Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাবার কাঁধেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ছোট্ট কোলোনি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:৩৫ PM
আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:৩৫ PM

bdmorning Image Preview


ইস্টার সানডের আগের রাতে হাতে গিটার তুলে নিয়ে বাবা-মাকে গান গেয়ে শোনান ১০ বছরের কিশোরী আলেক্সান্দ্রিয়া কোলোনি। কিন্তু রাত পেরিয়ে সকাল হতেই কোলোনি আর নেই।

কোলোনি কলম্বোর স্থানীয় একটি গীর্জায় বাবা-মার সঙ্গে প্রার্থনায় গিয়েছিল। সেখানে ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলায় আহত হয়ে বাবার কোলে মাথা রেখেই না ফেরার দেশে চলে যায় কোলোনি, মারা যান তার মা-ও।

ইস্টার সানডের সকালে রবিবার কলম্বোর তিনটি গীর্জা ও তিনটি বিলাসবহুল হোটেলে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আত্মঘাতী বোমা হামলায় যে ৩৫৯ জন মারা যান; তাদের মধ্যে ছিলেন কোলোনি ও তার মা।

রাজধানী কলম্বো থেকে ঘণ্টা খানেকের পথ দূরে সেন্ট সেবাস্তিয়ান গীর্জার অবস্থান। এই গীর্জায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণে মায়ের সঙ্গে কিশোরী আলেক্সান্দ্রিয়া কোলোনি মারা যান। এই গীর্জায় প্রাণ গেছে প্রায় ১০০ জনের। কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান কোলোনির বাবা। সেই ভয়াবহ দুঃস্মৃতিতে এখন একমাত্র মেয়ে ও স্ত্রীকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বাবা সুদেশ কোলোনি।

সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে গীর্জায় কয়েকশ মানুষ প্রার্থনারত ছিল। কিন্তু এই প্রার্থনার অবসান ঘটে রক্তস্রোতে; যখন এক আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী গীর্জায় প্রবেশের পর কাঁধে ঝোলানো ব্যাগের ভেতরে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।

জায়গা না পেয়ে আলেক্সান্দ্রিয়ার বাবা সুদেশ কোলোনি গীর্জার বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন; ভেতরে ছিল মেয়ে এবং স্ত্রী। বিস্ফোরণের শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে গীর্জার ভেতরে প্রবেশ করেন তিনি। পাগলের মতো খুঁজতে থাকেন মেয়ে এবং স্ত্রীকে। তাদের খুঁজে পেতে সুদেশ কোলোনির সময় লেগে যায় প্রায় ৩০ মিনিট।

কলম্বোর নেগোম্বো শহরে নিজ বাড়িতে সুদেশ কোলোনি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সেখানে কালো ধোঁয়া এবং ধুলা উড়ছে। আমি প্রার্থনা করছিলাম আর তাদের খুঁজছিলাম। অবশেষে আমার মেয়েকে খুঁজে পাই।’

সুদেশ কোলোনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী কিছু বলার চেষ্টা করেছিল। এবং আমি তাকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য চেষ্টা করেছিলাম। সেই সময় আমার মনে হলো, হাসপাতালে নেয়ার আগেই সে মারা যাবে।’

৪৬ বছর বয়সী সুদেশ বলেন, ‘তারা দু’জনই আমার সামনে মারা গেল। আমার কোলেই তারা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলো।’

অস্ট্রেলীয়-শ্রীলঙ্কান দ্বৈত নাগরিক এই পরিবারটি কয়েক ঘণ্টা আগেই ইস্টার সানডের গণজমায়েতে অংশ নেয়ার জন্য বাসায় প্রস্তুত হয়। সুদেশ কোলোনি বলেন, ‘এই উৎসবের জন্য আলেক্সান্দ্রিয়া বিশেষ একটি পোশাক বানিয়েছিল। গীর্জায় প্রার্থনায় অংশ নেয়ার জন্য তারা দুজনই খুব উত্তেজিত ছিল।’

তার স্ত্রী ৪৫ বছর বয়সী স্ত্রী মানিক সুরিয়া রাচি একজন ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক ছিলেন। তার স্বামী সুদেশ কোলোনি পেশায় এডুকেশন কনসালট্যান্ট; বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। তারা দু’জনই পরস্পরের ধর্ম পালন করতেন।

এই দম্পতির জন্ম শ্রীলঙ্কায়, বেড়ে উঠেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। তাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। ২৫ বছর আগে দু’জনের পরিচয়। ২০০৫ সালে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। শ্রীলঙ্কায় ফিরে আসেন ২০১৪ সালে। সুদেশ কোলোনি তার অবসর মেলবোর্ন এবং নেগোম্বোতে কাটান।

তিনি বলেন, ‘আসলে আমাদের একটি ভালো পরিবার ছিল। বিশেষ করে আমার মেয়ে; তার কোনো তুলনা হয় না। এটা আমরা অপূরণীয় ক্ষতি। আমার পরিবার চলে গেছে।’

গীর্জায় আত্মঘাতী হামলাকারীকে ‘একেবারে নির্বোধ’ বলে মন্তব্য করেন সুদেশ। তিনি বলেন, ‘এর বেশি কিছু বলার নেই তার।’ তবে শ্রীলঙ্কান সরকার যে তার পরিবারকে রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে সেব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই বলে জানান।

স্ত্রী এবং মেয়ে হারানো এই লঙ্কান বলেন, ‘এটা খুন। রাজনীতিকরা আমাদের প্রতিনিধিত্ব করেন। এটা তাদের দোষ। শুধুমাত্র তারাই (রাজনীতিকরা) এ ঘটনার জন্য দায়ী।’

Bootstrap Image Preview