Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রাখাইনে ৩০ গ্রাম প্রধানের পদত্যাগের ঘোষণা, নেপথ্যে...

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারী ২০১৯, ০৮:১৭ PM
আপডেট: ১৮ জানুয়ারী ২০১৯, ০৮:১৭ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


মিয়ানমার ভিত্তিক একটি সংবাদপত্র এই মর্মে খবর প্রকাশ করেছে যে, মিয়ানমারের রাখাইনে ৩০ গ্রাম প্রধান পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। রথেডং টাউনশিপের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে ঐ সংবাদপত্রকে বলেছেন, ‘পদত্যাগ করার যে আবেদনপত্র জমা দেওয়া হয়েছে, তা গ্রহণের কথা আমরা স্বীকার করেছি। তবে তাদের পদত্যাগের আবেদন মঞ্জুরের কোনও সিদ্ধান্ত এখনও গৃহীত হয়নি।’ রাখাইনের একজন সংসদ সদস্য মন্তব্য করেছেন, একদিকে মিয়ানমার আর্মির সন্দেহ, অন্যদিকে আরাকান আর্মির হুমকি গ্রাম প্রধানদের এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।

ইকাউং চংয়ের গ্রাম প্রধান উ মং তুন লেইংকে গত ১৮ ডিসেম্বর গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আরাকান আর্মিকে সহায়তা করেছেন। এ বছরের জানুয়ারিতে থায়াপিন গ্রামের বিরুদ্ধেও আরাকান আর্মিকে সহায়তার অভিযোগ উঠেছিল। তবে তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয়নি। এদিকে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা উ উইন অং মন্তব্য করেছেন, ‘গ্রাম প্রধানরা গ্রামবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কর্তৃপক্ষ তাদের পদত্যাগ চায় না। আমরা তাদের চিঠি গ্রহণ করলেও, পদত্যাগের সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করে দেখতে বলেছি তাদের।’

যে গ্রাম প্রধানরা পদত্যাগ করতে চেয়েছেন তাদের ১৮ জন কিয়াউক তান ‘ভিলেজ ওয়ার্ড’ এবং ১২ জন মিও মা ‘ভিলেজ ওয়ার্ডের।’ গত সমাবার (১৪ জানুয়ারি) পদত্যাগের ইচ্ছে প্রকাশ করে চিঠি পাঠিয়েছেন তারা। সেই পত্রে তারা গ্রেফতার আতঙ্কের কথা উল্লেখ করেছেন। তারা আশঙ্কা করেন, সরকারি বাহিনী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে চালানো অভিযানে তাদেরকে সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করতে চাইবে। তাদের গ্রামগুলির আশেপাশেই আরাকান আর্মির সঙ্গে সম্প্রতি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সংঘাতের প্রেক্ষিতে হাজার হাজার রাখাইনবাসীকে বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে। ক্রমেই সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে পাঁচটি টাউনশিপ জুড়ে।

রাখাইন প্রদেশের একটি আসনের সংসদ সদস্য উ থান নাইন মন্তব্য করেছেন, ‘আমার মনে হয়, তারা মিলিটারি ও আরাকান আর্মির দ্বন্দ্বে ফেঁসে গেছেন। একদিকে সেনাবাহিনী তাদেরকে সন্দেহ করে আরাকান আর্মিকে সহায়তা করছে কি না সে প্রশ্নে। অন্যদিকে আরাকান আর্মি তাদের হুমকি দিয়েছে, সেনাবাহিনীকে সহায়তা না করার বিষয়ে। এমন পরিস্থিতিতে তারা হয়তো মনে করছেন, পদত্যাগ করলেই তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।’

আরাকান আর্মি রাখাইনের বৌদ্ধদের জন্য আরও বেশি স্বায়ত্তশাসন চায়। সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর ‘ফোর কাটস’ পদ্ধতির হামলায় সাধারণ জনগণের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে গত ০৪ জানুয়ারি চারটি চৌকিতে হামলা চালিয়েছিল তারা। ওই হামলায় কতজন মারা গেছে তা উল্লেখ না করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেছিলেন, চৌকিগুলো সেখানে স্থাপন করা হয়েছে ‘জাতীয় সম্প্রদায়গুলোকে’ নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। তাই চৌকিতে হামলা চালানো ঠিক হয়নি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, ‘জাতীয় সম্প্রদায়ের’ উল্লেখ করার মাধ্যমে তিনি বৌদ্ধদের নাগরিকত্ব থাকার বিষয়টি সামনে এনেছেন। আরাকান আর্মি রাখাইনের বৌদ্ধদের স্বার্থের কথা বলে হামলা চালালেও সেখানকার বৌদ্ধদের নাগরিকত্ব দিয়েছে মিয়ানমার। পরিস্থিতি ভিন্ন রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে। তাদের নাগরিকত্বের প্রশ্নে বহু বছর ধরে টালবাহানা করে চলেছে দেশটি।

অন্যদিকে শুক্রবার (০৪ জানুয়ারি) মিয়ানমারের ৭১তম স্বাধীনতা দিবসে নিরাপত্তা বাহিনীর সাত সদস্যকে হত্যা প্রসঙ্গে আরাকান আর্মির মুখপাত্র জ মিন তুন মন্তব্য করেছেন, এই স্বাধীনতা দিবসকে তারা তাদের জন্য স্বাধীনতা দিবস বলে মনে করেন না; তারা এখনও স্বাধীন নন।

Bootstrap Image Preview