Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাংলা ভাষার অবজ্ঞা মেনে নেবে না সরকার: মোস্তাফা জব্বার

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০১৯, ০৪:৫২ PM
আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৯, ০৪:৫২ PM

bdmorning Image Preview


ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ন্যাচারেল ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবটিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক পরিসরে নেতৃস্থানীয় ভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জনের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ।

তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা নিয়ে বাঙালির আর পেছনে তাকানোর সময় নেই। যারা বাংলা ভাষাকে সঠিক ও শুদ্ধভাবে প্রয়োগ করবে না তাদের কে সরকার ছাড় দেবে না।

মন্ত্রী গতরাতে ঢাকায় আইসিসিবি, বসুন্ধরায় বেসিস সফটএক্সপো ২০১৯ উপলক্ষে বেসিস, আইসিটি বিভাগ ও বিসিসি‘র যৌথ উদ্যোগে ‘বাংলা যান্ত্রিক অনুবাদক, তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের বদৌলতে বাংলা ভাষার মৌলিক প্রমিতকরণের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, পৃথিবীতে নানা কারণে বহু দেশ  তার মাতৃভাষাকে হারিয়ে ফেলেছে, মাতৃভাষায় ব্যবহৃত হরফকে হারিয়ে ফেলেছে। উর্দু ভাষা তার নিজস্ব বর্ণমালা হারিয়েছে। মালয়েশিয়া তার ভাষায় ইংরেজি বর্ণমালা ব্যবহার করছে। এক সময় কম্পিউটার ছিল ইংরেজী ভাষার দখলে। প্রযুক্তির বদৌলতে এখন তা পাল্টে যাচ্ছে।

ইন্টারনেটে এখন সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয় চাইনিজ ভাষা, বাংলা ভাষাও পিছিয়ে নেই, বাংলাদেশে ৯ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। সারা দুনিয়ায় বাংলা ভাষা ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩৫ কোটি। বাংলা পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম
মাতৃভাষা। বাংলা হরফ ব্যবহার করছে আরও ৫ কোটিরও বেশী অন্য ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী উল্লেখ করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শিল্পবিপ্লব মিস করে এবং প্রযুুক্তিতে ৩২৪ বছর পিছিয়ে থাকার জায়গাটা প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন গতিশীল নেতৃত্বে আমরা গত দশ বছরে অতিক্রম করতে
সক্ষম হয়েছি। ডিজিটাল শিল্পবিপ্লবে বাংলাদেশ বৈশ্বিক নেতৃত্বের জায়গায় স্থান করে নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু অপটিমা মনির বাংলা টাইপ রাইটার প্রথম চালু করে ছিলেন।

১৯৮৭ সালে দেশে কম্পিউটারে প্রথম বাংলা পত্রিকা প্রকাশে মন্ত্রী তার নিরন্তর সাধনা তুলে ধরে বলেন, প্রযুক্তির বদৌলতে মোবাইলসহ কম্পিউটার ডিভাইসে ইংরেজিতে কথা বললে তা বাংলায় রূপান্তর হবে। বাংলায় কথা বললে
ইংরেজি, জাপানীজ কিংবা কোরিয়ান ভাষার শ্রুতারা নিজ নিজ ভাষায় তা রূপান্তর করে শুনতে সক্ষম হবেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিশেষ কোন ভাষার দাপটের দিন শেষ হয়ে আসছে।

প্রযুক্তি আমাদের সেই সক্ষমতা তৈরি করে দিয়েছে, গুগল এবং ফেসবুক একইভাবে কাজ করছে, তবে গুগল- ফেসবুক বাংলা প্রয়োগের ক্ষেত্রে এক ধরনের অবজ্ঞা করছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যারা বাংলা ভাষাকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করবে না তাদের কে সরকার ছাড় দেবে না।

ইন্টারনেটে বাংলা ভাষার সঠিক মান সমুন্নত রাখতে আইক্যান কর্তৃপক্ষের সাথে ফলপ্রসু বৈঠকের প্রসংগ তুলে ধরে জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলা ভাষা সম্পর্কে বাংলাদেশের অবস্থান এবং অন্যদের অবস্থান এক না। ইউনিকোড কর্তৃপক্ষকে  অবশ্যই বিষয়টির যথার্থতা উপলব্ধি করতে হবে।

তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণে আইসিটি বিভাগ কর্তৃক ১৬টি টুলস বাস্তবায়নে গৃহীত কর্মসূচি শেষ হলে পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখবে বলে মন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, যে দেশটি বাংলা ভাষার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ শিকার করেছে সে  দেশটির মেধাবী ছেলে-মেয়েরা তাদের সর্বোচ্চ মেধা বাংলা ভাষার জন্য দিতে সক্ষম।

উল্লেখ্য ইউনিকোডে বাংলা ভাষার জাতীয় স্ট্যান্ডার্ড মান নিয়ে আন্তর্জাতিক ডোমেইন ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রক সংস্থা-আইক্যানের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছে বাংলাদেশ।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এর সাথে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি স্পেনের বার্সেলোনায় মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে আইক্যান এর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আইক্যান বাংলা ডোমেইন নাম ও ইউনিকোডের যুক্তাক্ষর লেখা সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছে। এর ফলে ইন্টারনেট ডোমেইনে যে সংকটটি ছিল তার অবসানে বিরাট এক প্রতিবন্ধকতা দূর হবে।

সেমিনারে গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পের পরিচালক ড. জিয়া উদ্দিন আহমেদ, বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির এবং বিসিসি পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এনামুল কবির বক্তৃতা করেন।

Bootstrap Image Preview