Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আনতে বিবাহবিচ্ছেদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারী ২০১৯, ১০:৩৭ AM
আপডেট: ১১ জানুয়ারী ২০১৯, ১০:৩৭ AM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


পশ্চিম আফ্রিকার ছোট্ট দেশ নাইজারের বাসিন্দা জালিকা আমাদু। বয়স এখনও কুড়ির কোঠায় পৌঁছায়নি। কোলে সদ্যোজাত আফান। জালিকা আমাদু বিবাহবিচ্ছেদ চাচ্ছেন তিনি।

বিচাররক তাকে প্রশ্ন করেন, সে তো কখনও তোমার গায়ে হাত তোলানি, চিৎকার-চেঁচামেচিও করেনি তোমার স্বামী। বিবাহ বহির্ভূত কোনও সম্পর্কও নেই লোকটার। তা হলে? তুমি বিবাহবিচ্ছেদ চাইছ কেন?

বিচারকের প্রশ্নে চোখ তুলে তার মুখের দিকে তাকালেন জালিকা।

তার পরে চাপা স্বরে বলল, বাবার চেয়েও বয়সে বড় একটা লোক। রোজগারও নেই ঠিকমতো। বিয়ের আগে কত মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেছিল। আর এখন! আমি ওর সঙ্গে আর থাকব না। পাশ থেকে আর্তনাদ করে ওঠেন জালিকার মা। হায় আল্লা, স্বামীর ঘর করবে না, এ কেমন কথা!

জালিকা একা নয়। রীতিনীতির ঘেরাটোপে বন্দি পশ্চিম আফ্রিকার ছোট ছোট দেশগুলোতে এখনও মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায় ১৫-১৬র মধ্যেই। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সন্তান। তার পরে আরও কয়েকটা। বিয়ের আগে যদি বা কিছু পড়াশোনা বা হাতের কাজ শেখা হয়, বিয়ের পরে সে সব পুরোদস্তুর বন্ধ।

অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্যস্ত এই দেশে জালিকাদের মতো পরিবারে অভাব-অনটন নিত্যসঙ্গী। স্বামীর রোজগার নেই। কিন্তু তবু স্ত্রীকে রোজগার করতে বাইরে বের হতে দেবে না। সেই বদ্ধ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসতে চান জালিকার মতো তরুণীরা। দ্বারস্থ হন আদালতের-বিবাহবিচ্ছেদের আর্জি জানিয়ে।

মুসলিম অধ্যুষিত নিজারের মতো পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বিবাহবিচ্ছেদ খুব একটা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা নয়। তিন তালাকের কোনও প্রথাও নেই এখানে। বিচ্ছেদের জন্য দ্বারস্থ হতে হয় আদালতের। কিছুদিন আগ পর্যন্ত বিচ্ছেদ চেয়ে আদালতে যেতেন পুরুষরাই।

কিন্তু গত কয়েক বছরে ছবিটা দ্রুত পাল্টেছে। জালিকা যে আদালতে গিয়েছেন, সেখানকার বিচারক আলকালি ইসমায়েল জানান, এখন মাসে প্রায় পঞ্চাশ জন নারী বিচ্ছেদ চেয়ে কোর্টে আসেন। ইসমায়েলের কথায়, এই সব কমবয়সি মেয়েরা আর সহ্য করতে চায় না। তারা জানে, আদালতই তাদের মুক্তি দিতে পারবে।

পশ্চিম আফ্রিকা নিয়ে কাজ করেন এমন সমাজতত্ত্ববিদদের মতে, পশ্চিম আফ্রিকায় ধীরে ধীরে এক ‘বিচ্ছেদের সংস্কৃতি’ তৈরি হচ্ছে। আর সেই সংস্কৃতির কান্ডারি মেয়েরাই। নাইজারের ইসলামি অ্যাসোসিয়েশনের সচিব আলৌ হামা বললেন, এখন কমবয়সি মেয়েরা হুট করে বিয়ে করতে চায় না। পড়াশোনা করে রোজগার করতে চায়। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পছন্দের পুরুষকে বিয়ে করতে চায়।

কিন্তু অনেক সময়ই পরিবারের চাপে তারা বিয়ে করতে বাধ্য হন। কিছু প্রত্যাশা নিয়ে তারা বিয়েটা করে। আর সেই প্রত্যাশা পূরণ না হলে পরের পদক্ষেপ তো বিবাহবিচ্ছেদ।

Bootstrap Image Preview