Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নামাজে যে দোয়া পড়লে সফল হবে মুমিন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৪২ AM
আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৪২ AM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


নামাজে হলো আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সেতুবন্ধনের অন্যতম মাধ্যম। আর দুনিয়া ও আখেরাতে সফল জীবন লাভের অন্যতম রোকন হলো ধীরস্থির রুকু ও সেজদা। তাই রুকু এবং সেজদায় ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা অনেক জরুরি। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেউ যদি নামাজে তার রুকু, সেজদা চুরি করে অর্থাৎ রুক ও সেজদা যথাযথ আদায় না করে সে আমার উম্মত হয়ে মরতে পারবে না।

তাহলে রুকু, সেজদায় মুমিন বান্দাকে কী করতে হবে? কী করলে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা যাবে? হাদিসে পাকে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনা রয়েছে।

সেজদার আগে বান্দা আল্লাহর সামনে রুকু করেন। বান্দা প্রথমেই রুকুর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে মস্তক অবনত করেন। রুকু-সেজদায় ধীরস্থির হলে এক সময় বান্দার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো আল্লাহর দিকে ঝুঁকে যায়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুকুর ছোট-ছোট তাসবিহগুলোর পাশাপাশি রুকুতে এ দোয়ার মাধ্যমে নিজেকে ছোট করে উপস্থাপন করতেন-

اَللَّهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ وَبِكَ آَمَنْتُ وَلَكَ أَسْلَمْتُ خَشَعَ لَكَ سَمْعِيْ وَبَصَرِيْ وَمُخِّيْ وَعَظْمِيْ وَعَصَبِيْ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা লাকা রাকাআতু, ওয়া বিকা আমাংতু, ওয়া লাকা আসলামতু, খাশাআ লাকা সাময়ি ও বাচারি ওয়া মুখখি ওয়া আজমি ওয়া আসাবি।

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি মহা পবিত্র, তোমার জন্য নত হয়েছি, তোমার কাছে আত্মসর্ম্পন করেছি, তোমার জন্য বিনম্রতায় নত হয়েছে, আমার কান, আমার চোখ, আমার মস্তিষ্ক, আমার অস্থি এবং আমার সব অনুভূতি।’

এ দোয়াগুলো দিয়ে ধীরস্থিরভাবে কিছুদিন রুকু করলেই মানুষের প্রতিটি অঙ্গই মহান আল্লাহর দিকে ঝুঁকে যাবে। প্রতিটি অঙ্গই আল্লাহর কাছে নত হয়ে যাবে।

হাদিসে এসেছে, বিশ্বনবি যতটুকু সময় রুকুতে থাকতেন, প্রায় ততটুকু সময় রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। এ সময়গুলোতে ধীরস্থিরভাবে আল্লাহর প্রশংসা করতেন-

رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ

উচ্চারণ, রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ। হামদান কাছিরান তাইয়্যেবান মুবারাকান ফিহি।

এ প্রশংসা বাক্যগুলো মহান আল্লাহর জন্য। তাছাড়া সেজদার তাসবিহগুলো বান্দাকে আল্লাহর খুব কাছাকাছি নিয়ে যায়। তাই সেজদায়ও আল্লাহর কাছে বিনীতভাবে দোয়া করতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

বান্দা যখন নামাজে সেজদা দেয়, তখন বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে কাছে চলে যায়।’

কাজেই সেজদায় গিয়ে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি চাওয়া এবং চাইতে থাকা একান্ত আবশ্যক। তবেই আল্লাহ তাআলা বান্দাকে চাহিদা মোতাবেক দান করবেন। প্রিয় নবি সেজদায় গিয়ে পড়তেন-

اَللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ وَبِكَ آَمَنْتُ وَلَكَ أَسْلَمْتُ، سَجَدَ وَجْهِيْ لِلَّذِيْ خَلَقَهُ وَصَوَّرَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ تَبَارَكَ اللهُ أحْسَنُ الْخَالِقِيْن

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা সাঝাদতু ওয়া বিকা আমাংতু ওয়া লাকা আসলামতু। সাজাদা ওয়াঝহি লিল্লাজি খালাক্বাহু ওয়া সাওয়্যারাহু ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাছারাহু। তাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিক্বিন।

অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার জন্যই সিজদা করছি। একমাত্র তোমার প্রতিই ঈমান এনেছি এবং তোমার কাছেই আত্মসমর্পন করেছি। আমার মুখমণ্ডল ওই সত্ত্বার জন্য সেজদাবনত হয়েছে, যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন, সুসমন্বিত আকৃতি দিয়েছেন এবং তাতে কান ও চক্ষু স্থাপন করেছেন। নিপুনতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা কত কল্যাণময়!’

সেজদায় ছোট ছোট দোয়ার মাধ্যমেই বান্দার সব চাওয়া পরিপূর্ণ হয়ে যায়। তাতে হাদিসে ঘোষিত প্রিয় নবির চমৎকার মাসনুন দোয়াগুলো পড়া জরুরি-

اَللَّهُمَّ اِنِّى أَسْألُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা; ওয়াত তুক্বা; ওয়াল আ’ফাফা; ওয়াল গেনা।

অর্থ : হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে হেদায়েত কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা পরহেজগারি কামনা করি এবং আপনার কাছে সুস্থতা তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ তথা সামর্থ্য কামনা করি। (মুসলিম, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমদ)

কুরআনের সবচেয়ে বরকতময় দোয়া পড়া-

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানা আতিনা ফিদদুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতও ওয়াক্বিনা আজাবান নার।’

কুরআনের এ দোয়াটি পড়লে বান্দার দুনিয়া ও পরকালে কোনো অভাব থাকবে না। আল্লাহ তাআলা বান্দার সব চাওয়াকে পূর্ণ করে আলোকিত জীবন দান করেন।

অতঃপর প্রথম সেজদা থেকে ওঠে সোজা হয়ে বসে ধীরস্থিরভাবে নিজের জন্য প্রয়োজনীয় দোয়া করা। যে দোয়ায় সব চাওয়া হয়ে যায়। বান্দার জন্য কোনো কিছু বাকি থাকে না। প্রিয় নবি বলতেন- -

رَبِّى اغْفِرلِىْ وَارْحَمْنِىْ وَارْزُقْنِىْ وَاهْدِنِىْ وَ عَافِنِىْ وَاعْفُ عَنِّىْ وَاجْبُرْنِىْ وَارْفَعْنِىْ

উচ্চারণ : রাব্বিগফিরলি ওয়ারহামনি ওয়ারঝুক্বনি ওয়াহদিনি ওয়া আফিনি, ওয়াফুআন্নি, ওয়াঝবুরনি, ওয়ারফানি।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন, রহমত দিয়ে আমার জীবন ভরে দিন, আমার রিজিক বাড়িয়ে দিন, আল্লাহ আমাকে হেদায়েত করে দিন, আমাকে পরিপূর্ণ সুস্থতা ও নিরাপত্তা দিন, আমার ক্ষয়-ক্ষতি পূরণ করে দিন, আমার মর্যাদা বাড়িয়ে দিন।

আফসোসের বিষয়!

বান্দা নামাজের দুই স্থানের রোকন যথাযথ আদায় না করে নষ্ট করেন। রুকু থেকে সোজা হয়ে না দাঁড়িয়ে সেজদায় চলে যায় এবং দুই সেজদার মাঝখানে না বসে পুনরায় সেজদায় চলে যায়। যার ফলে মানুষের নামাজ নষ্ট হয়ে যায়।

রুকুতে, রুকু থেকে দাঁড়িয়ে, সেজদায় এবং দুই সেজদার মাঝে ধীরস্থিরভাবে এ দোয়াগুলো পড়তে হয়। অথচ মানুষ এ স্থানগুলোতে দোয়াগুলো তো পড়েই না বরং তা অতি তাড়াতাড়ি আদায় করে।

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ স্থানগুলোতে ধীরস্থিরভাবে এ দোয়াগুলো পড়তেন, উম্মতে মুহাম্মাদিকে পড়তে বলেছেন।

একান্তই যদি কেউ এ দোয়াগুলো না জানে, তবে রুকু ও সেজদার এ স্থানগুলোতে একান্ত আপন মনে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করবে। আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের চেষ্টায় নিজেকে উৎসর্গ করবে। আর তাতেই বান্দা পেয়ে যাবে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজের রুকুতে, রুকু থেকে দাঁড়ানো অবস্থায়, সেজদায় এবং দুই সেজদার মাঝখানে বসার ক্ষেত্রে ধীরস্থিরতা বজায় রাখার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের যাবতীয় কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

Bootstrap Image Preview