কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের প্রতিবাদে ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল করেছে সেখানকার জনগণ। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
ঘটনাটি বুধবার ঘটেছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের জিও টিভি অনলাইন। কাশ্মীরজুড়ে গণগ্রেপ্তার চলছে বলেও ওই প্রতিবেদনে বলা হয়। তবে আজ বৃহস্পতিবার সেখানকার পরিস্থিতি ঠিক কী, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্নের কারণে তা জানা যাচ্ছে না।
বার্তাসংস্থা এএফপিকে স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পুলিশের ধাওয়া খেয়ে ঝিলাম নদীতে ঝাঁপ দেন এক তরুণ। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শ্রীনগর, পুলওয়ামা, বারমুল্লাসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নামে। তাদের ঠেকাতে গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
কয়েকদিন ধরেই কাশ্মীরে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সবধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, শহর ও গ্রামগুলোর আশপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেখা গেছে। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় পুরো কাশ্মীরে টিভি, ফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছে কাশ্মীরের মানুষজন। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে কাশ্মীর ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান'।
কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর ভারত সরকারের আরোপিত বিধি নিষেধে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মুখপাত্র এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্ত কাশ্মীরের 'মানবাধিকার পরিস্থিতিকে আরও অবনতির দিকে নিয়ে যাবে।' গতকাল বুধবার এক টুইট বার্তায় উদ্বেগ জানায় জাতিসংঘ।
ওই ভিডিও বার্তায় কাশ্মীরে টেলিযোগাযোগ বন্ধ, সেখানকার নেতাদের নির্বিচারে আটক ও সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞায় আপত্তির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
জাতিসংঘের মুখপাত্র বলেন, এবারের বিধিনিষেধ আগে যা ছিল তার চেয়েও কঠিন। জম্মু-কাশ্মীরের চলমান পরিস্থিতি পরবর্তী সময়ে ওই অঞ্চলের জনগণকে গণতান্ত্রিক আলোচনা থেকে বিরত রাখতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
এদিকে পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনারকে বহিষ্কার করেছে ইসলামাবাদ। ফিরিয়ে আনা হচ্ছে ভারতের নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত পাক হাইকমিশনারকে। স্থগিত করা হয়েছে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সব বাণিজ্য।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মনে করেন, ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে ৩৭০ ধারা বাতিলের ব্যাপারে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বানিয়ে ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। এর মাধ্যমে জাতিগত নিধন হবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করারও ঘোষণা দিয়েছেন ইমরান। এই ইস্যু নিয়ে জাতিসংঘসহ বিশ্বের সব দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।