প্রতিবছরের মতো এবারও বর্ষব্যাপী আলোচিত-আলোকিত ১০ কৃতী নারী পেলেন ‘অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা ২০১৮’। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে এ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বৈষম্য, নির্যাতন ও নানা বাধাবিঘেœর বিরুদ্ধে মানবিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের জন্য লড়াই করে নিজের সক্ষমতা ও অগ্রগতিকে তুলে ধরছেন, এমন ১০ নারীকে তাদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
এবারের অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননাপ্রাপ্ত নারীরা হলেন- ডা. সায়েবা আক্তার (চিকিৎসা), পারভীন মাহমুদ (ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন), শামসুন্নাহার (প্রশাসন), আফরোজা খান (উদ্যোক্তা), সোনা রানী রায় (কুটিরশিল্প), লাইলী বেগম (সাংবাদিকতা), নাজমুন নাহার (তারুণ্যের আইকন), সুইটি দাস চৌধুরী (নৃত্যশিল্পী), রুমানা আহমেদ (খেলাধুলা) ও ফাতেমা খাতুন (প্রযুক্তি)। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ও অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পাক্ষিক অনন্যার সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। সম্মাননাপ্রাপ্ত নারীদের হাতে উত্তরীয়, ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন সুবর্ণা মুস্তাফা ও ইসমত আরা সাদেক। কথাশিল্পী ঝর্ণা রহমানের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে সাধনার নৃত্যশিল্পী সুইটি দাস ও তার দল মনিপুরী নৃত্য প্রদর্শন করে। এরপর এবারের সম্মানিত ১০ নারীর ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। তবে বিশেষ কাজে ব্যস্ত থাকায় অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি ডা. সায়েবা আক্তার ও শামসুন্নাহার। তাদের পক্ষে পরিবারের সদস্যরা এ সম্মাননা পদক গ্রহণ করেন।
পাক্ষিক অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, নারীদের প্রতি অনাচারের কথা নারীদেরই বলতে হবে। দাবি না তুললে, কথা না বললে সমাজ থেকে অন্ধকার দূর হবে না। সমাজের বাধা পেরিয়ে নারীর অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনো অনেক পথ বাকি। অনুষ্ঠানে প্রথম পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক রুমানা আহমেদকে।
তিনি বলেন, ক্রিকেটে আমরা নারী ও পুরুষ সমানভাবেই এগিয়ে যেতে চাই। এশিয়া কাপ জয় করে দেখিয়ে দিয়েছি, আমরা কোনো অংশে কম নই। আমরা সবাই দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছিÑ এটাই গৌরবের। আমি দেশের জন্য ক্রিকেট খেলি এবং শেষ পর্যন্ত খেলে যাব। পারভীন মাহমুদ বলেন, নারীর জন্য, দেশের যে কোনো উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে আমি কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমি আগামীতেও কাজ করতে চাই। একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ সৃষ্টিতে সবাই মিলে এগিয়ে যেতে চাই। নাজমুন নাহার বলেন, আমি ১২৫টি দেশ ঘুরেছি।
স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যে বিশে^র ২০০টি দেশ ভ্রমণের প্রত্যাশা রয়েছে আমার। আত্মপ্রত্যয় থাকলে পৃথিবী যেমন জয় করা সম্ভব, তেমনি অনন্যা পুরস্কারও জয় করা সম্ভব। উদ্যোক্তা আফরোজা খান বলেন, আমি অনেক আনন্দিত। অনন্যাকে অনেক ধন্যবাদ। আমি নিরাপদ খাবার নিয়ে কাজ করি। অফিসের মানুষের জন্য দুপুরের খাবার তৈরি করি এবং পাঠিয়ে দেই। এই কাজে আমি ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। মনিপুরী নৃত্যশিল্পী সুইটি দাস চৌধুরী বলেন, শিল্পীরা চর্চা করেন শিল্পকে ভালোবেসে, কোনো কিছু পাওয়ার আশায় নয়।
তবু সে কাজের জন্য এ পুরস্কার পাওয়া আমার জন্য অনেক বড় সম্মান। সাংবাদিক লাইলী বেগম বলেন, নারী সাংবাদিক হওয়ার কথা ছিল না। প্রয়োজনের টানে আমি কাজ শুরু করি। মফস্বলে মেয়েদের সাংবাদিকতা করা খুব কঠিন। কিন্তু আমি সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সাল থেকে প্রতিবছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দেশের ১০ বিশিষ্ট নারীকে এ সম্মাননা দিয়ে আসছে পাক্ষিক অনন্যা।
এ পর্যন্ত ২৫০ জন কৃতী নারী পেয়েছেন এই সম্মাননা। নারীর চোখে বিশ্ব দেখার প্রত্যয় নিয়ে পাক্ষিক অনন্যা প্রকাশনার ৩১ বছর পেরিয়েছে। সেই সঙ্গে অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা প্রদানেরও ২৫ বছর পূর্তি হলো।