিমান বাহিনীর তালিকায় রয়েছে ভারতীয় বিমান বাহিনী। এর সঙ্গে ফ্রান্সের তৈরি মাল্টিরোল সিঙ্গেল ইঞ্জিন চতুর্থ প্রজন্মের জেট মিরাজ-২০০০ রয়েছে এই বাহিনীতে। বালাকোটে সেই শক্তিই প্রদর্শন করেছে ভারত। মঙ্গলবার ১২টি মিরাজ-২০০০ যুদ্ধ বিমান মুহূর্তে উড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটিগুলো। 

এদিকে, মিরাজের পাল্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি সিঙ্গেল সুপারসনিক এফ-১৬ অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের বিমানবাহিনীতে স্থান পেয়েছে। এ যুদ্ধ বিমান যে কোনো আবহাওয়ায় উড়তে ও আঘাত হানতে সক্ষম। এই এফ-১৬ বিমান নিয়েই ভারিতের নওশেরায় হগাম্লা চালায় পাকিস্তান। 

মিরাজ-২০০০ নাকি এফ-১৬ কোনটি বেশি শক্তিশালী-

মাল্টিরোল সিঙ্গল ইঞ্জিন চতুর্থ প্রজন্মের জেট মিরাজ ২০০০ দাসো এভিয়েশনের সাহায্যে তৈরি। অন্যদিকে, অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান সিঙ্গল সুপারসনিক এফ-১৬ পাকিস্তানকে বিক্রি করেছে আমেরিকা। যে কোনো আবহাওয়ায় এটি উড়তে এবং আঘাত হানতে সক্ষম।

১৯৭০ দশকের শেষের দিকে লাইটওয়েট ফাইটার হিসেবে মিরাজ তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে বেশ কয়েকটি ‘স্ট্রাইক ভ্যারিয়ান্ট’ তৈরি করা হয়। ১৯৯৪ সাল নাগাদ বিল ক্লিন্টন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন পাকিস্তানের সঙ্গে আমেরিকার চুক্তি হয় এফ-১৬ সংক্রান্ত। অনেক বিতর্কও ছিল এ নিয়ে। সেই সময়ের সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান এফ-১৬ ২০১৬ সালে পাকিস্তানকে বিক্রি করছে। এটি তৈরি করে লকহিড মার্টিন।

মূলত অর্থ সাশ্রয়ী হালকা বহুমুখী বিমান হিসাবেই তৈরি করা হয়েছে এফ ১৬ বিমান। আরেক মার্কিন ব্যয়বহুল বিমান এফ-১৫ কে সাহায্য করতেই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল আমেরিকার পক্ষ থেকে। ‘এয়ার টু এয়ার’-এ এফ-১৬ অত্যাধিক সফল। কিন্তু মিরাজ ‘এয়ার টু এয়ার’, ‘এয়ার টু গ্রাউন্ড’ দু’টি ক্ষেত্রেই সফল।

মিরাজ-২০০০-এ উন্নততর সামরিক সরঞ্জামই শুধু নেই, বরং রাতেও বিমান হানা চালানোর ক্ষমতা রাখে। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান সহজেই প্রবেশ করে। এফ-১৬ এর ক্ষেত্রেও ‘নাইট ভিশন’ যথেষ্ট শক্তিশালী। কামান, ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা সবরকম অস্ত্রই থাকে এটিতে।

মিরাজ-২০০০ নিজের সুরক্ষাও করতে পারে, আবার আঘাতও হানতে পারে। মিরাজে দু’টি ৩০০ এমএম ডেভা ৫০ রিভলভার কামান থাকে, এফ-১৬-এর ক্ষেত্রে একটি ২০ এমএম এম৬১ ভালকান কামান থাকে বাঁ দিকের ডানায়। এফ ১৬-এর কামানের গুলির হার ৬ হাজার রাউন্ড প্রতি মিনিটে, অপর দিকে মিরাজের কামানে গুলির হার ১৮০০ রাউন্ড প্রতি মিনিটে।

মিরাজে চালকের হেলমেটের মধ্যেই থাকে ডিসপ্লে। এর ফলে সুপার ইমপোজড রাডার ডেটা দেখতে পারেন তিনি। ককপিটে ডিসপ্লে থাকার প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে এফ-১৬ এর ককপিটও বেশ উন্নত। এতে রয়েছে মাল্টিফাংশনাল ডিসপ্লে।

মিরাজে রয়েছে মারাত্মক শক্তিশালী রাডার। যার ফলে লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করতে পারে সহজেই। ডপলার বিমিং প্রযুক্তির মাধ্যমে ভূমিতে থাকা যে কোনো বস্তুর নিখুঁত মানচিত্র এঁকে ফেলতে সক্ষম। পাকিস্তানের এফ-১৬ এর রাডারও শক্তিশালী। এই বিমানে ভার্টিকল স্টেবিলাইজার আছে। ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ সম্ভব যুদ্ধের সময়ও।

মিরাজের থেকে ওজন বহন করার ক্ষমতা এফ-১৬-এর অনেকটাই বেশি। মিরাজ-২০০০ দূরপাল্লার অভিযানে বেশি সফল, এফ-১৬ মধ্যমাত্রার অভিযানে বেশি সফল।

মাটিতে থাকা যে কোনো চলন্ত বস্তুকেও নিশানা করতে সক্ষম দু’টি যুদ্ধবিমানই। অত্যন্ত শক্তিশালী মিরাজ যুদ্ধবিমানের অতি সম্প্রতি আধুনিকীকরণ হয়েছে। যদিও এমনিতে আকাশপথে ২৩৩৬ কিমি প্রতি ঘণ্টায় উড়ে মিরাজ, এফ-১৬ এর গতি ২৪১৪ কিমি প্রতি ঘণ্টায়।

মিরাজ সফলভাবে কার্গিলে শত্রুশিবির ও রসদ ক্যাম্পে হানা দেয় এবং কয়েক দিনের মধ্যেই শত্রুদের সরবরাহ ব্যবস্থাটিকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। অন্যদিকে আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় শত্রু শিবিরকে গুঁড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল এফ-১৬। তবে আকাশপথে যুদ্ধের ক্ষেত্রে এফ-১৬ কেই এগিয়ে রেখেছেন বিশেষজ্ঞরা। অস্ত্র রাখার ক্ষমতার দিক থেকে এফ-১৬ এর ক্ষমতা খানিকটা বেশি।

মিরাজের থেকে আরও একটা জায়গায় এফ-১৬ কে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা এগিয়ে রাখছেন, কারণ আকাশ পথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এফ-১৬ এর গতি অনেকটাই বেশি।

Bootstrap Image Preview