Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

যা হারাল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য কাশ্মীরের জনগণ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ আগস্ট ২০১৯, ০৭:০৫ PM
আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০১৯, ০৭:০৫ PM

bdmorning Image Preview


আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে বিশেষ মর্যাদা পেয়েছিল ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীর। গতকাল সোমবার সেই মর্যাদা বাতিল করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। সেই সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরকে ভেঙে দুই ভাগ করারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ একই সঙ্গে বিশেষ মর্যাদা গেল, গেল রাজ্যের মর্যাদাও। 

এই বিশেষ মর্যাদা কাশ্মীরের নাগরিকদের জন্য ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ মর্যাদাই ছিল তাদের রক্ষাকবচ। এর কারণে তাদের নিজস্ব আইন ছিল। কেন্দ্রীয় সরকার চাইলেও সহজে সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারত না। এমনকি ভারতের অন্য অঞ্চলের কোনো নাগরিকের ওই এলাকায় গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ ছিল না। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫ (ক) অনুচ্ছেদের কারণেই এই রক্ষাকবচ পেয়েছিল কাশ্মীর।

ভারতীয় সংবিধানে ৩৭০ অনুচ্ছেদ যুক্ত হয় কাশ্মীরের রাজা হরি সিংয়ের হাত ধরে। ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর ভারতে অধিভুক্তির ব্যাপারে তিনি একটি সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করেন। সে সময় বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। ওই সব শর্তানুসারে ১৯৪৯ সালে ভারতের সংবিধানে ৩৭০ অনুচ্ছেদ যুক্ত হয়। এই অনুচ্ছেদ অনুসারে, কাশ্মীরের নিজস্ব সংবিধান থাকবে। এ ছাড়া সামরিক, যোগাযোগ এবং পররাষ্ট্রনীতি ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে রাজ্য সরকারের অনুমোদন লাগবে।

এর অর্থ হলো, আলাদা আইনকানুন দিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের জনগণের নাগরিকত্ব, সম্পদের মালিকানা, মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করা হচ্ছিল এত দিন। এ কারণেই অন্য রাজ্যের অধিবাসীরা সেখানে জমি কিংবা সম্পদ কিনতে পারতেন না। এ ছাড়া ভারতের সংবিধানের যে ভাগে ৩৭০ অনুচ্ছেদ যুক্ত, সেই ভাগে ‘অস্থায়ী, অন্তর্বর্তী এবং বিশেষ বিধানের’ বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। এই বিশেষ বিধানের জন্যই বিশেষ মর্যাদা পেয়েছিল জম্মু-কাশ্মীর।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার বিশ্লেষণে বলা হয়, এই ৩৭০ অনুচ্ছেদের কারণে কেন্দ্রীয় সরকার ৩৬০ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করেও কাশ্মীরে অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা জারি করতে পারত না। শুধু বহিঃশত্রুর আক্রমণ ঠেকাতে এবং যুদ্ধাবস্থার কারণে সেখানে জরুরি অবস্থা জারির সুযোগ ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের ফলে সে বাধা কেটে গেল। 

এদিকে ৩৫ (ক) অনুচ্ছেদ অনুসারে, কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দা কে হবে, সেটা নির্ধারণ করতেন রাজ্যের আইনপ্রণেতারা। ১৯৫৪ সালে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সাংবিধানিক আদেশের মধ্য দিয়ে রাজ্য বিধানসভাকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদের পথ ধরেই এই অনুচ্ছেদ এসেছে। ৩৫ (ক) অনুচ্ছেদের কারণেও অন্য কোনো রাজ্যের বাসিন্দা কাশ্মীরের কোনো সম্পদের মালিক হতে পারতেন না। এমনকি রাজ্যের কোনো সরকারি দপ্তরেও অন্য কোনো রাজ্যের অধিবাসীরা চাকরি করতে পারতেন না।

দুই ভাগ হলো কাশ্মীর। গেল কেন্দ্রের শাসনের অধীনে। সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫ (ক) অনুচ্ছেদ বাতিল।

তবে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার পক্ষে ছিলেন না এখানকার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ আবদুল্লা। তিনি চেয়েছিলেন স্থায়ী স্বায়ত্তশাসন। এ জন্য বিধানও তৈরি করেছিলেন তিনি। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর পরামর্শে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে ৩৫ (ক) অনুচ্ছেদটি সংবিধানে যুক্ত করা হয়। এই অনুচ্ছেদ অনুসারে কাশ্মীরের কোনো নারী ওই রাজ্যের বাইরের কাউকে বিয়ে করলে তিনিও সেখানকার সম্পত্তির অধিকার হারাবেন।

সরকার গতকাল যে ঘোষণা দিয়েছে তার ফলে অন্য রাজ্যের জনসাধারণ এখন কাশ্মীরে গিয়ে সম্পদ কিনতে পারবে এবং স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবে। মূলত এই কারণেই ভয় পাচ্ছে কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দারা। কারণ তারা আশঙ্কা করছে, এই মর্যাদা বাতিলের ফলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ওই এলাকা এখন হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় পরিণত হবে।

এখানেই শেষ নয়। রাজ্য বাতিল হওয়ায় কাশ্মীর এখন দুটি অঞ্চলভুক্ত হবে। আর তা নিয়ন্ত্রণ করবে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, কাশ্মীরের নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং সীমান্তে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

মুফতি মেহবুবা ও ওমর আবদুল্লাহ গ্রেপ্তার 

এদিকে কাশ্মীরের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মেহবুবা ও ওমর আবদুল্লাহকে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে গত রোববার গভীর রাতে তঁাদের গৃহবন্দী করা হয়েছিল। 

Bootstrap Image Preview