Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ক্যানসারে আক্রান্ত মৃত্যুপথযাত্রী বাবার ইচ্ছাপূরণে হাসপাতালেই বিয়ে করলেন মেয়ে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ০৭:৫৫ PM
আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ০৭:৫৫ PM

bdmorning Image Preview


হাওড়ার এক হাসপাতালের বেডে ক্যানসারে আক্রান্ত বাবার ইচ্ছাপূরণে হাসপাতালেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন কন্যা দেওতিমা সরকার। শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া বাবার সামনেই তাঁর মেয়ের  বিয়ে হলো।

গত ৯ বছর যাবৎ সময়ের সঙ্গেই যেন লড়াই চলছে তাঁর। শেষ ইচ্ছা, মেয়ের বিয়ে দেখা। আর কয়েক দিন পরই বিয়ের সামাজিক অনুষ্ঠান। কিন্তু সময় যেন আর সময় দিতে নারাজ। তেমনটাই আশঙ্কা তাঁর পরিবার ও চিকিৎসকদের। তাই তাঁর চোখের সামনে অন্তত মেয়ের বিয়ের রেজিস্ট্রিটা হতে পারে, তারই ব্যবস্থা করলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার হাওড়ার এক হাসপাতালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া বাবার সামনেই তাঁর মেয়ের সরকারি মতে বিয়ে হলো। হাসপাতালের ঘরে সব কিছুর ব্যবস্থা করেছিলেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শরীর যেন আর সঙ্গ দিতে চাইছে না। এ দিনও ৬১ বছরের সন্দীপ কুমার সরকারের শারীরিক সমস্যা বেড়েছিল। অক্সিজেন নিতে পারছিলেন না। ফলে উৎকণ্ঠায় ছিলেন পরিবারের সকলেই। মেয়ে-জামাইও চিন্তায় ছিলেন সব কিছু ঠিকঠাক মতো হবে কি না, তা ভেবে।

আর পাঁচ দিন বাকি মেয়ের সামাজিক বিয়ের। হাল ছাড়তে নারাজ সন্দীপ বাবু। মেয়ের বিয়ে তিনি দেখবেনই। প্রতিপক্ষ মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে লড়াইয়ে রাখতে চাওয়া বৃদ্ধ যেন বলছেন, ‘ফাইট সন্দীপ, ফাইট।’

তবে হাল ছাড়তে রাজি ছিলেন না রেলের অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার সন্দীপ বাবু। ২০১১ সাল থেকে তিনি জিভের ক্যানসারে আক্রান্ত। মুম্বাইয়ের একটি ক্যানসার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বর্তমানে হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অপরাজেয় সন্দীপ বাবু অবশ্য শেষ পর্যন্ত মেয়ের বিয়ের রেজিস্ট্রির নোটিশের কাগজে নিজেই সই করলেন। মৃত্যুপথযাত্রী ক্যানসার রোগী কেক কেটে অতিথিদের মুখেও তুলে দিলেন। যদিও সন্ধ্যায় ফের তাঁর অস্ত্রোপচার হয়।

বরাহনগরের বাসিন্দা, সন্দীপ বাবুর মেয়ে দিওতিমা রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে শারীরবিদ্যা নিয়ে গবেষণারত। তাঁর সঙ্গে এ দিন বিয়ে হলো একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তা সুদীপ্ত কুণ্ডুর। মেয়ের কথায়, ‘অদ্ভুত অনুভূতি। আমাদের নতুন জীবন শুরু হলো অথচ বাবার জীবন শেষের পথে। চিকিৎসায় আর সাড়া দিচ্ছেন না। শুধু আমাদের একসঙ্গে দেখার অপেক্ষায় মনের জোরে লড়াই করছেন। বাবার ইচ্ছা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জন্য সফল হয়েছে।’ জামাই সুদীপ্ত বলছেন, ‘কয়েক বছর ধরে তাঁর লড়াই দেখছি। এমন মনের জোর কারো দেখিনি। হাসপাতাল থেকে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার ইচ্ছার কথাও জানিয়েছেন।’

সন্দীপ বাবুর এই লড়াইয়ে সব সময়ের সঙ্গী স্ত্রী সুজাতা দেবী। ভবিষ্যৎ কী, তা তিনি আন্দাজ করতে পারেন। তবুও স্বামীর মতো তিনিও হাল ছাড়তে নারাজ। সুজাতা দেবীর কথায়, ‘জানতাম উনি পারবেন, পেরেছেন।’ সন্দীপ বাবুর লড়াই আর কতক্ষণের, তা সময় বলবে। তবে হাসপাতাল কর্মীদের কথায়, ‘এমন লড়াই বহুদিন মনে থাকবে। আমরা এমন একটি মুহূর্তের সাক্ষি হয়ে রইলাম।’

Bootstrap Image Preview