Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

হিজড়াদের নিয়ে যা বলছে ইসলাম

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারী ২০২০, ০৫:৩৪ PM
আপডেট: ১৪ জানুয়ারী ২০২০, ০৫:৩৪ PM

bdmorning Image Preview


বাংলা একাডেমির সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান বলছে, ‘হিজড়া’ শব্দটি হিন্দি ভাষা থেকে এসেছে। আবার কেউ বলেছেন, হিজড়া শব্দটি এসেছে ফারসি থেকে। যার অর্থ ‘সম্মানিত ব্যক্তি’। পরিভাষায় ত্রুটিপূর্ণ গোপন অঙ্গ বা মিশ্র গোপন অঙ্গের বৈশিষ্ট্যের অধিকারী মানুষকে হিজড়া বলা হয়।

হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ইসলাম তাদের কখনো সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়নি; বরং ইসলাম মানুষ হিসেবে তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে এবং নামাজের জামাতসহ সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ অনুমোদন করেছে। ইসলামী আইনশাস্ত্রের বই অধ্যয়ন করলে জানা যায়, ইসলাম তাদের একই জামাতে কাতারবদ্ধ হওয়ার অনুমতি দিয়েছে। দুঃখজনকভাবে সত্য হলো, বর্তমান সমাজব্যবস্থায় হিজড়া সম্প্রদায়ের কোনো স্থান নেই।

ইসলামের দৃষ্টিতে হিজড়ারা মানব সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত এবং মানুষ হিসেবে যথাযথ সম্মান ও অধিকার তাদের প্রাপ্য। বরং ত্রুটিপূর্ণ দৈহিক গঠনের জন্য অন্যান্য ত্রুটিপূর্ণ মানুষের মতো তারাও মানুষের সহানুভূতির দাবিদার। ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষের জন্ম ও দৈহিক অবয়ব সম্পূর্ণ আল্লাহর দান। আল্লাহ যাকে যেভাবে খুশি সৃষ্টি করেন। দৈহিক পূর্ণতা ও অপূর্ণতা তার ইচ্ছাধীন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি (আল্লাহ) মাতৃগর্ভে তোমাদের যেমন ইচ্ছা তেমন রূপ দেন। ...’ (সুরা: আলে ইমরান, আয়াত: ৬)

সুতরাং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ঘৃণা পোষণ এক প্রকার আল্লাহর প্রতি অনাস্থা প্রকাশ এবং তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রশ্ন উত্থাপন। তবে যেহেতু এটি এক প্রকার ত্রুটি, তাই মানুষ সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা আদায় করবে এবং আল্লাহর সৃষ্টি হিসেবে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের প্রতি সম্মান ও সহানুভূতি প্রকাশ করবে। মানুষ হিসেবে তাদের মূল্যায়ন করবে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদের চেহারা ও সম্পদ দেখেন না; বরং তিনি তোমাদের হৃদয় এবং আমলসমূহ দেখেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৭০৮)

ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও মুকাল্লাফ বা আল্লাহর বিধান পরিপালনে আদিষ্ট। সাধারণ মানুষের মতো তাদেরও নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত আদায় করতে হবে। এজন্য পরকালে তাদের জবাবদিহি করতে হবে। যার ভেতর নারীর স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য প্রবল সে নারী হিসেবে এবং যার ভেতর পুরুষের স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য প্রবল, সে পুরুষ হিসেবে ইসলামের বিধান মান্য করবে। আর যার মধ্যে কোনো বৈশিষ্ট্যই প্রবল নয়, সে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নারী বা পুরুষ হিসেবে ইসলামের বিধান মান্য করবে।

দুঃখজনক ব্যাপার হলো, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের ভেতর যেমন ধর্মীয় চেতনা ও মূল্যবোধের অভাব রয়েছে, তেমনি তাদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষার বিশেষ কোনো উদ্যোগ সমাজে চোখে পড়ে না। অথচ প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা তাদের ওপরও ফরজ এবং তাদের এই ফরজ জ্ঞানার্জনের সুযোগ করে দেয়া সমাজের অন্যান্য শ্রেণির মানুষের দায়িত্ব। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারকদের উচিত এ বিষয়ে মনোযোগী হওয়া।

ইসলাম হিজড়াদের স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করতে তাদের উত্তরাধিকার সম্পদ বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী তারা মা-বাবার সম্পত্তির ভাগ পাবে। যে হিজড়ার মধ্যে নারী বা পুরুষ কোনো একটি প্রকৃতি প্রবল, সে নারী বা পুরুষের হিসেবে উত্তরাধিকার সম্পদ পাবে। আর যার প্রকৃতি সহজে নির্ধারণ করা যায় না তার ব্যাপারে চিকিৎসকদের মতামত নেয়া হবে। (সূত্র: সুনানে বায়হাকি, হাদিস: ১২৯৪)

মাওলানা ওমর ফারুকের লেখা থেকে সংগৃহীত

Bootstrap Image Preview