কখনও নদী কখনও সাদিয়া রহমান আবার কখনও ডা. নওশীন এমন বহু ছদ্মনাম ব্যাবহার করে প্রতারণার ফাঁদ পেতে আসছিলো এক নারী। প্রতারণার মাধ্যমে সে হাতিয়ে নিতো ডলার, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সব জিনিসপত্র। আর সেই নারীকে আটক করেছে পুলিশের একটি দল। আটকের পর থেকে শুরু হয় একের পর এক রহস্যের উদঘাটন।
৩২ বছর বয়সী প্রতারক এই নারীর আসল নাম তানিয়া শিকদার। গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার রাজেন্দ্রপুরের গজারিয়ার হাসান শিকদারের মেয়ে সে। রাজধানীর উত্তরার বিভিন্ন জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন তিনি। প্রতারণার অভিযোগে এই নারী এর আগেও পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকার বিভিন্ন বাসাবাড়িতে ঢুকে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন এই নারী। প্রবাসে কেউ অবস্থান করছে এমন ব্যক্তির ঢাকায় বসবাসরত পরিবারই এই নারীর লক্ষ্য। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় ছাড়াও উত্তরা পশ্চিম থানা, শাহ জাহানপুর থানা, মোহাম্মদপুর থানা, কাফরুল থানাসহ বিভিন্ন থানায় অন্তত একডজন মামলা রয়েছে।
তেজগাঁও থানার এসআই মোশারফ হোসাইন চৌধুরী বলেন, নুরুজ্জামান শাহ নামে একজন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী গত ১৬ জুলাই দেশে এসে পশ্চিম নাখালপাড়ার শ্বশুর বাসায় উঠেছিলেন। পরদিন দুপুরে এই নারী নিজেকে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ডা. ডালিয়া পরিচয় দিয়ে ওই বাসায় যান। নুরুজ্জামান শাহ’র স্ত্রীর বড় বোনের স্বামী হাসানুল হক শুভ ইংল্যান্ড প্রবাসী। শুভকে এই মহিলা চেনেন বলে দাবি করেন। নাখালপাড়ায় গরিব মানুষকে সাহায্য ও একটি বিয়ের দাওয়াত দিতে এসেছেন বলে নুরুজ্জামান ও তার শ্বশুরকে জানান তিনি।
এসআই মোশারফ বলেন, “ওই মহিলা তাদের সাথে নানা কথা বলে অল্প সময়ের মধ্যে আন্তরিকতা গড়ে তুলে। এক পর্যায়ে তার ব্যাগ থেকে একশ ডলার বের করে নুরুজ্জামান শাহ’র কাছে ভাংতি চান। ডলার ভাংতি করতে নুরুজ্জামান শাহ তার কক্ষে ঢুকে টাকা রাখার ব্যাগ নিয়ে এলে মহিলা কৌশল হিসাবে পানি খেতে চান।” এভাবে ওই নারী নুরুজ্জামানের অর্থ হাতিয়ে নেন।
মালিবাগের গুলবাগের ওই গৃহকর্তা বৃদ্ধ খলিলুর রহমান জানান, তার ছেলের বন্ধুর স্ত্রী পরিচয় দিয়ে দোতালার বাসায় আসেন ওই নারী। তিনি নিজেকে অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছেন এবং ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনার জন্য কিছু টাকাও নিয়ে এসেছেন বলে জানান।
খলিল বলেন, ওই সময় ঘরে থাকা অন্যদের নানা ছুতোয় বাইরে পাঠিয়ে তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন ওই নারী এবং ৫ লাখ টাকা নিয়ে সটকে পড়েন।
প্রসঙ্গত, তানিয়া এক সময় চলচ্চিত্রের সহ নায়িকা হিসেবে কাজ করতেন। গত কয়েক বছর আগে তার স্বামীর মৃত্যুর পর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছিল। কিন্তু ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে জানা যায়, আত্মহত্যা। পরে তানিয়া তার দেবর ওয়ালিদ রহমানকে বিয়ে করেন জানিয়ে এসআই মোশারফ বলেন, এই ওয়ালিদ এখন মাদকাসক্ত। গত শুক্রবার তানিয়ার সঙ্গে ওয়ালিদকেও গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানায়, তানিয়া যে সব গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে বেড়াতেন তার কয়েকজন চালকের সঙ্গেও কথা বলেছে পুলিশ। তাকে বহনকারী একজন চালক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন বলেন পুলিশ কর্মকর্তা মোশারফ।