Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

উত্তাল উত্তর-পূর্বাঞ্চল, যুক্তরাষ্ট্রসহ ৪ দেশের ভ্রমণ সতর্কতা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:৩২ AM
আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:৩২ AM

bdmorning Image Preview


ভারতের ইসলামবিদ্বেষী নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে গত কয়েক দিনের বিক্ষোভের জের ধরে শনিবারও উত্তাল ছিল উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো। এতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কেন্দ্র করে সৃষ্ট অস্থিরতায় ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্স।

সহিংসতায় ইতিমধ্যে কয়েকজন ভারতীয় নিহত হয়েছেন বলে খবরে বলা হয়েছে।

সুদূর, বিচ্ছিন্ন ও সমৃদ্ধ এই রাজ্যগুলোর বাসিন্দাদের আশঙ্কা– নতুন প্রণীত আইনে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বড়সংখ্যক একটা অভিবাসী নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ পাবেন। তারা তাদের চাকরিতে ভাগ বসানো ও সাংস্কৃতিক পরিচয়কে নিষ্প্রভ করে দেবেন।

আইনটি বাতিলের জন্য ভারতের হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আহ্বান জানতে শনিবারও কয়েক হাজার ভারতীয় রাজধানী নয়াদিল্লিতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। তখন কারও কারও হাতে ‘ভারতে বিভাজন বন্ধ কর’ লেখা প্ল্যাকার্ডও দেখা গেছে।

৫৫ বছর বয়সী সাংবাদিক অমিত বড়ুয়া বলেন, এখানে হিন্দু কিংবা মুসলমান হিসেবে লোকজন জড়ো হচ্ছে না। ভারতের নাগরিক হিসেবে তারা রাস্তায় নেমে এসেছেন। মোদি সরকারের এই আইনকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। সংবিধান অনুসারে সবার জন্য সমানাধিকার দাবি করছি।

রাজনৈতিক উত্তেজনার অন্যতম কেন্দ্রভূমি আসামে বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। অন্তত ২০টি বাস ও দুটি রেলওয়ে স্টেশনের বিভিন্ন অংশে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভকারীরা রাস্তা অবরোধ করে রেখেছেন।

আসামের প্রধান শহর গৌহাটিতেও উত্তেজনা বাড়ছে। চিকিৎসা কর্মীরা বলছেন, বৃহস্পতিবারে সেখানে দুই বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ২৬ জন আহত হয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনী তাজা গুলি ব্যবহার করেছে।

আসামের পুলিশপ্রধান বাশকার জয়তি মহন্ত বলেন, বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় শনিবার ৮৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিডিও দেখে সহিংসতায় অংশগ্রহণকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বিক্ষোভের সময় গুলিতে নিহত ১৮ বছর বয়সী সাম স্টাফোর্ডের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া মিছিলের বিক্ষুব্ধ লোকজন স্লোগান দিচ্ছিলেন, আসাম দীর্ঘজীবী হোক।

স্টাফোর্ডের চাচি জুলি বলেন, আমরা সারাদিন টেলিভিশনে বিক্ষোভের খবর দেখছিলাম। আমরা তাকে বাইরে বের হতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে সে মিছিলে যোগ দিয়েছে।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের অধীন প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে মুসলমান বাদে বাকি ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ভারতের নাগরিকত্ব আবেদন করতে পারবেন।

বিক্ষোভে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়নের নেতা সমুজ্জল ভট্টাচার্য বলেন, নতুন এই আইনের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। সেটি সড়কে হোক কিংবা আদালতে।

মোদির ডানহাত ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শনিবার নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, সরকার তাদের সাংস্কৃতিক, সামাজিক পরিচয়ের সুরক্ষা দেবে। তাদের ভাষা ও রাজনৈতিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেবে।

দীর্ঘদিন ধরে নৃতাত্ত্বিক সংঘাতের কেন্দ্রভূমি হিসেবে কাজ করছে আসাম। ১৯৮৩ সালে দুই হাজার বাঙালি মুসলমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল।

নাগরিকত্বের কাগজপত্র দেখাতে না পারায় চলতি বছরে ১৯ লাখ লোকের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে। এতে তারা রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়েছেন।

দিল্লির জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সঞ্জয় হাজারিকা বলেন, বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে এখানে বহু বছর ধরে বিক্ষোভ চলছে। তার মনে করেন, এতে তাদের ভূমি, জমি, সার্বিক সামাজিক গঠন– বিশেষ করে শিক্ষা, সামাজিক সেবাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে।

এদিকে প্রয়োজন ছাড়া ওইসব এলাকায় না যেতে নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছে চারটি দেশ। ভারতে অবস্থানরত নাগরিকদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা এবং গণমাধ্যমের খবর অনুসরণেরও পরামর্শ দিয়েছে তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতায় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাদের আসাম ভ্রমণে স্থগিতাদেশ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

কানাডা ও ফ্রান্সও উত্তর-পূর্ব ভারতে ভ্রমণে নাগরিকদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএনআই।

Bootstrap Image Preview