Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

উবার চালিয়ে জীবন যাপন করছেন বিশ্বকাপের দ্রুততম গোলদাতা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারী ২০২০, ০৩:২০ PM
আপডেট: ১৫ জানুয়ারী ২০২০, ০৩:৩৯ PM

bdmorning Image Preview


ছিলেন তুরস্কের জনগণের নয়নমণি। অর্থ-খ্যাতি সবই ছিল। যোগ দিয়েছিলেন রাজনীতিতে, সেটাই হল কাল! জীবন বাঁচাতে এখন যুক্তরাষ্ট্রে উবার চালানো কিংবা বই বিক্রি করতে হয় তুর্কিদের কিংবদন্তি ফুটবলার হাকান সুকুরকে। তার গাড়িতে ওঠা যাত্রীরা হয়তো বেশিরভাগ সময় জানতেও পারেন না, চালকের নামের পাশে যোগ হয়ে আছে বিশ্বকাপ ফুটবল ইতিহাসের দ্রুততম গোলের রেকর্ড!

দীর্ঘ ক্লাব ক্যারিয়ারে গ্যালাতাসারে, ইন্টার মিলান, ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের হয়ে আড়াইশর বেশি গোল আছে সুকুরের। তুরস্কের হয়ে ১১২ ম্যাচে করেছেন ৫১ গোল। ২০০২ বিশ্বকাপে সাউথ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ শুরুর মাত্র ১০.৮ সেকেন্ডে ফ্রি-কিক থেকে করা তার গোলটি এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের দ্রুততম গোল।

২০১১ সালের আগপর্যন্ত তুরস্কে জাতীয় বীরের মর্যাদা পেতেন হাকান সুকুর। সেই গর্বেই কিনা দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল একেপি পার্টিতে যোগ দেন ‘বুল অব বসফরাস’ নামে খ্যাত এ ফুটবলার। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। হঠাতই ২০১৩ সালে সেই সম্পর্কে ধরে ফাটল।

২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরে তার একসময়ের সবচেয়ে কাছের মানুষ ফেতুল্লা গুলেনের। যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে বাধ্য হন ফেতুল্লা। সেটির প্রতিবাদ করতে গিয়ে এরদোয়ানের চক্ষুশূলে পরিণত হন হাকান সুকুর, ২০১৩ সালে পদত্যাগ করেন একেপি পার্টি থেকে।

তিন বছর বাদে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনেন সুকুর। এরদোয়ানের বিরুদ্ধে টুইট তাকে পরিণত করে সরকারের শত্রুতে। এরপর জনগণের যতটুকু সমর্থন ছিল সেটাও হারান নিজেকে ‘আলবেনিয়ান’ দাবী করে।

২০১৬ সালে তার বিরুদ্ধে বিচার শুরু করে তুরস্ক সরকার। হাকান সুকুর পরিণত হন রাষ্ট্রের শত্রুতে। তার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়, বাস্তুচ্যুত করা হয় দেশ থেকে। গ্রেপ্তার হন এ ফুটবলারের বৃদ্ধ বাবা। প্রাণ ভয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আসেন সুকুর।

কেমন আছেন ৪৮ বছর বয়সী এ ফুটবলার? ওয়াল্ট এএম সোনাটাগকে সুকুর বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে বেঁচে থাকার জন্য আমি এখন উবার চালাই।’

টুইটারে সরকারের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয়ায় ক্ষণে ক্ষণে প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন সুকুর। মূলত সে কারণেই পালিয়ে আসা যুক্তরাষ্ট্রে। বাস করেন রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে, ‘ওরা আমার স্ত্রীর গায়ে পাথর ছুঁড়েছে, বাচ্চাদের রাস্তায় অপমান করেছে। যতবারই বিবৃতি দিয়েছি, ততবারই হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। যখন দেশ ছেড়ে এসেছি, আমার বাবাকে জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছে। আমার যত সম্পত্তি ছিল সব বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।’

‘দুনিয়ায় আর কিছুই বাকি নেই আমার। এরদোয়ান সব কেড়ে নিয়েছে। আমার স্বাধীনতা, নিজেকে ব্যাখ্যা করার, প্রকাশের অধিকার, কাজ করার অধিকার, কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।’

জেল থেকে ছাড়া পেলেও এখন গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে সুকুরের বৃদ্ধ বাবাকে, তিনি ক্যান্সারে ভুগছেন। তার মা-ও আক্রান্ত নানা রোগে, ‘খুব কঠিন সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে তাদের। কেউ যদি আমাকে সাহায্য করতে যায় তাহলে তাকে আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত করে রাখা হয়।’

‘ক্যালিফোর্নিয়ায় একটা ক্যাফে দিয়েছিলাম। আচমকা কোথা যেন সব অচেনা লোক এসে ডোম্বরা সঙ্গীত (একেপি সরকারের মতে এই সঙ্গীত তুরস্কের মানুষের প্রাণের সঙ্গীত) বাজানো শুরু করল!’

যুক্তরাষ্ট্রে থাকা এক প্রবাসী তুর্কি ছাত্র তার সঙ্গে সেলফি তোলায় সেই ছাত্রকে ১৪ মাসের জেল খাটতে হয়েছে বলে শুনেছেন সুকুর, ‘যখন আমি একেপি পার্টিতে যোগ দেই, প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল যে দেশকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) মতো করে চালানো হবে এবং ইউরোপ থেকে প্রচুর বিনিয়োগ আনা হবে।’

Bootstrap Image Preview