Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘মেয়েটি আদালতে এসে সাক্ষ্য দিয়েছে যে তাকে রেইপ করা হয় নাই, খালেদ স্যার ভালো মানুষ’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০১:২৫ PM
আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০১:২৫ PM

bdmorning Image Preview


রুশাদ ফরিদী।।

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর শিক্ষক খালেদ মাহমুদের মায়ের সাথে কথা হলো। ভোরেই উঠে উনার খারাপ লাগছিলো। চলে গেলেন খালেদের সাথে দেখা করতে কেরাণীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে। মায়ের মন, আগে থেকে খারাপ কিছু বুঝতে পারে।

সাধারণত খালেদ তাড়াতাড়ি চলে আসে দেখা করতে। গতকাল প্রায় ২০ মিনিট দেরী করলো। তখন মা আরো চিন্তিত হয়ে গেলেন। এরপর খালেদ আসল। চেহারা দেখেই উনার মনে হলো ভয়ংকর কিছু ঘটেছে।

খালেদ বললো যে ওকে কাশিমপুর জেলে ট্রান্সফার করার একটা কথা হচ্ছে। এটা হতে পারে এই উদ্দেশ্যে যে কেরাণীগঞ্জ যেহেতু ঢাকার খুব কাছে তাই খালেদ তাঁর নিকটজনের নজরে আছে। কাশিমপুরে সরিয়ে নিলে ওখানে হয়তো কিছু একটা ভয়ংকর ক্ষতি করে ফেলা যাবে।

খালেদের মা ওখান থেকে বেড়িয়ে পাগলের মতন একে ওকে ফোন করতে থাকলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক ব্যাপারটা জেনে যোগাযোগ করলেন যাদের সাথে সম্ভব। আপাতত কাশিমপুর ট্রান্সফার ঠেকানো গেছে।

তবে এই ধরনের চেষ্টা চলতেই থাকবে। খালেদের প্রাক্তন শ্বশুর রাবের এক্স ডিজি উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ওকে খুব সহজে ছাড়বে না।

আরেকটা ভয়ংকর খবর কালকে শুনলাম। যেই মেয়েটিকে রেইপের ভিকটিম হিসেবে আনা হয়েছিল, তাঁর সাথে কথা বললাম কালকে। মেয়েটিকে তিনদিন একটা হাসপাতালের কেবিনে আটকে রাখা হয় যাতে সে বলতে বাধ্য হয় যে তাকে রেইপ করা হয়েছে। তাকে ডাক্তারী পরীক্ষাও করা হয়। তারপরেও সে আদালতে এসে সাক্ষ্য দিয়ে যায় যে তাকে রেইপ করা হয় নাই।

আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার তো অনেক সাহস। আপনার উপর পুলিশ এই ভয়ংকর রকম চাপ তৈরী করলো, তারপরেও আপনি ভেংগে পড়লেন না?

সে বললো, আমি কি করে এইটা স্বীকার করবো, সে তো একজন ভাল মানুষ। তাকে আমি এইভাবে ফাঁসাবো?

গতকাল আইবিএর কিছু শিক্ষককে সরাসরি বললাম, আপনাদের একজন সহকর্মী জেলে, আপনাদের মধ্যে যদি বিন্দুমাত্র সহমর্মিতা থাকতো তাহলে আপনাদের তো রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু আপনাদের দেখে সেটা তো দূরের কথা, এটা আপনাদের চিন্তা ভাবনায় আছে কিনা সেটাই মনে হচ্ছে না।

আইবিএ একটা মানব বন্ধন করে ভেবেছে কেল্লা ফতে। কিন্তু সত্যিকারের বিষয় হলো তাতে কচু হয়েছে। ঠিক তাঁর কয়েকদিন পরেই খালেদকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করে। আর গতকাল কাশিমপুরে নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রান্সফারের চেষ্টা।

এইসব দিয়ে আসলে কি বার্তা দেয়া হয় ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের বোঝেন আপনারা? আপনারা দালালি, চামচামি, নিজের ধান্ধা, হালুয়া, রুটির পিছে ঘুরতে ঘুরতে এতো নীচে নামাইছেন, একজন পুলিশ অফিসার দুই পয়সা দিয়েও আমাদের পাত্তা দেয় না।

আমরা গতকালে অনেক চেষ্টা করছিলাম দ্রুত একটা সংবাদ সন্মেলন আয়োজন করতে । কিন্তু শিক্ষক সমিতির প্রধানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কারো ফোন রিসিভ করছে না। তাঁর ভাইয়ের নির্বাচনী এলাকায় নাকি তিনি গিয়েছিলেন ভাইকে সহায়তা দিতে। কিন্তু শিক্ষক সমিতির প্রধান হিসেবে একজন নিরপরাধ শিক্ষক জেলে একমাসের উপরে বন্দী, এই বিষয়টা উনার কাছে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তা আমার কাছে পরিষ্কার না।

এই মাসেই হয়ে যাওয়া শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে সভাপতি হয়েছেন। আমি যথারীতি ভোট দিতেই যাই নাই। যদি দিতাম তাহলে খুব লজ্জা পেতাম।

পুনশ্চ ১ - রেইপ ভিকটিম হতে রাজী না হওয়া মেয়েটিকে এখন) প্রচন্ড ভয় ভীতির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাই সে নিজের বাসা ছেড়ে অন্য এক পরিচিতের বাসায় থাকছে।

পুনশ্চ ২ - খালেদের দুই বোন অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। দুইজনই খবর শোনামাত্র দেশে চলে আসতে চাইছিল। কিন্তু আসে নাই, কারণ তাঁদেরকে বলা হইছে যে দেশে আসলে রেইপ করে ওদের রাস্তায় ফেলে রাখা হবে। ওদের ছোট ভাই গুম করে দেয়া হবে।

এই দুই বোন এবং ঐ মেয়েটিও তো কারো না কারো ডটার। এই ডটারদের টেইল শোনার মতন মহান ডটার কেউ কি দেশে আছে?

লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক।

লেখাটি লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।

Bootstrap Image Preview