Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

চাঁদের মালিকানা নিয়ে টানাটানিতে তারা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারী ২০১৯, ১২:০০ PM
আপডেট: ২১ জানুয়ারী ২০১৯, ১২:০১ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


তোড়জোড় চলছে চাঁদে আবাস গড়ার। হোটেল, প্রমোদ ভ্রমনসহ বাণিজ্য বসতি স্থাপনের। কিন্তু চাঁদ-রাজ্যের মালিকানার আইনকানুন নিয়ে সমঝোতা নেই পৃথিবীবাসির। আমেরিকা, রাশিয়া, চীনসহ দুনিয়ার সব শক্তিশালী রাষ্ট্রই দখল চাইছে চাঁদের। পিছিয়ে নেই বেসরকারি কোম্পানিগুলোও। চাঁদের মালিকানা চাচ্ছে যুক্তরাস্ট্র, চীন ও রাশিয়া। এনিয়ে তাদের মধ্যে সমঝোতাও হচ্ছে।

বিবিসি, গার্ডিয়ান, চাঙ ই ফোর এবং প্রেসটিভির খবর অনুযায়ী, যেহেতু যুক্তরাস্ট্র, চীন ও রাশিয়া পরাশক্তি এবং চন্দ্র বিজয় করেছে,তাই মালিকানাটাও তাদের। এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ হলো- গত ৩ জানুয়ারি চাঁদের অন্ধকার দিকের মাটিতে অবতরণ করেছে চীনের চন্দ্রযান ’চাঙ ই ফোর’। এই প্রথম কোনও দেশের চন্দ্রযান পৃথিবী থেকে সোজা গিয়ে নেমেছে চাঁদের বিপরীত পৃষ্ঠে। কেবল তাই না, চীন চাদের বুকে একটি তুলার বীজে অঙ্কুরোদ্গম ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। যদিও সেটি মাইনাস ঠান্ডার কারণে মারা গেছে। সেখানে একটি গবেষণাগার স্থাপনেরও করতে চেষ্টা করছে তারা। চীনের এই বিস্ময়কর সাফল্য ’নাসা’ গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করছে।

পাশাপাশি চলতি ২০১৯ সালে বিভিন্ন কোম্পানি চাঁদের গর্ভে মুল্যবান খনিজ পদার্থের সন্ধানে খোঁড়াখুঁড়ির পরিকল্পনা করছে। খনি থেকে সম্পদ উত্তোলন করে পৃথিবীতে নিয়ে আসা, মজুদ করা, বা সেগুলো দিয়ে চাঁদেই কিছু তৈরি করাটা তাদের লক্ষ্য। এই পরিস্থিতিতে চাদের মালিকানা নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে তিন পরাশক্তি। তারা মনে করছে চাদে জনবসতি গড়ে তোলাটা আয়াস সাধ্য হতে পারে অদূরে। পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহে শুরু হবে বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক দখলের প্রতিযোগিতা। চাঁদের কোনো এক চিলতে জমিতে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হলে কথিত এই মালিকদের অনুমতি নিতে হতে পারে। মুলত:চাঁদে মূল্যবান বস্তু অনুসন্ধান এবং অর্থ উপার্জনের সম্ভাবনা থাকায় বিভিন্ন দেশ এই সেক্টরের কোম্পানিগুলোকে সাহায্য করতে আরও আগ্রহী হয়ে উঠছে।

ইতিমধ্যে জাতিসংঘ প্রনীত মুন এগ্রিমেন্ট করেছে ১১টি দেশ। এদের মধ্যে রয়েছে ফ্রান্স ও ভারত। কিন্তু মহাকাশের সবচেয়ে বড় আধিপত্যবাদি চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া, এটিকে সমর্থন দেয়নি। যুক্তরাজ্যও না।

এদিকে চাঁদের সম্পদ কাজে লাগানো এবং সেখানে মালিকানা দাবী করার নিয়মটা কী? জুলাই ১৯৬৯-এ অ্যাপোলো ১১’র অভিযানের পর চাঁদে প্রায় কোনও নতুন কার্যক্রমই চালানো হয়নি। ১৯৭২ সালের পর সেখানে আর কোনও মানুষ যায়নি। কিন্তু শীঘ্রই এই পরিস্থিতি পাল্টে যাচ্ছে, কারণ কয়েকটি কোম্পানি সেখানে অনুসন্ধান ও সম্ভব হলে চন্দ্রপৃষ্ঠে খনি খনন করার আগ্রহ দেখিয়েছে। সেখানে তারা সোনা, প্লাটিনাম, এবং ইলেকট্রনিক্সে ব্যবহূত বিরল খনিজ পদার্থসহ বিভিন্ন জিনিসের জন্য অনুসন্ধান চালাবে। জাপানের প্রতিষ্ঠান আইস্পেস ‘আর্থ-মুন ট্রান্সপোর্টেশন প্ল্যাটফর্ম’ তৈরি এবং চাঁদের মেরু অঞ্চলে পানির খোঁজ করার পরিকল্পনা করছে।

স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালিন মহাকাশে অনুসন্ধান চালানোর সময় থেকেই মহাজাগতিক বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহের মালিকানার বিষয়টি একটা ইস্যু হয়ে ওঠে। নাসা যখন প্রথম চাঁদে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করছিল, তখন জাতিসংঘ ‘আউটার স্পেস ট্রিটি’ নামের একটি চুক্তি প্রণয়ন করে। ১৯৬৭ সালে এতে স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ।

এতে বলা হয়, ‘মহাকাশে চাঁদসহ অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহকে কোনো জাতি তাদের নিজস্ব সার্বভৌম এলাকা হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে না অথবা এগুলো ব্যবহার বা দখল করতে পারবে না’। মহাকাশ বিষয়ক বিশেষায়িত কোম্পানি অ্যাল্ডেন আডভাইজারস-এর পরিচালক জোয়ান হুইলার এই চুক্তিকে ‘মহাকাশের ম্যাগনা কার্টা’ হিসেবে বর্ণনা করেন। এর ফলে চাঁদে পতাকা স্থাপন- যেটা আর্মস্ট্রং করেছিলেন- একদম তাত্পর্যহীন হয়ে যায়। এতে করে কোনও বিশেষ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা দেশের ‘অধিকারের বাধ্যবাধকতা’ প্রতিষ্ঠিত হয় না।

বাস্তবে ১৯৬৯ সালে চাঁদে জমির মালিকানা এবং খনি খননের অধিকার তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কিন্তু প্রযুক্তি উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুনাফার জন্য এর সম্পদ আহরণের সম্ভাবনা আরও এগিয়ে আসছে। ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘ ‘মুন এগ্রিমেন্ট’ নামে আরেকটি চুক্তি প্রণয়ন করে। চাঁদ ও অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহে কর্মকাণ্ড পরিচালনা বিষয়ক এই চুক্তিতে বলা হয়, এসব জায়গা কেবল শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে। এতে আরও বলা হয়, এসব জায়গায় কেউ স্টেশন বা ঘাঁটি স্থাপন করতে চাইলে তাকে আগে অবশ্যই জাতিসংঘকে অবহিত করতে হবে কোথায় ও কখন তারা সেটা করতে চায়।

ওই চুক্তিতে এও বলা হয়, ‘চাঁদ ও তার প্রাকৃতিক সম্পদ পুরো মানবজাতির উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া সম্পত্তি। যখন এই সম্পদ আহরণ করা সম্ভব হবে তখন এই আহরণের প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে আন্তর্জাতিক একটি শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’ তবে মুন এগ্রিমেন্টে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া, এটিকে সমর্থন দেয়নি।

এ প্রসঙ্গে জার্নাল অফ স্পেস ল-র সাবেক প্রধান সম্পাদক প্রফেসর জোয়ান আইরিন গ্যাব্রিনোউইজ বলেন,আন্তর্জাতিক চুক্তি কোনও ‘নিশ্চয়তা দেয় না। চুক্তি বা আইন প্রয়োগ ‘রাজনীতি, অর্থনীতি ও জনমতের একটা জটিল মিশ্রন।

Bootstrap Image Preview