Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ইসলামে দেশপ্রেমের গুরুত্ব

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০২:২৬ PM
আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০২:২৬ PM

bdmorning Image Preview


মহান আল্লাহ হজরত আদম (আ.)কে প্রেরণের আগে বলেছেন, ‘আমি পৃথিবীতে খলিফা তথা প্রতিনিধি পাঠাব’। সব নবী-রসুল নিজ জন্মভূমি ও দেশকে ভালোবাসতেন। স্বদেশের জন্য গভীর টান ও মায়া-মমতা প্রকাশ পেয়েছে—হজরত নূহ (আ.), হজরত ইব্রাহিম (আ.), হজরত ইয়াকুব (আ.), হজরত মুসা (আ.)সহ অনেক পয়গাম্বরের জীবন ও আচরণে।

হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর জন্মভূমি ফিলিস্তিনের খলিল জনপদে আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে তিনি পবিত্র মক্কা নগরীতে অবস্থান করতেন। কাজ শেষে তিনি নিজ দেশে ফিরে আসতেন। পবিত্র কাবাগৃহ পুনঃনির্মাণ করা, ইসমাঈল (আ.)-এর কোরবানি, মক্কাকেন্দ্রিক দাওয়াত প্রচারের জন্য আল্লাহর হুকুমে তিনি সপরিবারে যখন মক্কা নগরীতে বসবাস করতেন তখন তার চিন্তাচেতনা ও দোয়া প্রার্থনায় এই জনপদের প্রতি গভীর আগ্রহ, প্রেম ও ভালোবাসা ব্যক্ত হয়েছে। পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারায় তার এমন একটি দোয়ার কথা উল্লেখ আছে। যখন ইব্রাহিম (আ.) বললেন— ‘হে আমার প্রতিপালক! এই নগরীকে নিরাপদ রাখুন এবং এর অধিবাসীদের ফলমূল দ্বারা রিজিক দান করুন যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে।’ (সূরা বাকারা-১২৬)।

ইসলামের ইতিহাস পাঠে আমরা দেখতে পাই, পূর্বসূরি মনীষীরা স্বদেশ ও স্বজাতিকে নিজের সন্তান-পরিজনের মতো ভালোবাসতেন। হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) তার পরিবারের অনেক সদস্য, ওমর বিন আবদুল আজিজ (র.), মুহম্মদ বিন কাসিম, সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ, ইসমাঈল শহীদ, মীর নিসার আলী তিতুমীর, টিপু সুলতানসহ অসংখ্য মুসলিম নেতা দেশের স্বাধীনতা, মানুষের ধর্মীয় ও জাগতিক অধিকারের জন্য জীবন দান করে গোটা উম্মতের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। আরবিতে একটি বাণী স্বতঃসিদ্ধ আছে হব্বুল ওয়াতান মিনাল ইমান। ‘দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ’। জন্মভূমি মক্কা মোকাররমার প্রতি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অপরিসীম ভালোবাসার কথা কে না জানে।

তাঁকে যখন প্রতিপক্ষের প্রভাবশালী লোকরা হিংস্রতা ও চরম নিষ্ঠুরতায় মক্কা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করল। তিনি যখন পবিত্র মদিনার উদ্দেশে যাচ্ছিলেন তখন পেছন ফিরে প্রিয় মাতৃভূমির দিকে তাকাচ্ছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, হে মক্কা প্রিয় জন্মভূমি আমার! যদি তোমার অধিবাসীরা আমাকে বাধ্য না করত আমি কোনো দিন তোমাকে ছেড়ে যেতাম না। দায়িত্বের চাপে অনেক মানুষ পরদেশে গেছেন বা জীবন অতিবাহিত করেছেন কিন্তু নিজে দেশের প্রতি তাদের কর্তব্য পালনে তারা কখনো উদাসীন ছিলেন না।

আমাদের দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে মহান ব্যক্তিদের জীবনদান ও ভালোবাসার মাধ্যমে। দেশ গঠন করা, এর উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য চিন্তা, পরিকল্পনা ও কাজ করা আমাদের দায়িত্ব। এ জন্য দেশপ্রেমের বিকল্প নেই। প্রতিটি নাগরিককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের কল্যাণ, চিন্তা ও সুনামের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য ত্যাগের মানসিকতা অর্জন করতে হবে। আর এই মানসিকতা সৃষ্টির অন্যতম উপাদান হলো স্বদেশ প্রেম।

বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নতি ও স্বনির্ভর হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে। সব মেধাবী মানুষ যদি নিষ্ঠা ও সদিচ্ছার সঙ্গে শিক্ষা, নৈতিকতা বিজ্ঞান, উৎপাদন, বিনিয়োগ, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সুশাসন শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, রপ্তানি বৃদ্ধিসহ সব সেক্টরে দেশ ও জাতির স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে তাহলে ইনশা আল্লাহ আমাদের দেশ আরও এগিয়ে যাবে। আসুন, আমরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে দেশ ও জাতির কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও সুনামের জন্য একযোগে কাজ করি। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন।  আমিন।

Bootstrap Image Preview